বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ করপোরেশন ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ঘাড়ে গুরুভার ঋণ জমেছে। বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে পিডিবি এবং গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানিতে পেট্রোবাংলা-বিপিসি এই মোটা দেনায় জড়িয়েছে। নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারায় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ঋণের বোঝা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত ডিসেম্বরেই বকেয়া দাঁড়িয়েছিল ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। বড় অংশটা ছিল বিদ্যুৎ খাতের। বিশেষ বন্ড ইস্যু করে বকেয়া কমানো হয়েছিল। এখন তা আবারও বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের বকেয়াই শুধু ৪৮ কোটি ডলার। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনার অঙ্ক পাহাড় ছোঁয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। পিডিবির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বকেয়া সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকা। বছরের পর বছর ভর্তুকি দিতে গিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়ছে সরকার। স্বভাবতই চাপ দিচ্ছে পাওনাদাররা। বলছে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের এই বিপুল বকেয়া পরিশোধ না করলে সহসাই জ্বালানি সংকটে পড়তে পারে দেশ। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা। থমকে যেতে পারে শিল্পের চাকা। মুখ থুবড়ে পড়ার ভয় জাতীয় অর্থনীতির। বাস্তব অবস্থা যখন এতটাই সঙ্গিন, তখন বিদ্যুৎ-জ্বালানি আমদানির জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অর্থনীতি সচল রেখে শিল্পবাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এই মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ২০২২ সালে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। বিদ্যুৎ আজ দেশের গ্রামীণ জনপদেও প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার অত্যাবশ্যক অনুষঙ্গ। শুধু আলো-বাতাসের জন্য নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, পোলট্রি-ডেইরি, সেচ-মাড়াই থেকে শুরু করে ছোট-বড় কলকারখানা সবই বিদ্যুৎনির্ভর। ফলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বনির্ভর ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়া জরুরি। জ্বালানি খাতে যে নৈরাজ্য চলছে অনন্তকাল ধরে তা চলতে পারে না। রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতেও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় চালানো হোক জোরদার সংস্কারের কঠিন করাত। এখনই তার উপযুক্ত সময়।