বাংলাদেশে বাঙালি মানুষ ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। এখন তোমাদের মাথায় হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ কাদের বলা হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এমন একটি গোষ্ঠী, যাদের নিজেদের আলাদা একটি সংস্কৃতি আছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হলো চাকমা, তারপর মারমা ও ত্রিপুরা। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাদের সংস্কৃতি খুবই বৈচিত্র্যময়। কোনো জনগোষ্ঠীর মা পরিবারের প্রধান হন আবার অন্য জনগোষ্ঠীতে বাবা। বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাহাড়ে জুম চাষ করে। জুম চাষ হলো পাহাড়ে সফল ধরনের ফসলের চাষ। জুম চাষের জন্য পাহাড়ের গায়ে আগাছায় আগুন দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকে।
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ছাড়াও আরও আছে সাঁওতাল, ম্রো, খাসি, মণিপুরি, মগ ইত্যাদি। পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ থেকে কিছু প্রশ্নোত্তর পড়ে নেওয়া যাক
১. গারোদের মাতৃভাষার নাম কী?উত্তর : ‘আচিক’ ভাষা।
২. তিব্বত থেকে কোন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসেছে ধারণা করা হয়?
উত্তর : ‘গারো’ জনগোষ্ঠী।
৩. কত বছর আগে গারোরা এ দেশে এসেছে?
উত্তর : ধারণা করা হয় সাড়ে চার হাজার বছর আগে।
৪. গারো সমাজে পরিবারের প্রধান কে হন?
উত্তর : নারীরা।
৫. ‘দকবান্দা’ ও ‘দকসারি’ কোন জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক?
উত্তর : গারো জনগোষ্ঠীর।
৬. গারোরা নতুন শস্য কোন দেবতাকে উৎসর্গ করে?
উত্তর : সূর্য দেবতা ‘সালজং’।
৭. গারোদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘ওয়ানগালা’ কখন হয়?
উত্তর : নতুন শস্য ওঠার সময় অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে।
৮. ‘সাংসারেক’ কাদের আদি ধর্মের নাম?
উত্তর : গারো জনগোষ্ঠীর।
৯. বর্তমানে বেশির ভাগ গারো কোন ধর্মাবলম্বী?
উত্তর : খ্রিস্টধর্ম।
১০. গারোরা তাদের ‘নকমান্দি’ নামক বাড়ি কোথায় তৈরি করত?
উত্তর : নদীর ধারে লম্বাটে করে তৈরি করা হতো।
১১. গারোদের জীবনযাত্রায় বর্তমানে দুটি উল্লেখযোগ্য কী পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর : ১. তাদের আদি ধর্ম সাংসারেক হলেও বর্তমানে তারা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী।
২. অন্যদের মতো তারা করোগেটেড টিন দিয়ে বাড়ি তৈরি করে।
১২. গারোরা কাদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল?
উত্তর : ইংরেজদের সঙ্গে।
১৩. কত সালে ইংরেজদের সঙ্গে গারোদের যুদ্ধ হয়?
উত্তর : ১৮৭২ সালে।
১৪. ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই বীর যোদ্ধার নাম লেখ।
উত্তর : তোগান নেংমিনজা ও সোনারাম সাংমা।
১৫. গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস কোন অঞ্চলে?
উত্তর : বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনাসহ আরও কয়েকটি জেলায় গারোরা বাস করে।
১৭. খাসি জনগোষ্ঠীর বসবাস কোন বিভাগে?
উত্তর : সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে।
১৮. খাসি জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান কাজ কী?
উত্তর : কৃষিকাজ।
১৯. খাসিদের মাতৃভাষার লিখিত বর্ণমালা আছে কি?
উত্তর : খাসিদের ভাষার নাম ‘মনখেমে’। এর কোনো লিখিত বর্ণমালা নেই।
২০. খাসিদের সমাজব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি কে পায়?
উত্তর : পরিবারের ছোট মেয়ে।
২১. খাসিদের পরিবারের প্রধান কে?
উত্তর : পরিবারের প্রধান নারীরা।
২২. ‘ফুংগ মারুং’ কোন ধরনের পোশাক?
উত্তর : খাসি ছেলেদের পকেট ছাড়া শার্ট ও লুঙ্গি।
২৩. খাসি মেয়েরা কী পোশাক পরে?
উত্তর : ‘পিন’ নামক ব্লাউজ ও লুঙ্গি।
২৪. খাসিদের বিভিন্ন দেবতার মধ্যে প্রধান দেবতার নাম কী?
উত্তর : উব্লাই নাংথউ।
২৫. খাসিদের কাছে পবিত্র খাবার কোনটি?
উত্তর : পান-সুপারি।
২৬. ম্রো পরিবারের প্রধান কে?
উত্তর : পরিবারের প্রধান পিতা।
২৭. বাংলাদেশের কোন জনগোষ্ঠীর ভাষাকে ইউনেসকো ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে?
উত্তর : ম্রো জনগোষ্ঠী।
২৮. ম্রো জনগোষ্ঠীর সমাজব্যবস্থা কী ধরনের?
উত্তর : গ্রামভিত্তিক।
২৯. ম্রোদের বাড়ি ‘কিম’ কী দিয়ে বানানো হয়?
উত্তর : বাঁশের বেড়া ও ছনের চাল দিয়ে মাচার ওপর বানানো হয়।
৩০. ‘নাপ্পি’ কাদের জনপ্রিয় খাবার?
উত্তর : ম্রো জনগোষ্ঠীর।
৩১. ম্রো মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম কী?
উত্তর : ওয়াংলাই।
৩২. কত বছর বয়সে ম্রো ছেলে-মেয়েদের কান ছিদ্র করা হয়?
উত্তর : তিন বছর বয়সে।
৩৩. ম্রোরা কোন অঞ্চলে বসবাস করে?
উত্তর : বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
৩৪. ত্রিপুরারা বাংলাদেশের কোন সীমান্ত ঘেঁষে বসবাস করে?
উত্তর : মিয়ানমার।
৩৫. বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস?
উত্তর : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে।
৩৬. ‘ককবরক’ ও ‘উমেই’ কাদের ভাষা?
উত্তর : ত্রিপুরাদের।
৩৭. ত্রিপুরা ভাষায় ‘দফা’ মানে কী?
উত্তর : দল।
৩৮. সমাজে ত্রিপুরারা কীভাবে বাস করে?
উত্তর : দলবদ্ধভাবে বাস করে।