মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাহাড় হোক শান্তি ও সহাবস্থানের

আফরোজা পারভীন

পাহাড় হোক শান্তি ও সহাবস্থানের

মাত্র দিন কয়েক আগের কথা। জ্বলে উঠেছিল পাহাড়ি অঞ্চল। কয়েকটা দিন কেটেছে জ্বালাও-পোড়াও, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলিতে। শেষাবধি সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। কিন্তু এতে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। যে কোনো সময় জ্বলে উঠতে পারে আবার পাহাড়। অতীতের ঘটনাবলি এ কথাই বলে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, দীর্ঘদিন অসমাপ্ত কিছু শপথ না রাখার জের। সাম্প্রতিক ঘটনাটি ঘটেছিল একজন বাঙালিকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করার কারণে। ফলে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবানে পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথমে উত্তেজনা, তারপর সংঘর্ষ এবং শেষে আন্দোলন শুরু হয়। বাঙালির দোকানপাটে আগুন দেওয়া আর পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলা হয়। এমনকি সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরও সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম এ দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাহাড়ের আদিবাসীরা পাহাড়ি। পাহাড়িরা ছাড়াও বিভিন্ন সময় এখানে বসতি গেড়েছে বাঙালিরা। পাহাড়িরা মনে করে, পাহাড় শুধুই তাদের। এখানে বাঙালিরা অনধিকার প্রবেশ করেছে।

পাহাড়িরা বাঙালিদের অবস্থান কখনো সহজভাবে মেনে নেয়নি। পাহাড়ি অঞ্চল নিজস্ব মনে করায় প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি, দাঙ্গা, খুনোখুনি লেগে যায়।

তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের একটি স্পর্শকাতর এলাকা। জটিলও বটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি, সম্পদ ও অধিকার নিয়ে বাঙালি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব অব্যাহতভাবে চলছে। এ সংকট দীর্ঘমেয়াদি এবং গভীর। গবেষক পপি দেবী থাপা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নিয়ে লেখা তার একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, চাকমা রাজা মংছুই ১৪১৮ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারের রামু, টেকনাফ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই থেকে চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন শুরু করে। পরে মারমারাও সেখানে বসতি গড়ে তোলে।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় মুঘলরা পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বাংলার সুবেদারদের হাতে। ১৭৬০ সালে নবাব মীর কাসেম আলী পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করেন। চাকমারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করে পরাজিত হয়। ব্রিটিশ শাসকরা ১৯০০ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন অ্যাক্ট’ জারি করেন। এ আইনে পাহাড়িদের অধিকার এবং স্বার্থরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। পাহাড়ে ‘অ-উপজাতি’দের জমি কেনা নিষিদ্ধ ছিল এ আইনে। তা ছাড়া কোনো ‘অ-উপজাতি’ ইচ্ছা হলেই ওই অঞ্চলে যেতে পারত না। জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগত। কিন্তু বিষয়টা এরকম থাকে না। দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অংশ হয়। পার্বত্যবাসীর অধিকারে এবার হাত পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পতাকা ওড়ায়। এরপর থেকে এ এলাকার চিত্র বদলে যেতে থাকে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লেখা থেকে পাই, ‘১৯৫৪ সালের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ জেলা হিসেবে গণ্য করা হতো, কিন্তু সেখানকার মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না। ১৯৫৫ সাল থেকে এ জেলাকে একটি সাধারণ জেলায় পরিণত করার চেষ্টা শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালে সংবিধান সংশোধন করে এর বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়।’

এখানেই শেষ নয়, পপি দেবী থাপা লিখেছেন, ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্ট এক আদেশে বলেন, যেসব অ-উপজাতি (অর্থাৎ যারা পাহাড়ি নয়) ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছে, তারা সেখানে জমি কিনতে পারবে।

পাকিস্তান আমলে আদালত বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কেনার অধিকার দিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব পরিবর্তন সেখানকার মানুষের মতামত না নিয়ে করা হয়েছিল। উন্নয়ন পরিকল্পনাতেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। বরং এমন কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল যার বাস্তবায়নে তারা নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এর অন্যতম। এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পাহাড়িদের অনেকের জীবনে বিশাল আঘাত এনেছিল। পাহাড়ি নেতারা অনেক বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ হয়নি। আমেরিকার ঋণের টাকায় রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প করা হয়। এ প্রকল্পের কারণে এ অঞ্চলের মোট আবাদি জমির ৪০ ভাগসহ (প্রায় ৫৫ হাজার একর জমি) ২৫০ বর্গমাইল এলাকা পানিতে ডুবে যায়। প্রায় ১ লাখ চাকমা এবং অন্যান্য আদিবাসী (মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ) বাস্তুচ্যুত হয়। এদের মধ্যে অনেকেই কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। যারা পেয়েছেন তারা প্রতিশ্রুত টাকার সামান্য অংশ পেয়েছেন। তা ছাড়া এ এলাকার ঐতিহ্যগত জুম চাষের পদ্ধতি নষ্ট হয়ে যায়।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা অনেকেই সম্মুখযুদ্ধ করেছেন। ইউ কে চিং মারমা যুদ্ধকালীন বীরত্বের জন্য বীরবিক্রম খেতাব লাভ করেন। তবে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়সহ অনেকেই পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা)। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। এম এন লারমা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।

সংবিধান চূড়ান্ত করার সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি অ-উপজাতীয়দের পার্বত্য এলাকায় বসবাস নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তার কোনো দাবিই মানা হয়নি। উপরন্তু ১৯৭৩ সালে পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেয় জেএসএসের সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী। যার নেতৃত্ব দেন এম এন লারমার ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

পার্বত্যবাসীর জীবনে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ নেমে আসে ১৯৭৫ সালে সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র বাঙালিদের সরকারিভাবে পার্বত্য অঞ্চলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮০ সালে ১ লাখ বাঙালি পরিবারকে পাহাড়ে পুনর্বাসন করা হয়। ১৯৬০ সালে পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ ছিল, ১৯৮৭ সালে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

এরশাদের শাসনামল থেকেই জেএসএসের সঙ্গে সরকারের আলোচনা শুরু হয়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে আলোচনা অব্যাহত থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সংকট সমাধানে মন্ত্রিসভা একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে। কয়েক দফা সংলাপের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে সই করেন সন্তু লারমা ও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর শান্তিবাহিনীর সদস্যরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামনে অস্ত্র সমর্পণ করেন। অস্ত্র সমর্পণের পর শান্তিবাহিনীর প্রায় ২ হাজার সদস্যকে সরকার ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছিল। শান্তিবাহিনীর সাত শর বেশি সদস্যকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

চুক্তির সার কথা ছিল, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং সেজন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এবং আইন প্রণয়ন করা হবে।

এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-

তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। উপজাতীয় আইন এবং সামাজিক বিচারকাজ এই পরিষদের অধীনে থাকবে।

১. পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে।

২. উপজাতীয়দের ভূমি মালিকানার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।

শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সে অঞ্চলে গঠন করা হয়েছে। কিন্তু জনসংহতি সমিতির অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান গঠন করা হলেও সেগুলোর হাতে ক্ষমতা নেই। জেলা পরিষদগুলোর ওপর আঞ্চলিক পরিষদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের দাবি, মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের হাতে থাকার কথা। সেটা হয়নি।

শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জটিল এক রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। চুক্তি সবাই খুশি মনে গ্রহণ করেনি। বিভেদ সৃষ্টি হয় পাহাড়িদের মধ্যে। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) থেকে বের হয়ে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পরবর্তীতে এ দুটি সংগঠন ভেঙে আরও কয়েকটি দল তৈরি হয়।

শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে বাঙালিরাও। তারা সমঅধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন গঠন করে। শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি কেনাবেচা এবং স্থানান্তর স্থানীয় পরিষদের অনুমোদন ছাড়া করা যাবে না। এই নীতিরও বিরোধিতা করেছে সমঅধিকার আন্দোলন। তাদের বক্তব্য, পাহাড়িরা দেশের যে কোনো স্থানে জমি কেনার ও বসবাসের সুযোগ পেলে তারা পাবে না কেন?

পাহাড়িরা সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়, সমঅধিকার আন্দোলন তার বিরোধিতা করে। তারা আশঙ্কা করে, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়িরা বাঙালিদের নির্যাতন করবে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এ কথা ঠিক, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য এলাকায় বেশ কিছু সুফল হয়েছে। প্রথমত, লাগাতার সহিংসতা বন্ধ হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা দেশের বড় বড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বিসিএসসহ ভালো ভালো চাকরিতে যাচ্ছে। আমি নিজে ওদের সাংস্কৃতিক দল নিয়ে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে  গেছি। সেখানে পাহাড়ি জনপদের গান-নাচ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছে। সমতলের মানুষেরা সহজে পার্বত্য এলাকায় যেতে পারছে।

শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক পর্যটন বেড়েছে। এর ফলে স্থানীয় পাহাড়ি এবং বাঙালি উভয়েই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বাংলাদেশের পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি বেড়াতে যান রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে। শান্তিচুক্তি না হলে এটি কখনো সম্ভব হতো না।

শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সন্তু লারমা বিভিন্ন সময় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি, ১৪ বছর ধরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নে আবারও লড়াই করা প্রয়োজন।

পাহাড়িদের দাবি, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পার্বত্য এলাকায় আনা বাঙালিদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল পাহাড়িদের ভূমিতে। সেসব ‘সেটেলারদের’ কাছ থেকে ভূমি উদ্ধার করে পাহাড়িদের ফিরিয়ে দিতে হবে। বাঙালিরা বলছেন, তাদের কাছে ভূমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।

বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শান্তিচুক্তির দুই বছর পর ‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন’ গঠন করা হয়েছিল। কমিশনের কাছে ১৬ হাজারের মতো আবেদন জমা আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ২৩ বছরে এই কমিশনের কাজে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালের পর থেকে কমিশন কোনো আবেদনও গ্রহণ করেনি।

পাহাড়িরা বারবার বলছেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে এখানকার পরিস্থিতি অশান্তই থেকে যাবে। বাঙালিদের মতে, এ কমিশন নিরপেক্ষ নয়। কমিশনে চেয়ারম্যান ছাড়া বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। বাকি সবাই উপজাতি। কাজেই বাঙালিরা কীভাবে ন্যায়বিচার পাবে।  পাহাড়ে উপজাতীয়রা যেমন বহিরাগত, তেমন বহিরাগত বাঙালিরাও। এ বিতর্কে না গিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই পক্ষকে একে অপরকে মেনে নেওয়ার সদিচ্ছা থাকতে হবে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার পেছনে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দায় কম নয়। নিজেদের স্বার্থেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতে হবে। তাতে লাভবান হবে উভয় পক্ষ।

লেখক : কথাশিল্পী, গবেষক

সর্বশেষ খবর