স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছিল ১১ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। অর্ধশতাধিক প্রাণহানির পাশাপাশি প্রায় কোটি মানুষের দুঃসহ কষ্টের কারণ হয় এই হঠাৎ বন্যা। খেতের ফসল, ঘরবাড়ি-স্থাপনার কী বিপুল ক্ষতি হয়েছে ক্রমান্বয়ে তা স্পষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর। দেখা যাচ্ছে, নিজের উঠোন, চেনা জনপদের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে; চেনার উপায় নেই। মৃত পশু-প্রাণীর উৎকট দুর্গন্ধে দুর্বিষহ পরিবেশ। বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যার্তরা। শিশু-বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা রয়েছেন বিশেষ ঝুঁকির মুখে। খাদ্য, পানীয়, স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক উপকরণ নিয়ে এদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, দ্রুত এটা হওয়া দরকার। না হলে বন্যা-উত্তর কৃষি কার্যক্রম, শিল্পোৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরানো সম্ভব হবে না। বন্যাদুর্গত মানুষ যেন ভিটায় ফিরে ঘর-গেরস্থালি গুছিয়ে নিতে পারেন, সে সহযোগিতা দিতে হবে। কৃষি পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সার-বীজের জোগান নিশ্চিত করা আবশ্যক। গ্রামীণ জনপদের ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি-ডেইরিসহ ছোট বড় কলকারখানা যেন পূর্ণোদ্যমে উৎপাদন শুরু করতে পারে- তার উপযোগী প্রণোদনার ব্যবস্থা করা প্রশাসনের অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ হওয়া উচিত। এ কল্যাণ-কর্মকাণ্ড গতিশীলভাবে এগিয়ে নিতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে। বিত্তবানদের দায়িত্ব কর্তব্য স্বভাবতই বেশি। সবার সাহায্য-সহযোগিতার সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল বিতরণের মাধ্যমে আশা করি বানভাসি লাখ লাখ মানুষ স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহে ফিরে আসার পাথেয় লাভ করবেন। বন্যা অনেক প্রাণ ও প্রাণীর জীবন কেড়ে নিয়েছে, শস্য-সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে- এটা কঠিন বাস্তবতা। তবে এটাও সত্য যে, বন্যার পানি বিস্তীর্ণ জমিনে মোটা পলির পরতও রেখে যাচ্ছে। এ পলির উর্বরতা কাজে লাগিয়ে মাঠে মাঠে ফলাতে হবে অধিক ফসল। মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতকে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে দ্রুত।