৩০ জুলাই, ২০১৮ ০৫:২৫

সিলেটে নতুন রেকর্ড রচিত হবে নাকি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা?

অনলাইন ডেস্ক

সিলেটে নতুন রেকর্ড রচিত হবে নাকি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা?

১৮৭৮ সালে পৌরসভা হিসেবে সিলেট শহরের যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নিত হয় ১২৪ বছর বয়সী সিলেট পৌরসভার। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিলেট পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতাটি হচ্ছে, পৌরসভা চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়ররা সব সময় তাদের আসন হারাতে হয়েছে নিজেদের অধীনস্থ কমিশনার ও কাউন্সিলরদের কাছে। কমিশনারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া পৌর চেয়ারম্যানরা পরবর্তীতে আর কখনো বিজয়ী হয়ে পুনরায় ফিরতে পারেননি পৌরসভার শীর্ষ চেয়ারে।

পৌরসভার ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এখন পর্যন্ত রয়েছে অব্যাহত। সিটি করপোরেশনের প্রথম পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদের অধীনে কাউন্সিলর ছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। পরে কামরানকে পরাজিত করে মেয়র হন আরিফ। এবারের নির্বাচনেও কামরান ও আরিফ মেয়র প্রার্থী। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কামরান কি এবারও হার মানবেন, নাকি জয়ী হয়ে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন-তা নিয়েই চলছে নানা আলোচনা।

১৯৭৩ সালে কামরানের নির্বাচনী রাজনীতি শুরু। ওই সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তখন পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল। এ দফায় দায়িত্ব পালন করে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান কামরান। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনেও পৌর চেয়ারম্যান হন বাবুল। দেশে ফিরে ১৯৮৩ সালে ফের নির্বাচন করে কমিশনার হন কামরান, চেয়ারম্যান হন এডভোকেট আ ফ ম কামাল। ১৯৮৮ সালে কামরান আবারও কমিশনার হন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেই কামাল।

১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই সময় তার সাথে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বাবরুল হোসেন বাবুল ও আ ফ ম কামাল। এই দুজনের অধীনে পূর্বে কমিশনার ছিলেন কামরান। তবে বাবুল ও কামাল দুজনকেই পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কামরান। 

সিটি করপোরেশন হিসেবে সিলেট মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মেয়র পদে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে আ ফ ম কামালও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু এখানেও কামালকে পরাজিত করে মেয়র হন কামরান। ২০০৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কামরান বিজয়ী হন, পরাজয় বরণ করেন কামাল।

বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৩ সালে সিটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখন মেয়র পদে ছিলেন কামরান। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কামরানকে পরাজিত করেন আরিফ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কামরান যাদের অধীনে কমিশনার ছিলেন, পরবর্তীতে তাদেরকে পরাজিত করে তিনি পৌর চেয়ারম্যান হন। 

কামরানের অধীনে আরিফ কাউন্সিলর ছিলেন, পরবর্তীতে কামরানকে পরাজিত করেই মেয়র হন আরিফ। এটাও দেখা যাচ্ছে, যেসব পৌর চেয়ারম্যান নিজের পূর্বের অধস্থন (কমিশনার) ব্যক্তির কাছে পরাজয় বরণ করেন, সেসব চেয়ারম্যান আর কখনোই এক সময়কার ওই অধস্থন ব্যক্তিকে পরাজিত করতে পারেননি। এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে সিলেট পৌরসভায় বাবুল ও কামাল দু’বার করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি করপোরেশনে দু’বার মেয়র হন কামরান।

সিলেট সিটির এবারের নির্বাচনে এ বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে। ইতিহাসের সেই ধারাবাহিকতা যদি রক্ষা পায়, তবে এবারও আরিফের কাছে কামরানের পরাজয় বরণের কথা। এক্ষেত্রে আরিফও দু’বারের মেয়র হবেন। আর কামরান যদি আরিফকে পরাজিত করতে পারেন, তবে নতুন ইতিহাস রচিত হবে। শেষপর্যন্ত কি হয়, তা জানতে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করা বিকল্প নেই।


বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর