শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলা প্রথমপত্রে ভালো করার দরকারি পরামর্শ

আতাউর রহমান সায়েম, সাবেক শিক্ষক
সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল, ঢাকা

বাংলা প্রথমপত্রে ভালো করার দরকারি পরামর্শ

প্রথমেই তোমাদের প্রতি রইল আন্তরিক স্নেহসহ আশীর্বাদ। পরীক্ষা শুরু হতে যেহেতু আর মাত্র কয়েক দিন বাকি, সেহেতু তোমাদের প্রস্তুতি এর মধ্যেই গুছিয়ে ফেলতে হবে। বেশি টেনশন না করে সিলেবাস অনুযায়ী বোর্ড বইয়ের অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। লেখক পরিচিতি থেকে শুরু করে অধ্যায়ের ভেতরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বাক্য/ চরণ রয়েছে সেগুলোর অর্থসহ ব্যাখ্যা জানতে হবে এবং প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে যেসব শব্দার্থ, টীকা ও পাঠ পরিচিতি রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কেননা জ্ঞান স্তর ও অনুধাবন স্তরের প্রশ্নগুলো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে আসবে। আর প্রয়োগ স্তর ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরের প্রশ্নগুলো উদ্দীপক ও বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় মিলে হবে। তাই এক্ষেত্রে ভালো করে প্রস্তুতি নিতে চাইলে বইয়ের একটি অধ্যায় পড়ার পর ঐ অধ্যায়ের কয়টি দিক রয়েছে এবং যেসব চরিত্র রয়েছে সেগুলোর কার কী ভূমিকা রয়েছে, তা ভালোভাবে বুঝে খাতায় না দেখে লেখার চর্চা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে 'দেনাপাওনা' ছোটগল্প তুলে ধরছি। এ অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি দিক বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন : ১. যৌতুক বা পণ প্রথার করাল গ্রাস, ২. পিতা-কন্যার পারস্পরিক প্রগাঢ় ভালোবাসা, ৩. দারিদ্র্যের কশাঘাত, ৪. ধৈর্যশীলতা, ৫. অর্থলিপ্সু, ধনতান্ত্রিক সমাজের কপটতা/ অর্থের প্রতি লোভ, ৬. তৎকালে পশ্চাৎপন্থি ও তারুণ্যের মতের দ্বন্দ্ব সংঘাত, ৭. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর নৈতিকতা বোধ, ৮. বংশীয় ঐতিহ্য জাহির, ৯. লোক দেখানো ভালোবাসা, ১০. পুত্রবধূর প্রতি শ্বশুর-শাশুড়ির অবহেলা/অত্যাচার, ১১. কুসংস্কার ইত্যাদি। আর যেসব চরিত্র রয়েছে এবং তাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের প্রভাব পড়েছে। সেগুলো হলো : * প্রধান চরিত্র নিরূপমা (১,২,৩,৪), * নিরূপমার পিতা রামসুন্দর (১,২,৩,৪), * নিরূপমার স্বামী (৬,৭), * নিরূপমার শ্বশুর-শাশুড়ি (৫,৬,৮,৯,১০,১১) প্রমুখ। আর 'দেনাপাওনা' ছোটগল্পের প্রধান দিক/ মূল উপজীব্য/ সারকথা/সারবস্তু হচ্ছে- যৌতুক বা পণ প্রথার করাল গ্রাস।

তোমাদের আরও জানা দরকার যে, বইয়ের একটি অধ্যায়ের সঙ্গে অন্য আর একটি অধ্যায়ের মূলভাব কিংবা কোনো চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের বা গুণের মিল থাকলে যৌথভাবে উদ্দীপকসহ প্রশ্ন করা যায়। তাই তোমাদেরকে এ ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। তোমাদের সুবিধার জন্য আমি কয়েকটি অধ্যায়ের নাম তুলে ধরছি- 'পালামৌ' ভ্রমণকাহিনীর সঙ্গে 'আম-অাঁটির ভেপু' গল্পের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটির মিল রয়েছে। 'দেনাপাওনা' ছোটগল্পের সঙ্গে 'নিরীহ বাঙালি' প্রবন্ধের যৌতুক প্রথার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে। 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন' প্রবন্ধের সঙ্গে 'মানুষ' কবিতার সাম্যবাদী চেতনার মিল রয়েছে। 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের সঙ্গে 'আমার সন্তান' ও 'পল্লীজননী' কবিতার সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ-মমত্ববোধের দিকটির মিল রয়েছে। 'একাত্তরের দিনগুলি' দিনপঞ্জির সঙ্গে 'তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা', 'আমার পরিচয়', 'স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো', 'সাহসী জননী বাংলা' কবিতার এবং 'কাকতাড়ুয়া' উপন্যাসের দেশপ্রেম, দুঃসাহসী, পাকিস্তানি বাহিনীর শাসন ও নির্যাতনের দিকটির মিল রয়েছে। 'বই পড়া' প্রবন্ধের সঙ্গে 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধের আলোকিত মানুষ হওয়ার দিকটির মিল রয়েছে। এভাবে আরও বেশ কয়েকটি অধ্যায় মিলে প্রশ্ন হতে পারে। আবার অন্য শ্রেণির (৫ম-একাদশ শ্রেণি) বাংলা প্রথমপত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ের কোনো একটা কিংবা দুটো দিক নিয়েও উদ্দীপকসহ প্রশ্ন হতে পারে। এ ছাড়াও বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ভাব-সম্প্রসারণ ও সারমর্মের মূলভাব ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। কেননা এগুলোর সঙ্গে বাংলা প্রথমপত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ের ভাবের মিল রয়েছে।

প্রত্যেক উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন থাকে। তোমাদের সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার।

(ক) জ্ঞানমূলক : কোনো ঘটনার তথ্য, তত্ত্ব, নীতিমালা, প্রকারভেদ, প্রভৃতি মুখস্থ করে লিখতে পারার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ স্তরের প্রশ্নে কে, কী, কখন, কোথায়, সংজ্ঞা দাও, উল্লেখ কর প্রভৃতি দ্বারা হয়। উল্লেখ্য, এ স্তরের প্রশ্নটি সম্পূর্ণ পুস্তকনির্ভর এক বাক্যের বা এক শব্দের। অধ্যায়ের ভিতর থেকে যে বাক্যগুলো এক কথায় প্রশ্নোত্তর হয় সেখান থেকে, শব্দার্থ থেকে এবং লেখক পরিচিতি থেকে এ স্তরের প্রশ্ন হবে। কোনোক্রমে উদ্দীপক থেকে প্রশ্ন হবে না। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের কোনো প্রশ্ন এ স্তরে হবে না। আর এ স্তরের মান-বণ্টন হবে ১। পরীক্ষার্থী খাতার মধ্যে শুধু একটি শব্দ দিয়ে জ্ঞান স্তরের আক্ষরিক অর্থটি উত্তর করতে পারবে; তবে একটি বাক্যে লেখাই উত্তম।

(খ) অনুধাবনমূলক : কোনো অনুচ্ছেদ, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ে বুঝতে পারা এবং তার মধ্যকার একটি বক্তব্যকে নিজের ভাষায় অনুবাদ করে সংক্ষেপে বুঝিয়ে লেখার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ ধরনের স্তরে কেন, লেখক কী বুঝাতে চেয়েছেন, অর্থ ব্যাখ্যা কর ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন হতে পারে। এ স্তরের প্রশ্নও বই থেকে হবে। তবে যে বইয়ের অধ্যায়ের আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হবে। প্রশ্নপত্রে এ স্তরের মান ২ লেখা থাকলেও তোমরা দুটি অংশে উত্তর লিখবে। অর্থাৎ প্রথম অংশে জ্ঞান স্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্যে ভাবার্থে এবং দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে দুটি থেকে চারটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবে। এক্ষেত্রে কেউ ইচ্ছা করলে অনুধাবন অংশটি আগেও লিখতে পারে এবং জ্ঞান স্তরের অংশটি পরে লিখতে পারবে।

(গ) প্রয়োগমূলক : এটি হলো পাঠ্যপুস্তক থেকে ও অনুধাবন নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার দক্ষতা। এ ধরনের স্তরে সাধারণত প্রয়োগ দেখাও, মিল/সাদৃশ্য, অমিল/বৈসাদৃশ্য কী, চিহ্নিত কর, ব্যাখ্যা কর, কীভাবে ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন করা হয়। উল্লেখ্য, এ স্তরের প্রশ্নে পাঠ্যবই থেকে হুবহু হবে না। উদ্দীপক ও বইয়ের কোনো অধ্যায়ের সঙ্গে একত্র করে প্রশ্ন হবে। এ স্তরের মানবণ্টন ৩ (জ্ঞান স্তর=১, অনুধাবন স্তর=১ ও প্রয়োগ স্তর=১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে ভাবানুবাদে, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে এবং প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে। এভাবে তিনটি স্তর তিনটি প্যারায় লেখা উত্তম। তবে কেউ এক প্যারার মধ্যে এ তিনটি স্তরের উত্তর লিখতে পারলে সেও নম্বর পাবে। উল্লেখ্য, (গ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তর সঠিক না হলে পরীক্ষকগরা শূন্য নম্বর দিতে পারেন।

(ঘ) উচ্চতর দক্ষতামূলক : কোনো বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করার দক্ষতা হলো উচ্চতর দক্ষতা। এ স্তরের প্রশ্নটি উদ্দীপক ও বই মিলে হবে। এ স্তরের মানবণ্টন ৪ (জ্ঞান স্তর=১, অনুধাবন স্তর=১, প্রয়োগ স্তর=১ ও উচ্চতর দক্ষতা=১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে সিদ্ধান্তের ভাব অনুযায়ী, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে, প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সমন্বয় সাধন করে জ্ঞান স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা পুনরাবৃত্তি করে। এখানে চারটি প্যারা করলে ভালো হয়। তবে কেউ যদি এক প্যারায় বা দুই প্যারায় বা তিন প্যারায় সব স্তরের উত্তর সঠিক লিখতে পারে, সেও পূর্ণ নম্বর পাওয়ার দাবি রাখে। উল্লেখ্য, (ঘ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তরের উত্তরটি খুবই সাবধানে দিতে হবে। কেননা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে ওই প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে। তখন হয়তো পরীক্ষকরা ঐ প্রশ্নোত্তরে শূন্য নম্বর দিতে পারেন। উল্লেখ্য, (ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরে যদি উদ্দীপকের কোনো চরিত্রের সঙ্গে অধ্যায়ের কোন চরিত্রের বিমূর্ত রূপ/ প্রতিচ্ছবি / প্রতিরূপ/অনুরূপ/একই রূপ- এ ধরনের কথা থাকে, তাহলে উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রের এবং অধ্যায়ের ঐ চরিত্রের সব বৈশিষ্ট্য/দিক/ভাব এক হলে যথার্থ; আর এক না হলে যথার্থ নয় হবে। কিন্তু প্রশ্নে 'প্রতিনিধিত্ব করে'- এ কথা থাকলে চরিত্রের সবকিছু বৈশিষ্ট্য না থাকলেও চলবে। অর্থাৎ কিছু বৈশিষ্ট্য (প্রায় ৫০%) মিলে গেলে যথার্থ লিখতে হবে। আবার উদ্দীপকের মূলভাব এবং অধ্যায়ের মূলভাব/ মূলকথা/মূল উপজীব্য একই ধারায় উৎসারিত- এ ধরনের কথা থাকলে সব দিক মিলানোর প্রয়োজন নেই, মূল কথা থাকলেই চলবে। এক্ষেত্রে যথার্থ লিখতে হবে। তবে প্রশ্নে যদি সামগ্রিকভাব/দিক প্রকাশ পায়- এ ধরনের ক্ষেত্রে অধ্যায়ের এবং উদ্দীপকের সব দিক/ভাব মিলাতে হবে। একটি দিক/ভাব/বৈশিষ্ট্য কম হলেই যথার্থ নয় লিখতে হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন পেয়ে সরাসরি খাতায় উত্তর লিখবে না। সম্পূর্ণ প্রশ্নটি কমপক্ষে একবার ভালোভাবে পড়ে নিবে এবং যে উদ্দীপকের প্রশ্নগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ মনে হবে, সেগুলো ক্রমানুসারে আগে দেওয়ার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ সৃজনশীল উত্তর লেখার সময় (ক, খ, গ এবং শেষে ঘ নম্বর প্রশ্নের উত্তর) ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করবে এবং খাতায় প্রশ্নের নম্বর সাইনপেন দিয়ে নিচে দাগ দিয়ে এভাবে লিখতে পার- ১(ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর : আর সময় অল্প মনে হলে এভাবে লিখতে পার- ১(ক) উ. এভাবে ১(খ) উ. ১(গ) উ. ১(ঘ) উ. বানানের ব্যাপারেও খুব সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে (ক) নম্বর প্রশ্নের জ্ঞান স্তরের উত্তরে বানান ভুল হলে সাধারণত নম্বর দেওয়া হয় না। উল্লেখ্য, লেখকের নামের পরিবর্তে সর্বনাম তাঁর বানানে সম্মান দেওয়ার জন্য চন্দ্রবিন্দু দিতে হবে। বিরামচিহ্নের ব্যাপারেও সঠিকভাবে লক্ষ রাখতে হবে। কেননা সঠিকভাবে বিরামচিহ্নের ব্যবহার না করলে অনেক সময় অর্থ পরিবর্তন হতে পারে। আর হ্যাঁ, যে কোনো কবিতা/প্রবন্ধ/গল্প/উপন্যাস/নাটক- এর নাম লিখতে হলে অবশ্যই উদ্ধোরণ চিহ্ন (যেমন- 'বহিপীর' নাটক) দেওয়া উচিত। এ ছাড়াও সব বিষয়ে বিরামচিহ্নের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

এবার ২০১৫ সালের এসএসসি লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য 'দেনাপাওনা', 'বই পড়া', 'অভাগীর স্বর্গ', 'আম-অাঁটির ভেপু', 'উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন', 'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব', 'আমার সন্তান', 'প্রাণ', 'মানুষ', 'সেইদিন এই মাঠ', 'পল্লীজননী', 'স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো' 'কাকতাড়ুয়া' ও 'বহিপীর' অধ্যায়গুলো বেশি জোর দিবে। এ ছাড়াও অন্য অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর