মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফ্যাসিবাদী শাসন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

ফ্যাসিবাদী শাসন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মহৎ আদর্শ বা দর্শন-‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’কে অতীতের ক্ষমতাসীনরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক, নৈতিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পরিবর্তে চরম অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়কেই রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রজাতন্ত্র হিসেবে আবির্ভাবের পর গত ৫৩ বছরে সামরিক এবং কর্তৃত্ববাদী দলীয় শাসনে-রাষ্ট্র ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। নামসর্বস্ব প্রজাতন্ত্র নগ্ন হয়ে পড়েছে। শাসকগোষ্ঠী ন্যায়কে পরিত্যাগ করে অন্যায়কে বরণ করেছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে, রাষ্ট্র বা সরকার তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ভীত ও শঙ্কিত রেখেছে। নিরস্ত্র জনগণের ওপর সশস্ত্র রাষ্ট্রশক্তি বল প্রয়োগ করে ন্যায়কে ধূলিসাৎ করেছে আর শাসককে গগনচুম্বী ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সরকারের স্বার্থ রক্ষা করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাষ্ট্র যেহেতু ন্যায়পরায়ণ ছিল না, সেহেতু ব্যক্তির মাঝেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যায়, ন্যায়ের চেয়ে উত্তম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। রাষ্ট্র আর নাগরিকের মাঝে পারস্পরিক লেনদেনে ন্যায় অনুপস্থিত হয়ে পড়ায় সমাজ ভয়ংকর অন্যায্য হয়ে উঠেছিল। অন্যায় অনুসন্ধানে বা প্রতিকারে রাষ্ট্র অক্ষম, ফলে রাষ্ট্র দুর্বৃত্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। অরাজকতা, দুর্নীতি ও অপশাসনে রাষ্ট্র এবং সমাজ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবৈধ শাসন, অন্যায়ের শাসন এবং অন্যায়ের প্রতিপত্তি রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয়তাবাদ বিকাশ বা উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করার আর কোনো দর্শন নেই। ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে রক্তের বিনিময়ে প্রজাতন্ত্র পেয়েছিলাম কিন্তু শাসকদের ক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনায় আবার ঔপনিবেশেই প্রত্যাবর্তন করেছে রাষ্ট্র। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ বাস্তবে অনুপস্থিত ছিল।

বাংলাদেশ, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির বৈশ্বিক সূচকে পিছিয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম এবং সমৃদ্ধি সূচকে ৯৯তম। বাংলাদেশ ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবঞ্চিত’ এবং ‘সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান। যার সূচক ৬১, নেপাল ৮৬, শ্রীলঙ্কা ৯৭, ভারত ১০৪ ও পাকিস্তান ১১৩। রক্তের বন্যায় ভেসে যাওয়া একটি রাষ্ট্রের বুক থেকে স্বাধীনতা ক্রমাগত ছিনতাই হয়েছে, তারপরও সরকারের বাগাড়ম্বরের শেষ ছিল না। পতিত সরকার প্রতিনিয়ত দম্ভ করে বেড়িয়েছে বাংলাদেশ নাকি এগিয়ে গেছে! ’৭১ সালে ভোটের মর্যাদা রক্ষার জন্য সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে যে দেশে, সেই দেশে একটি দল-গত ১৫ বছর নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংসের তলানিতে নিয়ে গেছে। অথচ দলটি বলে বেড়িয়েছে-তারা নাকি ক্ষমতায় থাকলে ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়, তারা নাকি জনগণের হাতে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

আত্মবিকাশের জন্যই স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যে স্বাধীনতার জন্য অকাতরে এ দেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বাধীনতা হরণ করে বিগত সরকার কীসের স্বপ্ন দেখিয়েছে? ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করেছিল! মুক্তিযুদ্ধ ও এর চেতনা মূলত ছিল আওয়ামী সরকারের একটি ফাঁকা অবলম্বন। স্বাধীনতা হচ্ছে জনগণের জন্য আশীর্বাদ কিন্তু রাষ্ট্রের অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণ ছিল স্বাধীনতাবঞ্চিত। রক্ত-সংগ্রামে আত্মবলিদান করা হয়েছে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত থাকার জন্য নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় সম্পদশালী হয়েছে, জনগণকে ঠেলে দিয়েছে চরম বিপর্যয়ের দিকে। গুটিকতক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়নি। সবার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই ছিল মুক্তিসংগ্রাম। দাসত্বের বন্ধন ছিন্ন করার জন্যই ছিল মুক্তিযুদ্ধ। সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে আমাদের বারবার দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তির আস্বাদ লাভ করার নামই স্বাধীনতা। সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের মুক্তির আনন্দকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি করে দিয়েছিল। অগণিত ভাইবোনের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, নানান কৌশলে হরণ করা হয়েছে-স্বাধীন দেশে। যে আওয়ামী লীগ সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারের মর্যাদা পায়নি বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারকে ছিনতাই করে সংবিধানকে পদদলিত করেছে। জনগণের অধিকার এবং মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে মহা উৎসবে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেছে। ’৭১ সালে ভোটের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ জনগণ বুকের রক্ত দিয়েছে, অথচ সেই আওয়ামী লীগই-যারা ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলন করেছে, তাদের অবলীলায় হত্যা করেছে। পাকিস্তানের অবিচার, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিল। পরিশেষে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েও পাকিস্তান রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তেমনি আওয়ামী লীগের লাগামহীন অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়নের কারণে মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র হাতছাড়া হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আইনের শাসনকে রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে দিয়ে, জনগণকে অবাঞ্ছিত, অপাঙ্তেয় ও অপ্রয়োজনীয় করে দিয়ে, যে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে-তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়। অন্যায়-অবিচার এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের পাপকে রক্ত দিয়ে ধুয়েমুছে দেওয়ার বাংলাদেশ এটা নয়। ভোটাধিকারের লড়াই, অধিকার অর্জনের লড়াই, জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা জড়িত, তাদের পাকিস্তানি শাসকদের মতো এই বাংলাদেশেও ষড়যন্ত্রকারী এবং স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি দেশে নির্বাচনবিহীন সংস্কৃতি, বল প্রয়োগের সংস্কৃতি, অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে অসাংবিধানিক কাজে ব্যবহার করার সংস্কৃতি, সম্পূর্ণভাবে পুলিশি রাষ্ট্র তৈরি করার সংস্কৃতি যে-কী ভয়াবহ রূপ লাভ করতে পারে, অমানবিকতা, অনৈতিকতা এবং অপশাসনের ভয়ংকর সংস্কৃতি-সমাজে যে কী পরিমাণে দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে তা, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিদর্শন। কীভাবে জাতীয়তাবোধ, মনন, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, নৈতিকতা ও সহনশীলতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে তা কেউ পর্যালোচনাও করেনি বা করছে না।

বাংলাদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবঞ্চিত। এটা হচ্ছে দীর্ঘ অপশাসনের ফসল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতে-সংশ্লিষ্টদের কর্মরত থাকা অবস্থায় কতটা যে নির্দলীয় থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু প্রজাতন্ত্রের বেশির ভাগ কর্মচারী একটি দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, যা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যকে এবং রাষ্ট্রকে অস্বীকার করার শামিল। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’-নির্বাচনি জগতের এই অনুপম অবদান বা অর্জনকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সব প্রতিযোগীর নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকা’। সাদা টাকা বা কালো টাকার কোনো ফারাক নেই, পার্থক্য ছিল না। এক নির্বাচনে প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদের উল্লেখ থাকে, পরবর্তী নির্বাচনে যদি তা ৫ হাজার গুণ বৃদ্ধি হয়ে যায় তবু রাষ্ট্র থেকে কেউ জিজ্ঞেস করবে না। একজন সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে অনুপার্জিত আয়ের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরও রাষ্ট্রের এমন কোনো সংস্থা নেই যারা এই উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করবে বা নিষ্পত্তি করবে। রাষ্ট্রে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান নির্বাহী বিভাগ। আর সব বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান সরকারের অভিপ্রায়ের অধীন। শুধু নির্বাহী বিভাগ দিয়ে একটি ভূখন্ড চলে-রাষ্ট্র চলে না।

গণতন্ত্রের ন্যূনতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-নিয়মিত নির্বাচন, প্রাপ্তবয়স্কের সর্বজনীন ভোটাধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। জনগণের অভিপ্রায় প্রয়োগের নির্বাচনি ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব নয়। দেশ স্বাধীন কিন্তু প্রজা পরাধীন। সরকার থাকবে সংবিধানের অধীন। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান ছিল ব্যক্তি বা দলের ইচ্ছাধীন। এখানে আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ, আইনের এখতিয়ার যথাযথভাবে অনুসৃত হয়নি। রাষ্ট্র থেকে ন্যায়কে উচ্ছেদ করে দিলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। অবিচারের শাসন আর অন্যায়ের প্রতিপত্তি দেখার জন্য অগণিত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেনি।

যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকলে রাষ্ট্র নির্ধারণ করা যায় তার অনেক বৈশিষ্ট্যই বিগত সময়ে বাংলাদেশে অনুপস্থিত ছিল। আইনের শাসন, সুযোগের সমতা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা-এসব রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রতিফলন বাংলাদেশে নেই। আইনের সমতা বা সুযোগের সমতার যে অবিচল সত্তা, তাকে প্রয়োগ করা বা অনুধাবন করার সক্ষমতাই সরকারের ছিল না। স্বাধীনতা না থাকলে যে, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণ হতে পারে না-এটুকু দর্শন গ্রহণ করার নৈতিক উচ্চতাও আওয়ামী লীগের ছিল না এবং নেই। দার্শনিক প্লেটো তার রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছিলেন-‘ন্যায় একটা সত্তাবান অবিচল অস্তিত্ব। তাকে জানা যায়। তাকে জানার মাধ্যমেই মানুষ ক্রমান্বয়ে মহৎ জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে।’ আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাধীনতাবঞ্চিত ছিল মানুষ। সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের ফলশ্রুতিতে অর্জিত রাষ্ট্র বেহাত হয়ে গেছে। সুতরাং সেই রাষ্ট্রকে পুনরুদ্ধার করতে আরেকটি নৈতিক জাগরণ এবং নতুন মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন ছিল। যা ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা অকাতরে আত্মদান ও সর্বদেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রকে আবার বাস্তব করেছে।

 

লেখক : গীতিকবি, সংবিধান বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর