শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

দান সদকার ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

দান সদকার ফজিলত

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কেউ যদি তার হালাল উপার্জিত ধন সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, কাউকে সাহায্য করে, কোনো জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করে- তাই হলো প্রকৃত দান বা সদকা। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো সম্পদ ব্যয় করবে তাকে ৭০০ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে।’ (তিরমিজি শরিফ)। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় অর্থ খরচ করে, কোনো অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে কিংবা ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে কিংবা জিহাদের প্রয়োজনে খরচ করে কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে বিনিময়ে ৭০০ গুণ পর্যন্ত তার দানকে বৃদ্ধি করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যে বীজ উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ দানা। তবে আল্লাহ যাকে চান তার জন্য আরও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৬১)। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দোয়া করেন। বলেন, হে আল্লাহ দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি কর আর কৃপণের জন্য বদ দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের সম্পদ ধ্বংস কর।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

কাদেরকে দান করতে হবে? সাধারণভাবে দরিদ্র, অসহায়, মিসকিন, ফকির, এতিম, জনকল্যাণকর কাজে ও দীনের প্রসারে সাহায্য বা দান করা উত্তম। তবে নিজের গরিব আত্মীয়স্বজনদের দান করা অতি উত্তম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দরিদ্রকে দান করলে কেবল সদকার সওয়াব পাওয়া যায় আর আত্মীয়কে দান করলে সদকার সওয়াব ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সওয়াব উভয়ই পাওয়া যায়।’ (তিরমিজি শরিফ, ৬৫৮)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯২)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে দান কর তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় অনুশোচনা করে সে বলবে, হে প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে অল্প কিছুদিনের জন্য সময় দিতেন তাহলে আমি দান সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। নির্ধারিত সময় আসার পর আল্লাহ কোনো প্রাণকেই অবকাশ দেন না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্পর্কে ভালো জানেন।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ১১-১২)। দুনিয়ার জীবনে যেসব বিষয় মানুষকে আল্লাহ থেকে গাফেল করে তা হলো- ধন সম্পদ আর সন্তান-সন্ততি। আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা যেন এ দুটির প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্যুত হয়ে না পড়ি। দান সদকা করলে মনে শান্তি আসে। দানের কারণে নানান বালা মুসিবত থেকে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের নিরাপদ রাখেন। দান করলে সম্পদ কমে না বরং বাড়ে। তাই দানের হাত প্রসারিত করলে আমাদের গরিব অসহায় মানুষের উপকার হয়। আমাদের সারা দেশে বন্যায় মানুষ বিপদাপন্ন অবস্থায় দিন পার করছে। এ কঠিন সময়ে আমাদের সম্পদ অর্থ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আর সাহায্য করা সওয়াবের কাজ। কত মানুষ এ বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছে। সবকিছু হারিয়ে আজ তারা নিঃস্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির মিসকিন ও অসহায়কে দান করে দাও তবে তা আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭১)। মানুষ কী খরচ করবে? এ ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা তোমাকে এও জিজ্ঞেস করে যে, তারা (নেক কাজে) কী কী খরচ করবে, তুমি তাদের বল, দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর যা অতিরিক্ত তা খরচ কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২১৯)। আল্লাহ আরও বলেন, যারা আল্লাহতায়ালার পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে তা প্রচার করে বেড়ায় না, প্রতিদান চেয়ে কাউকে কষ্ট দেয় না, তাদের মালিকের কাছে তাদের জন্য পুরস্কার সংরক্ষিত রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৬২)। সুবহানাল্লাহ। এর চেয়ে বড় পুরস্কার দানকারীর জন্য আর কী হতে পারে। দান করে খোটা দিতে নেই। এতে দানের ফজিলত বিনষ্ট হয়। নবীজি রসুল (সা.) বলেন, ‘খোটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি শরিফ)। আমাদের মনে রাখতে হবে আখেরাতের পুরস্কারের তুলনায় পৃথিবীর সব সম্পদ অতীব নগণ্য। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দিন-রাত গোপনে প্রকাশ্যে নিজেদের মাল, সম্পদ ব্যয় করে তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফল সুরক্ষিত রয়েছে। তাদের ওপর কোনোরকম ভয়ভীতি থাকবে না, তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৪)। কত বড় সুসংবাদ দানের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের সবাইকে জানিয়ে দিলেন। এরপরও কি আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দানের ব্যাপারে কৃপণতা করব? দেশজুড়ে বন্যায় আমাদের দেশের ভাইবোনেরা কি দুঃখ-কষ্টে দিন যাপন করছে, তাদের জন্য কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব না? আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে ও সহায় সম্বলহীন মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সাহায্য করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর