আল্লাহপাক বলেন, হে নবী! তোমার উম্মতকে এ কঠিন ও ভয়াবহ দিন সম্পর্কে সতর্ক করো এবং কল্যাণকর বিষয়ের দিকনির্দেশনা করো। দুনিয়ার কেউ বিপদে পড়লে কিংবা অ্যারেস্ট হলে বন্ধুবান্ধব অথবা উচ্চপদস্থ আপন লোক দ্বারা ফোন করিয়ে বিপদমুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু হাশরের দিন সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, হাশরের মাঠে অপরাধীর জন্য সুপারিশ করবে এমন কোনো লোক পাওয়া যাবে না। এমন কোনো সুপারিশকারী পাওয়া যাবে না যে সুপারিশের জন্য সাড়া দেবে। এদের মাঝে ওস্তাদ, ছাত্র, প্রেমিক, প্রেমিকা, পীর-মুরিদও আছে, কিন্তু কেউ কারও জন্য সুপারিশ করতে দাঁড়াবে না। তাহলে এ রাস্তাও বন্ধ হলো। ভয়ের সময় মানুষের প্রচন্ড পিপাসা লাগে। আর ফাঁসির আসামি যখন জানতে পারে যে, আগামীকাল ফাঁসি হবে তখন তার পিপাসা আরও বৃদ্ধি পায় তখন সে পানির জন্য আবেদন জানালে তার প্রতি মানুষের দয়া হয়, তাকে পানি দেয়। আল্লাহপাক বলেন, সেদিন ভয়ের কারণে কেউ সুপারিশ করতে আসবে না, এদিকে পানির পিপাসায় আত্মা বের হওয়ার উপক্রম, তখন সে চিৎকার করে বলবে, আমাকে এক ঢোক পানি দাও! কলিজা ফেটে যাচ্ছে! আর সহ্য হচ্ছে না! কেউ যখন আমার জন্য সুপারিশ করার নেই তখন জাহান্নামে তো যেতেই হবে, যাওয়ার আগে আমাকে এক ঢোক পানি দাও, পান করি। যাকে কেউ সুপারিশই করেনি তাকে পানি দিতে যাবে কে? ভয়ের কারণে তার কাছে কেউ যাবে না। যেমন কোনো বাড়িতে ডাকাতি শুরু হলে মানুষ সে বাড়িতে যায় না ডাকাতদের ভয়ে। আল্লাহপাক বলেন, অপরাধীদের জন্য কোনো বন্ধু ও সুপারিশকারী থাকবে না। যেখানে হজরত রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আদরের কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে ফাতেমা (রা.) তুমি গুনাহ করলে আমি তোমার সঙ্গে থাকব না।’ তাহলে অন্য গুনাহগারদের সঙ্গে থাকা কীভাবে সম্ভব! এভাবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে আখেরাতের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন, স্থায়ী জিন্দেগির সফলতার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। নবীর ইন্তেকালের পর এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখ।
রাজমিস্ত্রি যদি ইঞ্জিনিয়ারের দেওয়া নকশা অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে বিল্ডিং হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার থেকে বুঝে নেওয়া ব্যতীত সুন্দর বিল্ডিং তৈরি করা তার জন্য সম্ভব নয়। ঠিক অনুরূপ পীর-মাশায়েখ হলেন ইঞ্জিনিয়ার, আসল ইঞ্জিনিয়ারই হলেন হক্কানি ওলামা ও পীর-মাশায়েখ।
আপনি জান্নাতে যেতে চান? পীর সাহেব আপনাকে নকশা এঁকে দেবেন, আপনি সে অনুযায়ী রাস্তা চললে জান্নাতে পৌঁছতে পারবেন। তাই যদি নকশা বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে পীর সাহেবের কাছ থেকে বুঝে নিন। রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রি ছাড়া বিল্ডিং বানাতে পারবে না এবং রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পারবে না। চোর-ডাকাত আপনার ওপর আক্রমণ করবে। পীর সাহেব আপনার জন্য গুনাহমুক্ত থেকে নিরাপদে জান্নাতে পৌঁছার নকশা বানিয়ে দেবেন, আপনি যদি সেটা অনুসরণ না করেন তাহলে আপনার জন্য কখনো জান্নাতের দরজা সুগম হবে না, আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হবে না। কতক মানুষ মনে করে, পীর সাহেবের হাতে বায়আত হলাম তো আমার কাজ শেষ। এমন ধারণা করা ঠিক নয়। কাজ নিজেকেই করতে হবে, পীর সাহেব কেবল দিকনির্দেশনা দেবেন। ড্রাইভিং কোচিংয়ে ভর্তি হলে ওস্তাদ প্রথমে নিজে গাড়ি চালিয়ে দেখান।তারপর আবার ওস্তাদ কাছে বসে ছাত্রকে কীভাবে ড্রাইভারি করতে হয় তার তরিকা ও পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। আর যদি ওস্তাদ গাড়ি চালানোর পদ্ধতি বলে দিয়ে ছাত্রকে বলতেন যে, ‘ড্রাইভারি করার নিয়ম বলে দিলাম’ যাও এখন একা একা শিখে নাও। তাহলে ছাত্র ড্রাইভারি করতে গিয়ে গাড়ি ভেঙে চুরমার করে ফেলবে। এমন অনেক মুরিদ আছে যারা নিজেরাই ড্রাইভার সেজে বসে। পীর সাহেব যে অল্প আমল দিয়েছেন তাতে তার মন ভরে না, তাই সে কিতাব দেখে ১০টি আমলের জায়গায় ২০টি আমল করতে শুরু করে। ওস্তাদ বলেছেন গাড়ি ব্রেক করার সময় পায়ে একবার চাপ দেবে কিন্তু ছাত্র সে কথা না মেনে একাধিক চাপ দিল, তাহলে ছাত্র অবশ্যই বিপদে পড়ে যাবে। এক মুরিদ চিঠির মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছে, ‘হুজুর! আপনি আমাকে এই আমল দিয়ে ছিলেন, আমি আপনার বাতলানো আমলের সঙ্গে আরও কিছু মিলিয়ে আমল করি, কেমন হচ্ছে?’ আমি জবাবে লিখেছি, ‘আপনার পীর তো আপনি নিজেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন? কারণ আপনি কী আমল করবেন তা তো আমি লিখে দিয়েছি, তারপর আবার বাড়িয়ে দিতে বললেন। আপনার কথা মতো যদি আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে আমি তো আপনার পীর হলাম না বরং আপনিই আপনার পীর হলেন।’ আমল বাড়ানো না বাড়ানো সেটা শায়খের ইচ্ছা। তার যখন বুঝে আসবে তখন আমল বাড়িয়ে দেবেন, কখনো বা কমিয়ে দেবেন। যারা বলে, ‘হুজুুর আপনি আমাকে পাঁচটি আমল দিয়েছিলেন, আমি বই দেখে সঙ্গে আরও মিলিয়ে ১০টি আমল করি।’ তাদের চিঠির জবাবে আমি লিখি ‘মাশা আল্লাহ! বহুত আচ্ছা!’ এরপর আরেক দিন এ বিষয়ে লিখলে আমি লিখে দিই, আমি তো আগেই লিখে দিয়েছিলাম যে, আপনার পীর হলো বই, আমার কাছে পত্র লেখার প্রয়োজন কী? বই দেখেই আপনি আমল করুন। যে ব্যক্তি বইকে অর্ধেক পীর বানায়, আর শায়খকে অর্ধেক পীর বানায়, দুই নৌকায় পা রাখলে যা হয় ওই ব্যক্তিরও তাই হবে।
♦ লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ