বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঋণ খেলাপের ঝুঁকি

করণীয় নির্ধারণ সর্বাগ্রে বিবেচ্য

সদ্য পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যা প্রায় তিনটি জাতীয় বাজেটের সমান। বিদেশি ঋণের এক-তৃতীয়াংশ চলে যায় এর সুদাসল পরিশোধে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণ খেলাপের ঝুঁকিতে স্বয়ং সরকারই। ঋণ খেলাপের বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। ঋণের ৯ শতাংশ সুদ বেড়ে হয়েছে ১৫। কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। ডলারের দাম হয়েছে ৮৫ থেকে এখন ১২০ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তিন গুণ। শিল্পে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ। অর্থনৈতিক জোনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলোরই দৈন্যদশা। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজি-হয়রানি তো রয়েছেই। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতায় জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে বিশ্বজুড়েই বেড়েছে পণ্যমূল্য। পাশাপাশি দেশে ঘটে গেল ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লব। সব মিলে কঠিন সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। নিত্যপণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশেষ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে শিল্প খাতের উৎপাদনে। সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমন একটা নাজুক পরিস্থিতিতে ‘ঋণ খেলাপি’ কালিমা লাগছে দায়িত্বশীল সৎ ব্যবসায়ীদের গায়েও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, অনাকাক্সিক্ষত সংকট উত্তরণে, সদ্য গত সরকারের শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ে নেওয়া ভুল উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তগুলো বাতিল বা সংশোধন করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। রেমিট্যান্স বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করে টাকার মান বাড়াতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম যুক্তিসংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা নিতে হবে। সিস্টেম লস ও দুর্নীতি আর ভুল চুক্তির খেসারতের ফাঁকফোকর বন্ধ করলে সেটা অসম্ভব নয় । শিল্প-বাণিজ্য জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায়, প্রয়োজনীয় ছাড়, এমনকি প্রণোদনা দিয়ে হলেও এ খাতকে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে গতিশীল হয়ে উঠতে সব সহায়তা দিতে হবে। বিশেষত, ব্যবসায়ীরা যেন খেলাপি না হন, সে লক্ষ্যে তাদের ঋণসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে করণীয় নির্ধারণ এ মুহূর্তে বিবেচনার দাবি রাখে।

সর্বশেষ খবর