শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন অনেক অসহায় মানুষ। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া বিবেকের দাবি ইসলামের শিক্ষা। টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধসহ যার যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রতিদান ইসলামে সওয়াবের কাজ। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো- যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রত্যেক শীষে রয়েছে ১০০টি শস্যকণা। এমনিভাবে মহান আল্লাহতায়ালা যাকে চান তাকে প্রাচুর্যতা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় জ্ঞানময়। (আল  কোরআন, সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)।

প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবেন, মহান আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম)।

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদের সাহায্যকারী হয়েছেন, মহান আল্লাহতায়ালা ও তার বিপদে দুনিয়া আখেরাতে উত্তম সাহায্যকারী হবেন। সাধ্যমতো মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা সব ধর্ম ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। মানবসেবাই পরম ধর্ম। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়াদান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে থাকেন। তার প্রত্যেক কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। (আত তারগিব)।

বন্যাদুর্গত বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক এলাকায় ইতোমধ্যে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে অনেকে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাই জরুরি ভিত্তিতে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপনরত বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো। আকাশের মালিক আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন)। সাহাবি হজরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই! মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব রহম দিল ব্যক্তিরা আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে। (আত-তারগিব)।

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বিপদগ্রস্ত ও দুস্থ মানবতার কল্যাণের জন্য দান-খয়রাত, জাকাত-সদকা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন না; সমাজের অসহায় বিপন্ন, বন্যাদুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অর্ধাহারি-অনাহারি নিরন্ন গরিব মানুষের অভাব দূর, ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করেন না; ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে অংশ নেয় না; তিনি কখনোই আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়ভাজন হতে পারেন না। এ সম্পর্কে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, মহান আল্লাহও তাঁর প্রতি দয়া করেন না। (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে না, সে আল্লাহর দয়া পায় না।’ (বুখারি)। তাই আসুন! আমরা আমাদের চারপাশে মানুষদের অসহায় বিপদগ্রস্ত দেখে পাশ কেটে চলে যাব না। তাদের দিকে এগিয়ে যাব। মানুষকে বিপন্ন রেখে তাদের দিক মুখ ফেরানোর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। হজরত লোকমান তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রিয় সন্তান! তুমি মানুষকে দেখে অহংকার কিংবা তাচ্ছিল্যভরে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ এ সময়ে তরুণ যুবকদের বিত্তবানদের সহায়তা নিয়ে দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসা জরুরি। এ দেশ আমাদের সবার। এ দেশের সব জনতা একটি পরিবার। তাই বন্যার আভাস পাওয়া মাত্রই সাধ্যানুসারে তাদের ত্রাণ পৌঁছাতে হবে। আমার দ্বারা যদি একজন বানভাসিরও উপকার হয় এটাই আমার স্বার্থকতা। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ভাইবোনদের সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি আমরা সবাই খাদ্যপানীয় অনুদান প্রদান করব, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহতায়ালা বানভাসি মানুষের কষ্ট দূর করে দিন। তাদের দুঃখে আমাদের সহযোগিতা করার তৌফিক দিন। আমিন।

♦ লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

 

সর্বশেষ খবর