বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

অন্তর্বর্তী সরকার

বজায় থাক সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের তিন দিন পর শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সে সরকার ইতোমধ্যে দুই মাস পূর্ণ করেছে। স্বভাবত বিশ্লেষণ হতেই পারে, সরকারের অর্জন কী? তার আগে উল্লেখ প্রয়োজন- দেড় দশকের স্বৈরশাসনে অনিয়ম-অনাচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট-অর্থ পাচার, দলীয়করণে যখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনষ্ট, আইন-বিচার-প্রশাসন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় উঠবস করে পেশাদারিত্ব হারিয়ে ফেলেছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে- সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারকে হাল ধরতে হয়। নৈতিক দৃঢ়তা হারানো পুলিশ-থানা পাহারায় সেনা নিয়োগ করতে হয়েছিল। হঠাৎ বন্যায় উত্তরের জেলাগুলো প্লাবিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা লাঘবে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও গলদঘর্ম হতে হয়। সংখ্যালঘু, আনসার, গার্মেন্টকর্মীসহ বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ-অসন্তোষ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এর মধ্যেই শুরু হয় নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। মানবাধিকার, অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ শব্দটিকে শিরোধার্য করেছেন তারা। ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠনের যে মহাদায়িত্ব নিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় অসে, সেখানে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আদায়। সে কাজটি ঈর্ষণীয় সফলতায় সম্পন্ন করেছেন ড. ইউনূস। জাতিসংঘে তিনি নতুন বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন উজ্জ্বলভাবে। জুলাই বিপ্লবে নিহতদের তালিকা তৈরি, পাচার অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল দ্রুত চালু করার বিষয়গুলো প্রশংসনীয়। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। সে দেশে বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগের জটিলতা দূর হওয়াসহ বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। এত সব অর্জনের পরও কিছু ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য-শেয়ার বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর