বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

অষ্টম শ্রেণির বাংলা

মেহেরুন্নেসা খাতুন

অষ্টম শ্রেণির বাংলা

গদ্য—শিল্পকলার নানা দিক : মুস্তাফা মনোয়ার

১.         নুজহাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। নবীনবরণ শেষে তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে এলেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। সেখানে দেখেন-এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক ভাস্কর্য। নাম সংশপ্তক। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, তাকেই বলে সংশপ্তক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে এই ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে। মনটা ভরে গেল নুজহাতের।

            ক. শিল্পকলার মূল সত্যটি কার গানের কথায় প্রকাশ পেয়েছে?

            উত্তর : শিল্পকলার মূল সত্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।

            খ. শিল্পকলা চর্চা সবার জন্য অপরিহার্য কেন? ব্যাখ্যা কর।

            উত্তর : সুন্দরবোধ মানুষের মনকে পরিতৃপ্ত ও পরিশীলিত করে বলে শিল্পকলা চর্চা সবার জন্য অপরিহার্য।

            ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনাটিতে লেখক মুস্তাফা মনোয়ার সুন্দরের ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন যে পুরাকালের গুহা-মানব থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্যের মধ্যে বিস্তারের জন্য সৃষ্টি করেছে নানা আঙ্গিকের শিল্পকলা যেমন-চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্যকলা, সংগীতকলা, অভিনয়কলা, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য ইত্যাদি কলাভঙ্গি। আমাদের দেশের সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে নানা শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সব শিল্পীর একটি দায়িত্ব হলো—দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। একটি দেশ ও দেশের মানুষকে জানা যায় তার শিল্পকলা চর্চার ধারা দেখে। তাই শিল্পকলা চর্চা সবার জন্য অপরিহার্য।

            গ. ক্যাম্পাসে নুজহাত শিল্পকলার কোন দিকটি দেখেছেন? এর বর্ণনা দাও।

            উত্তর : ক্যাম্পাসে নুজহাত শিল্পকলার ভাস্কর্যের দিকটি দেখেছেন।

            এ সম্পর্কে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় বলা হয়েছে—চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সংগীত, নৃত্য ও কবিতা ইত্যাদি সব কিছুর মধ্য দিয়েই সুন্দরকে প্রকাশ করা যায়। সব শিল্পকলার মধ্যে কিছু মূল বস্তু থাকে, যেমন—বিন্দু, রেখা, রং, আকার, গতি বা ছন্দ, আলো-ছায়া, গাঢ়-হালকার সম্পর্ক ইত্যাদি। এসবের মিলনেই হয় ছবি বা ভাস্কর্য। ভাস্কর্য হলো নরম মাটি দিয়ে কোনো কিছুর রূপ দেওয়া বা শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানো। বিশেষ এক ধরনের ছাঁচ বানিয়ে গলিত মেটাল ঢেলে এই গড়ন বানানো হয়। এ ধরনের কাজকেই বলা হয় ভাস্কর্য। আমাদের দেশে পোড়ামাটির ভাস্কর্য একসময় খুব প্রসিদ্ধ ছিল। উদ্দীপকের রাইসার দেখা ভাস্কর্যটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনার উপর্যুক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে।

উদ্দীপকের নুজহাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়ানো ‘সংশপ্তক’ নামের যে বিশালাকার মূর্তিটি দেখেন, তা শিল্পকলার ভাস্কর্যের দিককে নির্দেশ করে।

            ঘ. ‘নুজহাতের দেখা দিকটিই শিল্পকলার প্রধান দিক’-মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

            উত্তর : নুজহাতের দেখা ভাস্কর্যটি ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনার প্রধান নয়, একটি মাত্র দিক।

            এ ছাড়া ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে লেখক বিভিন্ন মাধ্যমের কথা বলেছেন—যার মাধ্যমে সুন্দরকে প্রকাশ করা যায়। এই মাধ্যমগুলো হলো-সংগীত, নৃত্য, কবিতা, অভিনয়কলা, চলচ্চিত্র ও চিত্রকলা ইত্যাদি। যেমন-ছবি আঁকা। এর মানেই হলো দেখা ও শোনা। ছোটরা প্রকৃতি, মা-বাবা, ভাই-বোন মিলিয়ে একটি সমাজকে দেখে। প্রতিদিনের দেখা বিষয়বস্তু রং, গড়ন ও আকৃতি শিশু মনের কল্পনার সঙ্গে মিলেমিশে যায়। নানা রকম গল্প, কবিতা, ছড়া শুনেও শিশু মনে ছবি তৈরি হয়। এসব দেখা-অদেখা বস্তু মিলিয়ে শিশুরা ছবি আঁকে কল্পনা-বাস্তব মিলিয়ে। আর আছে মাধ্যম অর্থাৎ কোন মাধ্যমে শিল্প সৃষ্টি হয়েছে। চিত্রকলার মাধ্যম হলো কালি-কলম, জল রং, প্যাস্টেল রং, তেল মিশ্রিত রং ইত্যাদি। ছোটদের জন্য প্যাস্টেল ও জল রং ব্যবহার করা সহজ হয়। বাংলাদেশে পুরাকালে জল রং দিয়েই ছবি আঁকতেন শিল্পীরা। পুরনো পুঁথিতে তালপাতার আঁকা ছবির বহু নিদর্শন আছে। বর্তমানে জল রং অত্যন্ত প্রিয় হলেও এখন তালপাতায় কেউ ছবি আঁকে না, কাগজে আঁকে।

 

উদ্দীপকের নুজহাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সংশপ্তক নামের যে বিশালাকার মূর্তিটি দেখেছেন, তা শিল্পকলার ভাস্কর্যের দিককে শুধু নির্দেশ করে।

            উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই সিদ্ধান্ত টানা যায় যে ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় শিল্পকলার আরও যেসব দিক বর্ণিত হয়েছে তার গুরুত্বও কম নয় বলে শুধু ভাস্কর্যকে প্রধান বলা যায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর