সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু প্রস্তাবনা

মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোস্তফা চৌধুরী

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু প্রস্তাবনা

দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা নগরীতে এডিস মশার উৎপাতে ‘ডেঙ্গুজ্বর’ বা ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ’ ও প্রাণহানি বেড়ে চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে (এবং একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পরূপে সারা দেশের সব পৌর অঞ্চলে) নাগরিক কল্যাণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করছি। আশা করা যায়, অদক্ষ ও দেশপ্রেম বোধহীন আমলাতান্ত্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিকার মানবিক, উঁচু-জীবন সংস্কৃতির ও সুষ্ঠু, আনন্দময় স্বস্তিময় দিনযাপনের পথ প্রদর্শন করতে পারে এসব।

এটা প্রমাণিত যে, করোনা সংক্রমণ যেসব দেশে অত্যন্ত মারণ আকারে ঘটেছে, সেসব দেশের নগরী ও পৌর এলাকাগুলোর নাগরিকদের মাঝে দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ড যা স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনে চরম ব্যর্থতার কারণেই তা ঘটতে পেরেছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ডেঙ্গু যাতে না হয়, সেজন্য ‘অবশ্যই করণীয়’ প্রত্যেক নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি চাই। তাই, সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সদা তৎপর থাকবে, পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করতে হবে পৌর সংস্থাগুলোকে।

আইন লঙ্ঘনকারীকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া চলবে না। পাড়ায় পাড়ায় কল্যাণ সংঘ ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। স্কুলের দশম শ্রেণির ও কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষকদের নেতৃত্বে টিম করে এলাকাভিত্তিক (ওয়ার্ডভিত্তিক হতে পারে) এই স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে লাগাতে হবে।

তারা মোবাইল কোর্টকে সহায়তাদান করবে, তারা আবাসিক বাড়ি, মার্কেট, শপিং মল, কাঁচা বাজার, দোকানপাট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, পাড়ার ক্লাবঘরসহ সব স্থাপনা), প্রতিটি সড়ক, সড়ক-ড্রেন, নালা, অলি-গলি, পার্ক ও লেক এলাকা, খেলার মাঠসহ এলাকার পর এলাকা ঘুরে দেখবে- এসব প্রতিরোধ কার্যক্রমে কোনো শৈথিল্য রয়েছে কি না এবং নিজেরা বাড়ি বাড়ি, রাস্তায় রাস্তায় পরিচ্ছন্নতা কাজে শ্রমদান করবেন পৌর সংস্থা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে থেকে। প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবক প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা আর সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করবেন; আর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ম্যাজিস্ট্রেটরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সহায়তা নেবেন। তবে কঠোর নিয়ম-বিধি অনুসরণ করে উভয় পক্ষ কাজ করবেন যাতে কেউ এই কর্মকান্ড দ্বারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার কোনো সুযোগ না পান বা নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বা মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা না-ঘটে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এলাকা হিসেবে প্রতিটির জন্য স্বেচ্ছাসেবক দরকার হতে পারে ১৫ হাজার। মানে মোট ৩০ হাজার। সারা দেশের অবশিষ্ট এলাকার সব সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকাগুলোর একই পরিচ্ছন্নতা কাজ তদারকির ও সরাসরি শ্রমদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক দরকার হতে পারে আরও ৪০ হাজার। মোট ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারা বছর পরিচ্ছন্নতা কাজ তদারকি ও সরাসরি শ্রমদান করলে সারা দেশকেই এডিস মশা ও অন্যসব মশা এবং মাছিমুক্ত জঞ্জালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

স্বেচ্ছাসেবকরা অবশ্যই কাজের সময়কালে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার বা বিকালের নাশতা (পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ) বাবদ তৈরিকৃত খাবার যার মূল্য যথাক্রমে ১২০ টাকা (সকালের নাশতা বাবদ/ ১ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ), ২৫০ টাকা (দুপুরের লাঞ্চ/১ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি), ১২০ টাকা (বিকালের নাশতা বাবদ/ ১ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি/ ঢাকা ওয়াসার ‘শান্তি’)। স্বেচ্ছাসেবকরা একটা গ্রুপে কাজ করবেন ভোর ৬টা থেকে দুপুর দেড়টা অবধি (সকালের নাশতা ও দুপুরের লাঞ্চ পাবেন তারা),  আরেক গ্রুপ বেলা দেড়টায় এসে দুপুরের খাওয়া সেরে কাজ শুরু করবেন এবং সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কাজে থাকবেন (তারা দুপুরের/ দেড়টার লাঞ্চ এবং বিকাল ৫টায় নাশতা পাবেন)। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু সরঞ্জাম (হ্যান্ড-গ্লোভস), মিনি-ইউনিফর্ম, লাঠি-কাঠি ইত্যাদি) সরবরাহ কাজসহ খাবারপানীয় ইত্যাদি বাবদ বছরে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় লাগবে- বিভিন্ন করপোরেট হাউস তাদের সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সসিবিলিটি) ফান্ড থেকে অনুদান হিসেবে দিলে কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়।

লেখকদ্বয় : সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর