হাশরের মাঠে অপরাধীরা সুপারিশকারী পাবে না। দুনিয়াতে কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তার বাঁচার এক পথ হলো সমাজের গণ্যমান্য সুপারিশ করবে। আর দ্বিতীয় পথ হলো বন্ধুবান্ধব কিংবা স্বীয় দলের ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অথবা আন্দোলন, হরতাল ও মিছিল-মিটিং করে তাকে মুক্ত করবে। এ দুটির কোনোটি হাশরের মাঠে নেই। আরেকটি হলো, অপরাধীকে গোপন করে ফেলা, অর্থাৎ যে অপরাধ করেছে তাকে পাওয়া যায় না। যেমন অপরাধীকে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হলো যে, রাত ৩টায় তোমাকে পুলিশ ধরতে আসবে। অতএব অপরাধী রাত ৩টার আগেই বাসা ছেড়ে চলে গেল, তাই তাকে পাওয়া গেল না। কারণ অপরাধী মোটা অঙ্কের টাকা পুলিশকে আগেই ঘুষ দিয়ে বলে রাখে যে, আমাকে ধরতে আসার আগে জানিয়ে দেবেন। অথবা তাকে এমন জায়গায় রাখা হয় যে, খুঁজে পাওয়া যায় না।
আল্লাহপাকের দৃষ্টি থেকে তুমি কোথায় পালাবে? তাঁর দৃষ্টি তো এত প্রখর যে, তুমি চোখের পলক ফেলেছ এবং কেন ফেলেছ, এসবই তিনি জানেন। মানুষের শরীরের যেসব অঙ্গ দিয়ে গোপন কাজ করা যায় সেগুলো হলো দুটি। জাহেরি তথা প্রকাশ্য অঙ্গসমূহ। প্রকাশ্য অঙ্গের মধ্যে অন্যতম হলো চোখ। চোখের অপরাধটি সহজে ধরা যায় না। জামাই শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষ মনে করে, জামাই শাশুড়ির প্রতি খুব খেয়াল রাখে। আসলে শাশুড়ি সুন্দরী তাই তাকিয়ে থাকে, এ বিষয়টি অন্যরা ধরতে পারে না। হাত দিয়ে ধরলে দেখা যায়, মুখে কথা বললে শোনা যায়। কিন্তু চোখে দেখলে সাধারণত কেউ বুঝতে পারে না। তবে আল্লাহপাক সেটাও বুঝতে পারেন। আপনাদের কেউ কি বলতে পারবেন, আজকে কতবার চোখের পলক ফেলেছেন? আমি তো পারব না। একজন মানুষ সারা দিন কতবার চোখের পলক ফেলে তার হিসাবও আল্লাহর কাছে আছে। যে সত্তা চোখের পলক সম্পর্কে জানেন তার কাছে কি কোনো কিছু গোপন থাকতে পারে?
দ্বিতীয়টি হলো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ অর্থাৎ দিল বা অন্তর। দিলে অনেক কিছুর অনুভূতি পয়দা হয়। আমার দিলের অনুভূতি সম্পর্কে অন্য কেউ অবগত হতে পারে না। তদরূপ অন্যের অন্তরের বিষয় আমি জানতে ও বুঝতে পারি না। এ ছাড়াও এখন আমার দিলে একটি বিষয়ের ধারণা এসেছে এটা বুঝেছি, কিন্তু এক মিনিট পর কী ধারণা আসবে সেটা আমি জানি না। আমি আপনাদের সামনে বয়ান করছি, আপনাদের বোঝানোর জন্য আমি দেমাগ খাটাচ্ছি। কিন্তু এরপর কোনো বিষয়বস্তুটি আমার দেমাগে আসবে সেটা আমার জানা নেই। আল্লাহপাক বলেন, বর্তমানে তোমার কী খেয়াল তা আমি জানি। এ খেয়ালের এক মিনিট, এক ঘণ্টা, এক দিন, এক মাস ও এক বছর পর তোমার খেয়ালে কী আসবে, তদরূপ তুমি যদি সত্তর বছর বেঁচে থাক, তাহলে সেই সত্তর বছর পর সর্বশেষে তোমার খেয়ালে কী আসবে সেটাও আমি আল্লাহ জানি।চোখের দ্বারা তুমি যে খেয়ানত কর তা আমি জানি। এ চোখ দ্বারা তোমার মায়ের চেহারার দিকে মুহাব্বতের দৃষ্টিতে কতবার তাকালে, কতবার কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করলে, কতবার বাইতুল্লাহর দিকে তাকালে, সবই আমি জানি। অতএব আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোথায় লুকিয়ে থাকবে? হাশরের ময়দানে হাজির না হয়ে কোথায় আত্মগোপন করবে? সত্তর বছর পর মৃত্যুর আগে আমার অন্তরে কী খেয়াল আসবে সেটাও যে সত্তা জানেন, তার জ্ঞান ও দৃষ্টির আড়ালে যাওয়ার জন্য এমন কোনো গোপন স্থান পাওয়া যাবে? কিছুতেই না। কারণ মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের গোপন চিন্তা সম্পর্কেও তিনি জানেন। সুতরাং অপরাধ করে আত্মগোপনের সুযোগ নেই। আল্লাহপাক আমাদের দীনি বুঝ দান করুন এবং আখেরাতের জন্য তৈরি হওয়ার তৌফিক দান করুন!
♦ লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ