বহু ভাষাবিদ পন্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনায় এমন বর্ণনা আছে- এক বাঙালি শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষার জন্য লন্ডনে গেছেন। তার ঘরে দুধ দেন এক বৃদ্ধা। তরুণ তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলেন, দুধ খাঁটি তো? বৃদ্ধা প্রশ্নের মর্মার্থ বুঝতে না পেয়ে বললেন- তুমি কী জানতে চাচ্ছ, আমি বুঝতে পারছি না। শিক্ষার্থী ভেঙে বলেন, দুধে পানি-টানি মেশানো হয়নি তো? হতবিহ্বল বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করেন, তুমি কোন বর্বর সমাজ থেকে এসেছ? এরকম হয় নাকি তোমাদের দেশে? অসীম বেদনা ও ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছিল বৃদ্ধার অভিব্যক্তিতে। আমাদের বৈশিষ্ট্য আজও বিশেষ বদলায়নি। অনেক ক্ষেত্রে অসততা ও দায়িত্বহীনতা বরং আরও বেড়েছে। তারই চিত্র ফুটে উঠেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দুই গবেষণায়। শাকসবজিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক এবং ফলে কীটনাশকের আলামত পাওয়া গেছে। ৯টি সবজিতে হেভি মেটাল ও চারটি ফলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কীটনাশকযুক্ত নমুনাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ৩০টিতে। কী ভয়ংকর! গবেষকদের ভাষ্য, যেসব সবজিতে হেভি মেটাল রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে গবেষক দল কৃষককে নিয়মিত মনিটরিং, উত্তম কৃষি চর্চার ওপরে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। কৃষক যে খাদ্যপণ্যে বিষ মেশানোর আত্মঘাতী প্রবণতায় তার সন্তান, পরিবার এবং প্রতিটি মানুষকে তিলে তিলে রোগশোক-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন- এটা তারা কবে বুঝবেন? এখানে প্রয়োজন মনুষ্যত্বের দায়বোধ জাগরণ। যে জাতির নমস্ব এক কবি লিখে গেছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’- সে জাতির কৃষক বুঝে বা না বুঝে শস্য-সবজিতে বিষ মেশাচ্ছেন, ভাবা যায় না। জাতির খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন যারা, তাদের মধ্যে এমন অসচেতনতা, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভূমিকা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশার এ বার্তা পৌঁছানো জরুরি।