শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইমামদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

ইমামদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম হলো মসজিদের ইমাম। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বুকে জমানো ব্যথা ও কথাগুলো ইমামের কাছে আমানত রাখেন। ইমামগণও বিভিন্ন উপায়ে সমাজের মানুষের দৈনন্দিন হাজারো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। ইসলামের শান্তিময় জীবনব্যবস্থা আদব শিষ্টাচার ও নৈতিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইমাম সমাজ প্রতিনিয়ত জ্ঞানের আলো বিতরণ করে থাকেন। সমাজ থেকে মাদক, জুয়া, দুর্নীতি, ইভ টিজিং, জুলুম, ধর্ষণ ও বৈষম্য দূর করে ন্যায়, ইনসাফ ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইমাম সমাজের বিকল্প নেই। সংগত কারণেই আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশে মসজিদের ইমামগণই সর্বাধিক বৈষম্যের শিকার। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর এই ইমাম সমাজ আজও দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। বর্তমান বাজারে একজন দিনমজুর শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা হলেও সমাজ প্রতিনিধি একজন ইমামের দৈনিক হাজিরা হয় মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এমনকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে মসজিদ কমিটির পর্যাপ্ত বেতন প্রদানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ইমামের বেতন দশকের ঘরের কম; যা দিয়ে একজন ইমাম ফ্যামিলিসহ ঢাকা থাকবেন তো দূরের কথা; মা- বাবা, স্ত্রী-সন্তান গ্রামে রেখেও সংসার চালানো দুরূহ ব্যাপার। অথচ ইমাম সাহেব সামাজিক ও আত্মমর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে দারিদ্র্যতার এই যন্ত্রণা কারও কাছে শেয়ার করতে পারেন না; বরং সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে যান। এ ছাড়া আরও অসংখ্য সমস্যা ও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ইমাম সমাজ তাদের মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।  নিম্নে কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরা হলো :

১. সমাজের অবক্ষয় তথা মাদক জুয়া সুদ হত্যা ধর্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে কোরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনা করলে এহেন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ ইমামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপবাদ আরোপ করে। এমনকি তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করে থাকে।

২. মসজিদ কমিটির সঙ্গে ইমামের কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলেই তাৎক্ষণিক বিনা নোটিসে ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো শ্রম আইনের তোয়াক্কা করা হয় না।

৩. একজন ইমাম ২৫-৩০ বছর কোনো মসজিদের দায়িত্ব পালন করার পরও বিদায়ের সময় তাকে কোনো ধরনের পেনশন বা ভাতা প্রদান করা হয় না। যা শুধু অমানবিকই নয়, বরং মানবতাবিরোধীও বটে।

৪. মসজিদের স্টাফগণের ছুটির বিষয়টি কমিটির একান্ত দয়ার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের অনুসরণ করা হয় না। ২০০৮ সালে পরিচালিত ইসলামী ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই রয়েছে ২ হাজার ৭৭৭টি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি শুরু করেছেন; যা দেশবাসীকে দারুণভাবে আশান্বিত করেছে। তবে এ কথাটিও সবাইকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে, এই আড়াই লাখ মসজিদের ইমাম তথা সমাজ প্রতিনিধিদের পেছনে রেখে সুষ্ঠু, সুন্দর, উন্নত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং আদর্শ সমাজ ও উন্নত দেশ গঠনে ইমামগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

সর্বশেষ খবর