শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপদাপন্নদের সেবা করার মরতবা

এম এ মান্নান

বিপদাপন্নদের সেবা করার মরতবা

বন্যায় দেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি সম্পদ সব হারিয়েছেন। জীবনও হারিয়েছেন অনেকে। বন্যাদুর্গতরা চরম বিপদাপন্ন অবস্থায়। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার ইমানি দায়িত্ব। মহান আল্লাহ মানুষ বা কারও মুখাপেক্ষী নন। মানুষসহ সৃষ্ট সব জীব আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন অসীম মমতা দিয়ে। যে কারণে কোনো মানুষের বিপদে কেউ হাত বাড়ালে তাতে আল্লাহ খুশি হন। বিপদাপন্ন মানুষকে সহায়তা আল্লাহকে সহায়তা করা বলে বিবেচিত হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা করনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আমি আপনার সেবা করব? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার সেবা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে? হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানি দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কীভাবে আপনাকে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে।’ (মুসলিম)

রসুল (সা.)-এর সমগ্র জীবনই ছিল মানবসেবায়। নবুওয়াতের আগে তিনি সমাজের অসহায়-অভাবীদের সাহায্য-সহযোগিতা এতিম-গরিবদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোসহ বহু জনকল্যাণ কাজের জন্য ছিলেন সুপরিচিত। নবুওয়াত লাভের পর মানবতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন’ (মুসলিম)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদিস বেত্তারা বলেন, বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদে সাহায্যকারী হয়েছে, মহান আল্লাহও তার বিপদে উত্তম সাহায্যকারী হবেন। মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা ইসলামের দৃষ্টিতে মর্যাদাপূর্ণ কাজ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়াদান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রত্যেক কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়’ (আত তারগিব)। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া কর। আকাশের মালিক আল্লাহ, তোমাদের প্রতি দয়া করবেন (মুসতাদরাক)। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া করে’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য আল্লাহ কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব রহম দিল ব্যক্তিরা আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে’ (আত-তারগিব)।

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিপদগ্রস্ত ও দুস্থ মানবতার কল্যাণে দান-খয়রাত, জাকাত-সদকা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না; সমাজের অসহায় বিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের অভাব দূর, ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করেন না; তিনি কখনোই আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়ভাজন হতে পারেন না। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, মহান আল্লাহও তাঁর প্রতি দয়া করেন না। (বুখারি ও মুসলিম)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে না, সে আল্লাহর দয়া পায় না।’ (বুখারি)।

তাই আসুন! আমরা আমাদের বন্যাদুর্গত মানুষের বিপদগ্রস্ত দেখে পাশ কেটে চলে যাব না। তাদের দিকে এগিয়ে যাব। মানুষকে বিপন্ন রেখে তাদের দিক থেকে মুখ ফেরানোর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। হজরত লোকমান তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রিয় সন্তান! তুমি মানুষকে দেখে অহংকার কিংবা তাচ্ছিল্যভরে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সর্বশেষ খবর