রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

বিষয় : বাংলা প্রথমপত্র

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

ফারুক আহম্মদ

সহকারী শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা

 

আমার সন্তান (কবিতা)

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১.         বিহারের রাজা নীলকান্তের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তিনি ঈশ্বরের কাছে সন্তানের জন্য প্রায়ই প্রার্থনা করতেন। হঠাৎ একদিন এক ফকির এসে রাজাকে বলল, তোমার কী চাই। রাজা বলল, আমার কোনো সন্তান নেই, তাই আমি সন্তান চাই। ফকির রাজাকে একটি লাঠি দিয়ে বলল, এই লাঠিটি কুল গাছে চেলে মারবে। যে কয়টি কুল পড়বে তা বেটে স্ত্রীকে খাওয়াবে। তাহলে তোমার স্ত্রীর সন্তান হবে। রাজা তাই করল এবং তার স্ত্রীর ফুটফুটে একটি বাচ্চা হলো। 

            ক. ‘মানসিংহ ও ভবানন্দ’ উপখ্যানের সম্পাদক কে?       

            খ. আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে- ব্যাখ্যা কর।  

            গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আমার সন্তান’ কবিতার বৈসাদৃশ্য- ব্যাখ্যা কর।           

            ঘ. উদ্দীপকটি ‘আমার সন্তান’ কবিতার মূল ভাবকে সমর্থন করে না- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।    

            ক. উত্তর : ‘মানসিংহ ও ভবানন্দ’ উপাখ্যানের সম্পাদক  আবদুল হাই এবং আনোয়ার পাশা।

            খ. উত্তর : উক্তিটির মধ্যে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

            ঈশ্বরী পাটনী খেয়াঘাটের দরিদ্র মাঝি। খেয়া পার করাই তার কাজ। একদিন এক দেবী ছদ্মবেশে তার নৌকায় পার হওয়ার জন্য আসেন। দেবীর পায়ের স্পর্শে নৌকা সোনা হয়ে গেলে পাটনী বুঝতে পারে এ কোনো সাধারণ নারী নয়। তাই দেবীর কাছে পাটনী বর চায়। দেবী পাটনীর প্রতি খুশি হয়ে যা ইচ্ছা তাই চাইতে বলে। পাটনী নিঃস্বার্থভাবে সন্তানের মঙ্গল ও সুখ-সমৃদ্ধির চিন্তা করেই উক্তিটি করেন। 

            গ. উত্তর : স্রষ্টার কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে বিহারের রাজার এবং ‘আমার সন্তান’ কবিতার পাটনীর মধ্যে নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব বা বিসর্জন দেওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।

            ‘আমার সন্তান’ কবিতায় দেখা যায় ঈশ্বরী পাটনী নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে সন্তানের সুখ-সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করেছেন। একদিন এক ছদ্মবেশধারী দেবী পাটনীর নৌকায় পার হওয়ার জন্য ওঠেন। পাটনীর কথাবার্তায় দেবী অন্নপূর্ণা খুশি হয়ে বর প্রার্থনা করতে বলেন। ঈশ্বরী পাটনী ইচ্ছা করলে সোনা-মহর-ধন-সম্পদ যা খুশি তাই চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে সন্তানের মঙ্গলের কথা ভাবলেন এবং দেবীর কাছে বর চাইলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।

            অন্যদিকে, উদ্দীপকের বিহারের রাজা নীলকান্ত সাহেব নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব দিলেন। একদিন এক ফকির এসে রাজাকে বলল, তুমি বর চাও। রাজা বলল, যেহেতু আমার কোনো সন্তান নেই, সুতরাং আমার একটি সন্তান দাও। ফকির রাজার কথা শুনে রাজাকে একটি লাঠি দিয়ে বলল, এই লাঠিটি কুল গাছে চেলে মারবে। যে কয়টি কুল পড়বে তা বেটে স্ত্রীকে খাওয়াবে। তাহলে তোমার স্ত্রীর সন্তান হবে। রাজা নীলকান্তের প্রার্থনার মধ্যে আপন কল্যাণ কামনাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, স্রষ্টার কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে দুই ব্যক্তির দু রকম মনোভাব। অর্থাৎ একজন নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। অন্যজন অন্যের মঙ্গল কামনা করেছেন। উদ্দীপক ও ‘আমার সন্তান’ কবিতার পার্থক্য এখানেই।

ঘ. উত্তর : বর প্রার্থনার দিক থেকে মিল থাকলেও উদ্দীপকটি ‘আমার সন্তান’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে না-উক্তিটি যথার্থ।

কবি ‘আমার সন্তান’ কবিতায় একজন দেবীর আবির্ভাব ঘটিয়েছে। ঈশ্বরী পাটনীর কাজকর্মে দেবী খুশি হয়ে বর দেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে রাজা দুঃখ ঘোচানোর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। তাই তার মনের দুঃখ দূর করার জন্য ফকিরের অসিলায় তার সন্তানের দুঃখ দূর করলেন। সুতরাং দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘আমার সন্তান’ কবিতার মূলভাব ভিন্ন।  

বিহারের রাজা নীলকান্ত সাহেবের কোনো সন্তান না হওয়ায় তার মনে কোনো সুখ ছিল না। তাই তিনি প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তান চেয়ে প্রার্থনা করতেন। একদিন এক ফকির এসে বলল, তোমার কী চাই। রাজা বলল, আমার কোনো সন্তান নেই, তাই আমি সন্তান চাই। ফকির রাজাকে একটি লাঠি দিয়ে বলল, এই লাঠিটি কুল গাছে চেলে মারবে। যে কয়টি কুল পড়বে তা বেটে স্ত্রীকে খাওয়াবে। তাহলে তোমার স্ত্রীর সন্তান হবে। রাজা তাই করল এবং সন্তান হলো। এ ঘটনার মাধ্যমে একজন নিরুপায় মানুষের আকুতি প্রকাশ পায়। অন্যদিকে ‘আমার সন্তান’ কবিতায় কোনো নিরুপায় ব্যক্তির আকুতি প্রকাশ পায় না। স্বেচ্ছায় দেবী পাটনী বর দিতে চাইলে পাটনী নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে সন্তানের সুখ-সমৃদ্ধির কথা ভাবলেন। রাজার মতো নিজের স্বার্থের কথা বলতে পারতেন, কিন্তু পাটনী তা না করে সন্তান যেন দুধে ভাতে থাকে সেই আকুতি প্রকাশ করলেন।  

উদ্দীপক ও ‘আমার সন্তান’ কবিতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজা নীলকান্ত নিজের অসহায়ত্ব তাকে দুর্বল করে তুলেছে এবং বাধ্য হয়ে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেছে। অন্যদিকে ‘আমার সন্তান’ কবিতায় পাটনী অসহায় নয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে নয়, দেবীর আদেশে বর চাইলেন। আবার রাজা নিজের মঙ্গল চাইলেন। অপরদিকে পাটনী সন্তানের মঙ্গল কামনা করলেন। যার মধ্য দিয়ে সব সন্তানের মঙ্গল প্রকাশ পেয়েছে। আবার সন্তানের প্রতি বাবার মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে। যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘আমার সন্তান’ কবিতার মূল ভাবকে প্রকাশ করে না-মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত এবং যথার্থ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর