স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। আল্লাহতায়ালার জন্য সব প্রশংসা, যিনি আমাদের জন্য সব পবিত্র, উপকারী, কল্যাণকর খাদ্য হালাল করেছেন আর সব অপবিত্র যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা হারাম করেছেন। সালাতু সালাম প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যিনি পবিত্র ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে শরীরের স্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব দিয়েছেন। অসুস্থতায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল কোরআনের বাণী- আমি তো আমার ও অস্থিরতাগুলো আল্লাহর সমীপে নিবেদন করছি। সুরা ইউসুফ, আয়াত-৮৬। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অসুস্থ অবস্থায় তোমরা দুই প্রতিষেধক ব্যবহার কর, মধু এবং আল কোরআন। (ইবনে মাজাহ)। মধু রোগের আরোগ্য আর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা, সুরা ফাতিহার আমল করাও আরোগ্য লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সুস্থ সুন্দর পবিত্রতার পথ প্রদর্শন করে। কেননা সুস্বাস্থ্য সব কাজের জন্য বিশেষ করে ইবাদত বন্দেগি করার জন্য বিশেষ সাহায্যকারী। আল্লাহতায়ালা খাদ্য ও পানীয়র মধ্যে যা উত্তম ও পবিত্র তা হালাল করেছেন। যা শরীরের জন্য উপকারী। গরু, ছাগল, উটের গোস্ত ও দুধ, মাছ, কতিপয় পাখি, ফল-ফলাদি, শাক-সবজি, মধু। এ খাবারগুলো শরীরের শক্তি, রক্ত বর্ধক, রোগ প্রতিরোধকারী। আল্লাহতায়ালা বলেন, মধুতে রয়েছে মানুষের জন্য আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন। সুরা নাহল, আয়াত-৬৯।
পানাহার গ্রহণের বিষয়ে ইসলাম স্বাস্থ্য উপযোগী পথনির্দেশনা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পথ প্রদর্শন করেন। যিনি আমাকে আহার ও পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা আশ-শোয়ারা, আয়াত : ৭৮-৮০)।রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালো জিরায় সব প্রকার রোগের উপশম রয়েছে, মৃত্যু ব্যতীত। বুখারি, হাদিস নম্বর- ৫৪৬৯। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য গরুর দুধ পান করা উচিত, কেননা তা সব প্রকার গাছ ঘাষ হতে উৎপন্ন হয়, এ পানীয় রোগের উপশম। মোসতাদরাক হাকেম, হাদিস নম্বর- ৮৩০৪।
ইসলামী শরিয়তের মৌলিক উদ্দেশ্যাবলি তথা মাকাসিদুশ শরিয়াহ হলো ৫টি। যথা : ১. নিজের জীবন রক্ষা করা, ২. নিজের সম্পদ রক্ষা করা, ৩. ইসলামী জ্ঞান রক্ষা করা, ৪. বংশগতি রক্ষা করা, ৫. ধর্ম রক্ষা করা।
প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার শরীরেরও হক বা পাওনা রয়েছে তোমার ওপর।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)।
শরীরের হক হলো- স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো সম্পর্কে ইসলামে সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
সুস্থ-সবল শরীরে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করার উদ্দেশে সাধ্যমতো উত্তম ও সুস্বাদু খাবার গ্রহণে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ইসলামে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও অপচয় করা নিরুৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পানাহার কর, কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)
ইসলামে পানি পানেও নির্দেশনা রয়েছে। পানির পাত্র ঢেকে রাখতে আর পানি তিন নিঃশ্বাসে পান করতে হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি আলাদা ঢোকে পানি পান করতেন এবং বলতেন এ পদ্ধতিতে পানি পান করা অধিকতর তৃষ্ণা মেটায় এবং বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। (মুসলিম-২০২৮)। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, উটের মতো এক নিঃশ্বাসে পানি পান কর না, বরং দুই বা তিন চুমুকে পানি পান কর। পান করার শুরুতে আল্লাহর নাম নাও এবং শেষে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাও। তিরমিজি- ১৮৮৫।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি রোগের শিফা তথা আরোগ্য আছে আর আল্লাহ চাইলে উপযুক্ত শিফার প্রয়োগে যে কোনো রোগ সেরে যেতে পারে। (মুসলিম)।
শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিবারের সবাইকে কালো জিরা আর মধু খেতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি দেখলে দোয়া পড়তে হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগী দেখে সাতবার এ দোয়া পাঠ করতেন- ‘আসয়ালুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা।’
অর্থ : ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে, যিনি মহা আরশের প্রতিপালক তোমার সুস্থতা কামনা করছি।’ - সুনানে তিরমিজি : ২০৮৩।
পৃথিবীতে আমাদের সবাইকে সুস্থ সুন্দর জীবন পরিচালনা করতে হবে। অসুস্থদের চিকিৎসা করাতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সুস্থ সুন্দর জীবন দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, সিদ্দিকে আকবর (রা.) জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা