কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ৩৬ দিনের জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচারের পতন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে দ্বিতীয় বিজয়। এর লক্ষ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় মর্যাদা পুনরুদ্ধার। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি-দুঃশাসনে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও সক্ষমতা ভেঙে পড়েছে। সেসবের পুনর্গঠনে বৃহত্তর পরিসরে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ছয়টি সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করছে। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। স্বভাবতই সেখানে নির্বাচনের ওপর বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চেয়েছে জামায়াত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসন্তোষ, বাজার দর, প্রশাসনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানই তাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হবে, যাতে দ্রুত একটা নির্বাচন করা যায়। আশা করা হচ্ছে, সংস্কার কমিশনগুলো তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। সেগুলো নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এর মাধ্যমে অংশীজনদের ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের টাইমলাইন নির্ধারিত হবে। স্বৈরশাসনে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণই তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য ও আদর্শ। দেশবাসী চান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ। এসব মৌলিক বিষয়ে সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টা আশা করে জনগণ। আজকের বাংলাদেশ প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা এবং ফের স্বৈরাচার-আশঙ্কার মূলোৎপাটন দেখতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার এগুলো নিশ্চিত করবে- সেটাই প্রত্যাশা সবার।