দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা এখন সত্যিকার অর্থে সংকটাপন্ন। অর্থনীতির ওপর যে কোনো দেশের স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল। একটা সরকারের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে অনেকাংশে অর্থনীতির ভালোমন্দের ওপর। স্বৈরাচারী হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার আরেক পতিত স্বৈরাচার এরশাদকে এমনই হার মানিয়েছেন যার কোনো তুলনা চলে না। কিন্তু তারপরও তারা টিকে ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বস্তিকর অবস্থার কারণে। গত দুই-আড়াই বছর অর্থনীতিতে ধস নামায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শক্তি প্রয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড স্তব্ধ করা গেলেও ছাত্ররা রাজপথে নামার পর তাদের সমর্থনে সাধারণ মানুষও একাত্ম হয়। বছর দেড়েক ধরে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশেও জনজোয়ারের সৃষ্টি হয় মানুষের জীবনজীবিকায় অস্থিরতা সৃষ্টির কারণে। বর্তমান সরকারের পেছনে আওয়ামী লীগ বাদে সব দলের জোরালো সমর্থন রয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো সংশয়ই নেই। অঙ্কের হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষের সমর্থন ধন্য। কিন্তু এ সমর্থনকে চ্যালেঞ্জ করতে মাঠে নেমেছে পঞ্চম বাহিনী। শিল্পকারখানায় অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। জুলাই বিপ্লবের অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা নাশকতায় লিপ্ত পঞ্চম বাহিনীর নেই। দেশের কোথাও জনপ্রত্যাশার বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করার ক্ষমতাও নেই পতিত সরকারের সমর্থকদের। রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ না থাকলেও অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টির আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শিল্প-কলকারখানায় সাবোটাজের জন্য ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আরও বেকারত্ব সৃষ্টিতে চলছে নানামুখী প্রয়াস। পাঁচ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুই অয়েল ট্যাংকারে আগুন এবং প্রাণহানিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একইভাবে কলকারখানার অস্থিরতায় বিদেশি অপশক্তির এজেন্টরা সক্রিয় কি না ভেবে দেখা দরকার। শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণে ব্যর্থ হলে তা প্রকারান্তরে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা হবে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।