সুশাসনের সংকটে বাংলাদেশে বারবার কর্তৃত্ববাদী শাসনের উদ্ভব ঘটেছে। সদ্য পতিত পৌনে ১৬ বছরের সরকারকে কর্তৃত্ববাদের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অতীতের কোনো সরকারই এ ব্যাধি থেকে যে মুক্ত নয় তা এক মহাসত্যি। ভবিষ্যতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি না চাইলে এখন থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে এমন এক যুৎসই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন যেখানে কর্তৃত্ববাদী সাজার সুযোগ হ্রাস পাবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বেশ কিছু গঠনমূলক সুপারিশ পেশ করেছে। টিআইবির সুপারিশে একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা যাতে থাকতে না পারেন সে বিষয়ে বলা হয়েছে। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে পারবেন না এমন প্রস্তাবও দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে জনরায়ের বাস্তব প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেছে টিআইবি। এর পাশাপাশি স্পিকারকে সংসদের অভিভাবক হিসেবে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের অনাস্থা প্রস্তাব ও বাজেট ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে সমালোচনা করা ও দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণেরও সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্বকারী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিওর সংশোধনীগুলো বাতিলের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলে দলীয় প্রধানের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও পরিবারতন্ত্র বিলোপের কথাও বলেছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়। সংসদে এক-তৃতীয়াংশ যুব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট অনুযায়ী রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্য অর্জন সাপেক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। দেশে সুশাসন নিশ্চিতকরণে টিআইবির প্রস্তাবগুলো সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের বিবেচনায় আনা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।