সালাম দুই মুসলমানের মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি করে। সমাজ ও সংসারে সবার মধ্যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা তৈরি করে। পরস্পর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য গড়ে তোলে। তাই আমরা একে অপরকে সালাম করব। সন্তান মা-বাবাকে সালাম করবে। ভাইবোন একে অপরকে সালাম করবে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সালাম করবে। এক মুসলমান অপর মুসলমানের সঙ্গে যখনই দেখা হয় সালাম করবে। সালাম শুধু মুখে উচ্চারণ করে দিতে হয়। পা ছুঁয়ে সালাম করা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর যখন কেউ মর্যাদা সহকারে তোমাকে সালাম করে তখন তাকে তার চেয়ে ভালো পদ্ধতিতে জবাব দাও অথবা কমপক্ষে তেমনিভাবে। আল্লাহ সব জিনিসের হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা আন নিসা : ৮৬)। এক মুসলমান যখন অপর মুসলমানের বাসায় প্রবেশ করবে তখন তার অনুমতি নেবে এবং সালাম দেবে। আল্লাহপাক বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদের সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আশা করা যায় যে, তোমরা এর প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবে।’ (সুরা আন নূর : ২৭)। হাদিসের কিতাবগুলোতেও সালামের ব্যাপক প্রচলনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন : কথাবার্তা বলার আগেই সালাম করবে। (তিরমিজি) আমরা যখন একে অপরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলি বা ফোন রিসিভ করি, শুরুতেই যেন সালাম দিই। অপর বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন অভ্যাসটি উত্তম? রসুল (সা.) বলেছেন, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, সব মুসলমানকে সালাম করতে হবে এবং সবাইকে সালাম করার সওয়াব সমান। কে কাকে সালাম করবে এ বিষয়ে নবী (সা.) বলেন, ছোটরা বড়দের, হাঁটা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক লোক বেশিসংখ্যক লোককে সালাম দেবে। (বুখারি)। তবে রসুল (সা.) ছোটদেরও সালাম করতেন। প্রথমে সালামকারীর মর্যাদা বিষয়ে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী যে প্রথমে সালাম করে। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। অপর হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে তার অন্তর থেকে অহংকার দূর হয়ে যাবে। সালাম দিলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়। এ বিষয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার শপথ করে বলছি, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ইমান গ্রহণ করবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত ইমান লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে। আর আমি কি তোমাদের এমন কথা বলব না যা তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে? আর তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করবে। (তিরমিজি)
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা