লাহোরের শাহদারা বাগে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধির অদূরেই নূরজাহানের সমাধি। তার কবরের ওপরে খচিত আছে, এই নগণ্য আগন্তুকের কবরের ওপর না কোনো প্রদীপ থাক, না কোনো গোলাপ। না কোনো প্রজাপতির পাখা পুড়ুক, না কোনো বুলবুলি গান গাক। সমাধিক্ষেত্রটি তারই তৈরি করানো ছিল, পঙতিটিও তারই কাব্য থেকে নেওয়া। এক ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবন পেরিয়ে ক্ষমতার শীর্ষতম স্থানে অধিষ্ঠানের কুশলী কৃতিত্ব নূরজাহান ছাড়া খুব কম নারীই বিশ্ব ইতিহাসে দেখাতে পেরেছেন। তিনি ছিলেন একজন কবি, দক্ষ শিকারি এবং খুবই সৃজনশীল এক স্থপতি। আগ্রায় তার তৈরি করা নকশাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল তার বাবা-মার সমাধিসৌধ। পরে এই স্থাপত্য রীতিই তাজমহলের স্থাপত্য নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। উপমহাদেশে পারস্য স্থাপত্যকলা, শিল্প, সংস্কৃতি, রন্ধন, চিত্রকলার প্রধান স্থপতিরূপে গণ্য করা হয় সম্রাজ্ঞী নূরজাহানকে। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের দ্বিতীয় স্বামী। সম্রাটের ওপর নূরজাহানের অনেক সুপ্রভাব ছিল। অত্যধিক মদপানের জন্য সব সময় সমালোচিত সম্রাট জাহাঙ্গীর নূরজাহানের প্রভাবেই মদ খাওয়া কমিয়ে দেন। গবিব-দুঃখী, এতিম ও বিধবাদের প্রতি নূরজাহান সব সময়ই সংবেদনশীল ছিলেন। তার প্রথম স্বামী ছিলেন ইরানি সমরনায়ক শের আফগান আলী কুলি খান ইসতাজলু। রাষ্ট্রবিরোধী ও বিদ্রোহমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়লে সম্রাটের বাহিনীর হাতে নিহত হন তিনি।