শুভ জন্মাষ্টমী আজ। বন্যাদুর্গতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাস্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন এ বছর পালিত হচ্ছে অনাড়ম্বরভাবে। অসত্য, অসুন্দর ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে লড়তে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতিভূ হয়ে এ দিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধনে তিনি মানবরূপে আসেন এ পৃথিবীতে। আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ ব্রত নিয়ে নিরাকার ব্রহ্ম বাসুদেব ও দেবকীর সন্তান হিসেবে জন্ম নেন। তিনি যে সময় আবির্ভূত হয়েছিলেন সে সময় অনাচার ও ত্রাসের রাজত্ব চলছিল সমসাময়িক বিশ্বে। অশুভ শক্তির ভ্রুকুটির শিকার হয়েছিল মানবতা। সমকালীন শাসকদের অনেকেই সুনীতি বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। মথুরার রাজা উগ্রসেনকে উৎখাত করে তার দাম্ভিক পুত্র কংস সিংহাসনে আরোহণ করেন। একই সময়ে আরও কয়েকজন শাসকের কর্মকান্ডেও মানবতার আর্তধ্বনি বেজে উঠছিল। মানবতার সেই দুঃসময়ে ক্ষমতাদর্পিরা নারীর প্রকাশ্য অমর্যাদার ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিচারের বাণী যখন নিভৃতে কাঁদছিল ঠিক তখনই শ্রীকৃষ্ণের আগমন ঘটে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। অশুভ শক্তির পতন ঘটিয়ে পৃথিবীতে সুশাসন নিশ্চিত করেন এ দেবপুরুষ। অত্যাচারী কংসরাজের বোন দেবকীর গর্ভে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। দেবকীর সন্তানের হাতে নিজের মৃত্যু হবে- এ দৈববাণী জেনে রাজা কংস বোনের সাত সন্তানকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র হত্যা করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি পাপিষ্ঠ কংসরাজের। তার জিঘাংসা থেকে অলৌকিকভাবে প্রাণে রক্ষা পান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শুধু প্রাণে রক্ষা নয়, অত্যাচারী রাজাদের ধ্বংসও তিনি নিশ্চিত করেন। পৃথিবীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের বাণী নিয়ে। অসত্য, অসুন্দর ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শ্রীকৃষ্ণের অপরাজেয় আদর্শ একবিংশ শতাব্দীতেও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। বিশ্বে আজ যখন হানাহানি ও অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবিনশ্বর মানবিক চেতনা শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখাতে পারে। শুভ জন্মাষ্টমীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন।