শিরোনাম
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিচারাঙ্গনে দ্বৈতশাসন

শাসকের আইন নয়, আইনের শাসন চাই

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ বাংলার নবাবের কাছ থেকে দেওয়ানি সনদ পাওয়ায় দ্বৈতশাসনের উদ্ভব হয়। এটা ছিল একই স্থানে দুই রকম শাসন, যার একটি দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর অন্যটি ক্ষমতাহীন দায়িত্ব। ফলশ্রুতিতে শোষণ-নির্যাতনে হতদরিদ্র হয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। ফলে দ্বৈতশাসন ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র সাত বছর পর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটান। তার ২৫২ বছর পর, ভিন্ন প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে এলো। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার বা দ্বৈতশাসন বিলোপ করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে না। বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথাও বলেছেন তিনি। দুঃখজনক যে, গত দেড় দশকে স্বৈরসরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঘায়েলের দুরভিসন্ধিতে গায়েবি ও ঢালাও মামলার অপচর্চা শুরু করেছিল। এ থেকে বেরিয়ে আসতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দ্বৈতশাসন বিলোপের বিকল্প নেই। স্বৈরশাসনামলে বিচার বিভাগের ওপর ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপ হয়েছে। ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ হয়েছে বিনষ্ট ও বিকৃত। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা চলেছে নির্লজ্জভাবে। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। অথচ বিচার বিভাগের শক্তিই হচ্ছে গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। বিচারালয় মানুষের ন্যায্যতা প্রাপ্তির শেষ আশ্রয়স্থল। নতুন বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, সততা ও জনঅধিকার নিশ্চিতকরণের দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হবে বিচার বিভাগ- এ প্রত্যাশা সচেতন শ্রেণির। সে লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে পৃথক ও স্বাধীন করা জরুরি। শাসকের আইন নয় বরং আইনের শাসন নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত হওয়াও খুব জরুরি। চলতি সংস্কার ধারায় বিচার বিভাগেরও আগাপাশতলা সংস্কার হোক, এর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধার হোক এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর