সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নামে কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পৌনে ১৬ বছরে। দুনিয়ায় যেসব দেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রাধান্য দেয় সেসব দেশের সঙ্গে অস্থির সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছিল গোঁয়ার্তুমিকে প্রাধান্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য ঝুঁকে আছে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দাতা দেশও যুক্তরাষ্ট্র। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের নোংরা এবং আত্মঘাতী কূটনৈতিক চাল চালা হয়েছে জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে। মার্কিন কূটনীতিক সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য এমনকি রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলের অর্বাচীন পেশিজীবী নেতাদের ইন্ধনে। কূটনেতিক ক্ষেত্রে একপেশে নীতি বাংলাদেশের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেই অপরিণামদর্শী অবস্থান ত্যাগ করে কথা নয় কাজে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ কূটনীতির ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যের কূটনীতি শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। দীর্ঘদিনের বৈরিতা কেটে যাচ্ছে অনেক প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘ অধিবেশনে বা এর বাইরে ড. ইউনূস যাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন সেটাই হলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবতা। সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের প্রয়োজন অনুসারে তিনি কূটনীতি পরিচালনা করছেন। এটাই সময়োপযোগী উত্তম কূটনীতি। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং গণতান্ত্রিক ভিত্তি রচনা করে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকাঠামো তৈরিতে এই পররাষ্ট্রনীতি আমাদের সহায়তা করবে। এখন রাষ্ট্র সংস্কার করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এগুলো পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তারা সবাই এসব বিষয়ে সহায়তা করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। সার্ককে শক্তিশালী করার যে আগ্রহ প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্ত করেছেন তা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। যুদ্ধ এড়ানোর ক্ষেত্রে এ আঞ্চলিক জোটের সাফল্য আকাশছোঁয়া। এটিকে আসিয়ানের মতো অর্থনৈতিক জোটে পরিণত করা গেলে তা হবে এক বিরাট অর্জন।