মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদ্যুতে দস্যুতা

ওদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন

একবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে যেতে হলে বিদ্যুৎ বা ইন্ধন শক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এটি এক অপরিহার্য শর্ত। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে নজরকাড়া সাফল্যও অর্জিত হয়েছে, তবে মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠ হলো দেশকে বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে লাগামহীন লুটপাটের পথ। ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’ নীতি। স্বয়ং সরকারপ্রধানের প্রশ্রয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা এবং জ্বালানি সচিবসহ লুটেরা চক্র শুধু কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। দেশপ্রেমবর্জিত এ সিন্ডিকেট বিশেষ আইনের সুযোগ নিয়ে বিনা দরপত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়াই তৎকালীন সরকারের মোসাহেব ব্যবসায়ীদের রেন্টাল-কুইক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুবিধা দেয়। বছরের পর বছর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চালানো হলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এগুলোর মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার এক অংশ পেয়েছেন সিন্ডিকেটের মধ্যমণিরা। ক্যাপাসিটি চার্জের টাকায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বিপুল অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছেন বলে রটনা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ক্যাপাসিটি চার্জের বিলের নামে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা পাইয়ে দিয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য এক অংশ তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিনির্ধারক এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের পকেটে চলে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু এত দিন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মোসাহেবদের আবদার পূরণে বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। আশার কথা,  সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খাতের চুরি ও লুটপাটের সঙ্গে কারা জড়িত এবং তাদের পাচারকৃত অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার উপায় নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। আমাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের পুনরাবৃত্তি রোধে বিদ্যুৎ খাতের চোর-মহাচোরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ খবর