শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেএসসি পরীক্ষার পড়াশোনা

শারীরিক স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা

জেএসসি পরীক্ষার পড়াশোনা

সুধীর বরণ মাঝি

সাবেক শিক্ষক, ডক্টর মালিকা কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা

[পূর্ব প্রকাশের পর]

এইচআইভি/এইডসের প্রভাব আলোচনা কর।

ভূমিকা : সারা বিশ্বে এই ঘাতক ব্যাধি এইডস আশঙ্কাজনক হারে বিস্তার লাভ করছে। ২০১০ সালের সরকারি তথ্য হিসেবে বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৭ হাজার ৫০০ জন। আর বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন এই রোগে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ জন আক্রান্ত হচ্ছে।

এইচআইভি/এইডসের প্রভাব : স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেমন এইচআইভি /এইডসের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। 

১। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রভাব : এইচআইভি ভাইরাস একবার দেহে প্রবেশ করলে তা সারা জীবন শরীরের মধ্যে থাকে এবং শারীরিক সম্পর্ক বা একই সিরিঞ্জের মাধ্যামে অন্যের শরীরেও ছড়ায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এটা মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এই রোগের প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে।                                                                                

২। পরিবারের ওপর প্রভাব : এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে স্থানীয় লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই এড়িয়ে চলে। সমাজে তাকে ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি কর্মরত থাকলে তাকে কাজ বা চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে পরিবারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে তার ছেলেমেয়েরা এতিম হয়ে অবহেলা-অনাদরে বড় হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, এমনকি অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

৩। অর্থনৈতিক প্রভাব :  এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির কর্মক্ষমতা কমে যায়। ফলে সে কাজকর্ম, আয়-রোজগার করতে পারে না। এতে ওই ব্যক্তির উন্নয়নের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যেসব দেশে এইডসের প্রকোপ বেশি, সেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসে।                                                                   

৪। অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক কী? এইডস মানবদেহে কীভাবে সংক্রমিত হয়?

ভূমিকা : মানুষ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ব, বিবেক এগুলো তার একটা নৈতিক চরিত্র নির্ধারণ করে। কোনো মানুষ যখন এগুলো হারায় তখন তার নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয় এবং সে নানা রকম অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।                                           

অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক : এইডস সম্পর্কে আলোচনা শুরু করলেই চলে অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক। বিবাহবহির্ভূত যৌনমিলনকে অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক বলে। লিভ টুগেদার অনৈতিক দৈহিক সম্পর্কের একটা অংশ। প্রধানত কৌতূহল এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে কিশোর-কিশোরীরা অবৈধভাবে পরস্পর যৌন সম্পর্কে মিলিত হওয়াকে অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক বলে। চরিত্রগত অবক্ষয়ের ফলে এরকম সম্পর্ক হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে এরকম অবৈধ কাজ করে ফেলে।

এইডস মানবদেহে যেভাবে সংক্রমিত হয় : এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহের কয়েকটি তরল পদার্থে যেমন : রক্ত, রস, বীর্য ও মায়ের বুকের দুধে বেশি থাকে। ফলে মানবদেহের এই তরল পদার্থগুলোর আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। এইচআইভি সুনির্দিষ্টভাবে যে সব উপায়ে ছড়ায়, তা হলো—      

১। এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত কোনো ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।                                              

২। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহূত সুচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোনো ব্যক্তি ব্যবহার করলে।       

৩। আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ বা দেহকোষ অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।

৪। আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভধারণকালীন, প্রসবকালে বা মায়ের দুধ পানকালে) তার শিশু এই রোগে সংক্রমিত হতে পারে।                                                                                                      

৫। অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে।

৬। অন্যের ব্যবহূত ব্লেড বা রেজার ব্যবহার করলে।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি এইচআইভি/এইডস কী, কীভাবে সংক্রমিত হয়, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন।

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধের উপায় কী?

ভূমিকা : এইচআইভি/এইডস কী, কীভাবে সংক্রমিত হয়, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন।

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধের উপায় : এইচআইভি/এইডস হলে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো—

১। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার : এইচআইভি/এইডস ঝুঁকি প্রতিরোধে সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে।

২। আবেগ প্রশমন : কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়ে কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। অনেক সময় মা-বাবার শাসনের ফলে রাগ বা অভিমান করে তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বসে। বড়দের সঙ্গে বিশেষ করে মা-বাবার সঙ্গে খোলামেলা কথা বললে সহজে আবেগ প্রশমিত হয় এবং এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

৩। ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য না বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় অনৈতিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাব চক্ষুলজ্জা বা ভয়ে সরাসরি না বলতে পারে না। তাই কীভাবে না বলতে হবে তা জানতে ও শিখতে হবে। নিজেকে দৃঢ়চেতা হতে হবে এবং বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেই না বলার কৌশল গ্রহণ করতে হবে।   

৪। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা : নেশা করা, মাদকাসক্ত হওয়া, অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন কোনো ধর্ম বা সমাজ অনুমোদন করে না। সামাজিকভাবেও এগুলো অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। তাই ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চললে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।   

৫। সচেতনতা সৃষ্টি : র‌্যালির আয়োজন, পত্রিকায় প্রচার, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, সংগীত প্রভৃতির মাধ্যমে এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।

৬। অল্প বয়সী মেয়েরা এইডস সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ কেন?

ভূমিকা : বয়স প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব বয়সের মানুষের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব হয় না। বয়সের কোনো পর্যায়ে মানুষ আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আবার কোনো পর্যায়ে সেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে। বিশেষ করে অল্প বয়সের মেয়েরা আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়।

অল্প বয়সী মেয়েরা এইডস সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ : অনেক দেশে অনিয়ন্ত্রিত মাদকের ব্যবহার, অসচেতনতা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণে অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ব্যাপকতা মহামারী আকারে পৌঁছে গেছে। এইডস রোগের পরিণতি যেহেতু ভয়াবহ, তাই বিশেষ করে অল্প বয়সী মেয়েদের এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি থেকে জানা যায় যে, নতুন এইচআইভিতে আক্রান্তদের অর্ধেকই ১৫-২৪ বছর বয়সী।এ বয়সী মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে—

১। আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান।

২। এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।

৩। অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কম।

৪। নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণে নারীর নিগৃহীত হওয়া।  (চলবে)                                         

৫। মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য

৬। অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন।                                                     

৭। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।

৭। কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতাই এইডস প্রতিরোধ করতে পারে- ব্যাখ্যা কর।                                                                  

ভূমিকা : বয়স প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব বয়সের মানুষের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব হয় না। বয়সের কোন পর্যায়ে মানুষ আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আবার কোন পর্যায়ে সেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়।

     [ চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর