সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মঙ্গলগ্রহের প্রথম অভিযাত্রী এলিজা কার্সন

আবদুল বাকী চৌধুরী নবাব

মঙ্গলগ্রহের প্রথম অভিযাত্রী এলিজা কার্সন

সেদিন বেশি দূরে নয়, তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়াবে। তাই অন্য কোথায় বিশেষ করে মঙ্গলগ্রহে ভবিষ্যতে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী হবে কি না, সে তথ্যের ব্যাপারে ২০৩৩ সালে মানুষ অভিযাত্রী হয়ে মঙ্গলগ্রহে যাবে এবং সেখানে গিয়ে সরাসরি তথ্য পাঠাবে।  তবে সেখানে গেলে সংগত কারণেই পৃথিবীতে আর কোনো সময় ফিরে আসতে পারবে না। আর সেই অভিযাত্রী একটি মেয়ে যার নাম এলিজা কার্সন। পৃথিবীর প্রথম অভিযাত্রী হয়ে এলিজা ২০৩৩ সালে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সে ভালো করে জানে যে, হয়তো আর ফিরে আসবে না এই পৃথিবীতে। আর মাত্র ৯ বছর পরে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে কোটি কোটি মাইল দূরের লোহার লালচে মরিচায় ঢাকা প্রচন্ড শীতল নিষ্প্রাণ গ্রহের ক্ষীয়মান নীল নক্ষত্রের মধ্যে হারিয়ে যাবে। তবে তাতে ভীত নয় সে। ভাবতে অবাক লাগে যে, মানুষের স্বপ্ন কত বিশাল! এলিজা কার্সন নিজে সেই দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখে এবং একই সঙ্গে মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়। সে বলে, ‘সব সময় আপনার লালিত স্বপ্ন ভিত্তি করে চলুন এবং এমন কিছুকে প্রশ্রয় দেবেন না যে, আপনার স্বপ্ন থেকে হেলাতে পারে বা নষ্ট করে দিতে পারে।’

বাবা বার্ট কার্সনের আদরেই বড় হয়ে উঠেছে এলিজা। সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, এ পৃথিবীতে আগমন কেবল খাওয়া ও ঘুমানোর জন্য নয়। আরও অনেক কিছু মহৎ কাজ আছে, যা মানব কল্যাণকে ঘিরে করতে হয়। আর তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সামনে রেখে জীবন অতিবাহিত করে থাকেন মহামানবরা। অথচ সাধারণ মানুষ তা করে না। কারণ সাধারণ মানুষ আন্তকেন্দ্রিক এবং নিজেদের চাওয়া-পাওয়া ও ভোগবিলাসের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত রাখে। এ বিশ্বের সৃষ্টির গোড়া থেকে মানব কল্যাণার্থে যারা জীবন উৎসর্গ তাদের কারণেই আমরা আজ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি। অথচ দুঃখের বিষয় হলো যে, আমরা সাধারণ মানুষের খুব কম সংখ্যকই তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এবং কৃতজ্ঞতাভরে মনে করি।

প্রথমে যার কথা দিয়ে শুরু করছি তিনি হলেন গ্রিক পন্ডিত আর্কিমিডিস। প্রাচীন গ্রিকের এই বিজ্ঞানী জন্মেছিলেন ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সিসিলির সাইরাকিউস নামে একটি ছোট রাজ্যে। পাটিগণিত, জ্যামিতি এবং হাইড্রোলিক্সে তাঁর অবদানের জন্য আজও স্মরণীয়। অথচ গবেষণারত অবস্থায় তাঁর করুণ মৃত্যু হয় মাথামোটা একজন রোমান সৈনিকের ধারালো তরবারির আঘাতে। দ্বিতীয়ত, যার কথা উঠে আসে তিনি হলেন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওদার্নো ব্রুনো। অতি সত্যি কথা বলায় তাঁকে হাত-পা বেঁধে রোমের রাজপথে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কী বলেছিলেন রুনো? কী ছিল তাঁর অপরাধ? তিনি বলেছিলেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। এই পৃথিবী সৌরজগতের কেবল তুচ্ছ গ্রহ ছাড়া আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। আর পৃথিবী ও বিশ্বজগৎ চিরস্থায়ী নয়, এক দিন এসব ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, ব্রুনোর সেই চির সত্যের ওপরই ভিত্তি করে সূর্যের চারদিকে ঘুর্ণায়মান আমাদের সাধের পৃথিবী। এলিজা কার্সন নামের ছোট মেয়েটি নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। সাত বছর বয়সে বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তার অন্তর এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল যে, তার ভাবনার জগৎটাই অন্য শিশুদের চেয়ে আলাদা হয়ে যায়। এদিকে এলিজার যখন ৯ বছর বয়স, তখন তার সঙ্গে দেখা হয় নাসার এক মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের সঙ্গে। এই নারী মহাকাশচারী তাকে জানিয়েছিলেন যে ছোটবেলাতেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বলেই বর্তমানে এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন। এ কথাটি ছোট্ট এলিজার মনে দাগ কেটে যায়। এতে মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন তাঁর অন্তরে আরও শেকড় গেড়ে বসে। উল্লেখ্য, মাত্র ১২ বছর বয়সেই এলিজা আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেন। এর মধ্যে মহাকাশের বেসিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কীভাবে পরিচালিত হয়, তা সে রপ্ত করে ফেলে। এক্ষেত্রে মহাকর্ষশূন্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, ভারহীন স্থানে থাকার উপায়, রোবোটিক্স সম্পর্কে জ্ঞান এবং বিশেষ মুহূর্তে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা ইত্যাদি অর্জন করে। মজার ব্যাপার হলো যে, তাঁর এই অভাবনীয় কাজের জন্য নাসার পক্ষ থেকে তাকে একটি ‘কল নেম’ও দেওয়া হয়, যা হলো ‘ব্লুবেরি’।

যেহেতু সে মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সোজা কথায় সে ফিরে আসতে চাইলেও আর আসতে পারবে না। তাই নাসার কাছে সে কোনো ধরনের যৌনতা, বিয়ে বা সন্তান ধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রতে স্বাক্ষর করেছে। এদিকে অফিশিয়ালি নাসা ১৮ বছরের আগে কাউকে নভোচারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয় না।   তবে এলিজার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। ১১ বছর বয়সেই তাকে মনোনীত করা হয়েছে। প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এলিজাকে মানুষের ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে অভিযানের জন্য জোর সমর্থন করে তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গলগ্রহে প্রথমবার মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু হবে,  তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, যা একজন নভোচারীর জন্য যথাযথ বয়স।

লেখক : প্রাবন্ধিক

সর্বশেষ খবর