শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। নিঃস্ব, নির্যাতিত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা, তাদের প্রতি সহানুভূতি-সহমর্মিতার হস্ত প্রসারিত করা নিঃসন্দেহে বরকতময় ও পুণ্যময় কাজ। মানুষের কষ্ট, দুর্দশা দেখে যার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না, সে প্রকৃত মুমিন নয়। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবর্দা অসহায় নির্যাতিত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের দিকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সমাজের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক একটি সেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন; যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল দুস্থ-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। নবুওয়াতের ২৩টি বছর তিনি মানুষের মাঝে প্রচার করেছেন মানবতার মর্মবাণী। যারা নিঃস্ব অভাবী ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সুরা দাহর, আয়াত ৮-৯)। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দিকে মুক্ত কর; যাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। (বুখারি : ৫৩৭৩)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে (মুসলমান) ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করায়, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খানা খাওয়ায়, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের ফলগুলো খাওয়াবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করায়, মহান আল্লাহতায়ালা তাকে এমন শরাব পান করাবেন যার ওপর মোহর লাগানো থাকবে। (আবু দাউদ : ১৬৮২)। হজরত হারেসা ইবনে নোমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মিসকিনকে নিজ হাতে দান করা অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। (জামে সগির : ৬৫৭/২)।

হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর শাসন আমলে একবার মদিনায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। প্রচন্ড  খাদ্য সংকটে মদিনাবাসীর জীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠল। সেই সময় হজরত উসমান (রা.) এর একটি ব্যবসায়িক কাফেলা বিশাল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মদিনায় এসে পৌঁছল। এ খবর মদিনাবাসীর মাঝে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ল। মদিনার কিছু ব্যবসায়ী তাঁর কাছে হাজির হয়ে খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করল। হজরত উসমান (রা.) বললেন, যে আমাকে শত শত গুণ লাভ দিতে পারবে, আমি তার কাছে এ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করব। কেননা একজন আমাকে ৭০০ গুণ লাভ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এ কথা শুনে মদিনার ব্যবসায়ীরা নিরাশ হয়ে চলে গেল। অতঃপর তিনি তাঁর সমুদয় খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে মদিনাবাসীর মাঝে বিতরণ করে দিলেন। ব্যবসায়ীরা বলল, আপনি ৭০০ গুণ লাভ দাবি করেছিলেন অথচ এখন বিনামূল্যে বিতরণ করছেন? জবাবে হজরত উসমান (রা.) বললেন, আমি মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করছি; যিনি পবিত্র কোরআনে একের বিনিময়ে ৭০০ গুণ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। সম্মানিত পাঠক! বর্ষাকাল পেরিয়ে শরৎ ঋতুতে পা দিতেই হঠাৎ অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের প্রায় ১০ জেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দুর্গত এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ নেই। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। কলাগাছের ভেলায় পানিতে ভাসছে মানুষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি। পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের ও ফসলি জমি।

বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে মাদরাসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। বহু জায়গায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সেসব এলাকায় এখন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের তীব্র সংকট। বানভাসি এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো; তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের নৈতিক, মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব।

♦ লেখক : ইসলামী গবেষক

 

সর্বশেষ খবর