জ কাপুরের কিশোর-কিশোরীর প্রেমময় আবেগঘন ‘ববি’ সিনেমাতে উপমহাদেশের দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন ডিম্পল কপাড়িয়া। মোহময়ী রূপ নিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে এই নায়িকা যৌনতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। সেটি ১৯৭৩ সালের ঘটনা। সত্তর ও আশির দশকে সিনে দর্শক পাগলরা ডিম্পল কপাড়িয়ার প্রেমে পড়েননি, এ কথা বললে ভুল হবে। ববিখ্যাত নায়িকা ডিম্পল সেই ছবিতে বেশকিছু খোলামেলা সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। গুজরাটি ব্যবসায়ী চুন্নিভাই কপাড়িয়া ও বেটি দম্পত্তির মধ্যে ডিম্পল সবার বড়। অকাল প্রয়াত ছোটবোন সিম্পল কপাড়িয়াও সিনেমার অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৮ জুন জন্ম নেওয়া ডিম্পল এখন ৬৩ তে পা দিয়েছেন। তবুও এখনো তিনি অন্যরকম আকর্ষণীয়। এখনো তার রূপের আলোয় ধূসর করে দিতে পারেন বলিউডের সেরা অভিনেত্রীদের।
তিনি যখন রাজেশ খান্নার সঙ্গে ববি সিনেমা করেন তখন সেই ছবির আরেক নায়ক ঋষি কাপুরও তার প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু মেগাস্টার রাজেশ খান্নার জন্য যখন নায়িকারাই নন, সুন্দরীদের হৃদয়েও প্রেমের ঝড় বইছিল। রাজেশ খান্না ষাটের দশকের শেষ দিকে ফ্যাশন ডিজাইনার ও অভিনেত্রী অঞ্জু মাহেন্দ্রর সঙ্গে পরিচয় থেকে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। সেই প্রেমের স্থায়িত্ব ছিল সাত বছর। প্রেমে বিচ্ছেদ এলে ১৭ বছর তাদের মধ্যে কোনো কথা বিনিময় হয়নি। কিন্তু সেক্সসিম্বল ডিম্পলের মোহনীয় রূপ রাজেশ খান্নার মন থেকে মুছে দেয় তার নাম। তিনি প্রেমে পড়েন কিশোরী ডিম্পলের। আর ষোড়শী ডিম্পল আগেই প্রেমে পড়ে বসেছিলেন বলিউড স্টার রাজেশ খান্নার। ডিম্পল অনেক নার্ভাস ছিলেন হৃদয়ের আকুলতা প্রকাশ করতে গিয়ে। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়-আতঙ্কও ছিল মনে। কিন্তু জীবনের প্রথম প্রেম কিশোরীর বাঁধভাঙা মন দমিয়ে দিতে পারেনি, যখন প্রকাশ করলেন তখন দেখা গেল রাজেশ খান্না তার প্রেমে ডুবেই আছেন। রাজেশ তখন বয়সে ডিম্পলের ১৫ বছরের বড়। কিন্তু দুর্নিবার প্রেমের আকর্ষণ বয়সের ব্যবধান তুচ্ছ করে দিল। ববি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগেই দুজন বিয়ে করে বসলেন। সমালোচকরা বললেন, সবার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রাজেশ খান্না ডিম্পলকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর মুম্বাইয়ের জুহুতে ‘হরাইজন হোটেলে’ ধুমধাম করে বিয়ের সংবর্ধনা হলো নব দম্পত্তির। মধুচন্দ্রিমা করতে উড়ে গেলেন ইউরোপে।
কিন্তু সিনেমায় এসেই যে ডিম্পল কাঁপিয়ে দিলেন সিনেমাজগৎ, ঝড় তুললেন দর্শক হৃদয়ে সেই তিনি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বলিউডে শক্ত আসন নেওয়ার সম্ভাবনাকে পায়ের নিচে ফেলে দিয়ে অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। পারিবারিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা রাজেশ খান্নার অমতকে উপেক্ষা করতে পারেননি বলেই তিনি সিনেমা ছেড়ে গৃহসুখে বাঁধা পড়ে থাকতে চাইলেন। ততদিনে তাদের ঘরে দুই কন্যা টুইঙ্কল আর রিকি খান্না এসে গেছে। বিয়ের পর দীর্ঘ ১২ বছর অভিনয় না করা ডিম্পল ১৯৮২ সালে বিয়ের নয় বছরের মাথায় স্বামীর সংসার ছেড়ে ফিরে যান বাবার বাড়িতে। ১৯৮৫ সালে সিনেমায় ফিরে এসে পেন্ডুরার বাক্স খুলে দেন তিনি। বললেন, রাজেশ খান্নাকে বিয়ে করা তার জীবনের এক মস্ত বড় ভুল। এমনকি তিনি আরও বললেন, সেই দাম্পত্য জীবন ছিল নরক যন্ত্রণার। এক কথায় রাজেশ খান্নার সঙ্গে বিবাহিত জীবনে তিনি নরকে বাস করছিলেন। তিনি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ও রাজেশ যখন বিয়ে করেন তখনই গৃহজীবনের সুখের মৃত্যু ঘটে।
চলচ্চিত্রে ফের ফিরে এসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাগর’ ও ১৯৭৩ সালের ববি চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। আশির দশকে বলিউড পর্দায় যৌনতার প্রতীক থেকে বেরিয়ে এসে অভিনয়গুণে নিজেকে শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। মজার ঘটনা, ববি চলচ্চিত্রের অধিকাংশ দৃশ্যই রাজেশ খান্নাকে বিয়ে করার পর ধারণ করা হয়েছিল। আর রাজেশ খান্নার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ কখনো ঘটেনি। মানবজীবন এমনিতেই রহস্যময়। এর মধ্যে হয়তো সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দী নায়ক-নায়িকাদের মন আরও বেশি রহস্যে ভরপুর।
রাজেশ খান্নার সঙ্গে নরকে বাস করা ডিম্পলের সুখ মরে গেলেও প্রেমের শেষ চিহ্নটুকু মুছে যায়নি। তাই রাজেশ খান্না থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে পারেননি। ২০১০ সালে দুজনের মধ্যে ফের মিটমাট হয়ে যায়। রাজেশের শেষ সময়ে ডিম্পল তার কাছেই ছিলেন। রাজেশ খান্না যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন; তখন ডিম্পল তার হাত শক্ত করে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘রাজেশ আমার দুই সন্তানের বাবা, আমার জীবনে তার গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্ব আমার জীবনে কখনো শেষ হবে না।’
দ্বিতীয় পর্বে চলচ্চিত্রে ফিরে আসার পর ‘কাশ, দৃষ্টি, লেকিন, রুদালি’র মতো চলচ্চিত্র তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়। নব্বই দশকে গরদিশ, ক্রান্তিভীরুর মতো সিনেমায় মনপ্রাণ উজাড় করে অভিনয় করেছেন ডিম্পল। ববি দিয়ে তার ছবি বক্স অফিস যেমন হিট করেছিল, তেমনি আশি ও নব্বই দশকের ছবিগুলোও দর্শকহৃদয় জয় করেছিল। ১৯৯৩ সালে রুদালির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ২০০১ সালে আমির খানের সিনেমা ‘দিল চাতা হ্যায়ে’তে চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়।
ডিম্পল বলিউডের সেই নায়িকা, যিনি বলিউড কাঁপানো বাবাদেরও নায়িকা, তাদের ছেলেদেরও নায়িকা হয়ে সাফল্য কুড়িয়েছেন। বিনোদ খান্নার সঙ্গে ‘খুনা ক্য কর্জ ও ইনসাফ’ ছবিতে জমিয়ে অভিনয় করেন। দিল চাতা হ্যায়ে সিনেমাতে অক্ষয় খান্নার বিপরীতে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হন। ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে ‘শেহাজাদে, বাতোয়ারা’সহ একাধিক সিনেমায় যেমন পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছেন, তেমনি তার পুত্র সানি দিওলের সঙ্গে ‘নরসিমা, অর্জুন, আগ কা গোলা’র মতো সিনেমায় আবেগগণ দৃশ্যে দেখা যায় তাদের। এসব সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডপাড়ায় চাউর ছিল যে, সানি দিওলের সঙ্গে তার প্রেম এতটাই জমে উঠেছিল যে, দুজনে দীর্ঘদিন লিভ-টুগেদারও করেছেন। ২০১০ সালে সিনে সাংবাদিক দিনেশ রাহেজা মন্তব্য করেছিলেন, রাজেশ ও ডিম্পলের মধ্যকার তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক অনেকটা চোখে ধুলো দেওয়ার মতো রহস্যময়। তাদের অনেক পার্টিতে একসঙ্গে যেমন দেখা গেছে, তেমনি ’৯০ সালে কংগ্রেস প্রার্থী রাজেশ খান্নার নির্বাচনী প্রচারণায়ও ডিম্পল অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া রাজেশ খান্নার চলচ্চিত্র ‘জয় শিব শংকর’-এ তিনি কাজ করেছেন। ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আবারও বিয়ে করছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে ডিম্পল বলেছিলেন, আমি বর্তমান অবস্থায় সুখী; কেন পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হব? একবারই যথেষ্ট হয়েছে। তার কন্যারাও অভিনয় জগতে এসেছিলেন, তেমন প্রতিষ্ঠা পাননি। বড় মেয়ে টুইঙ্কেল খান্না নায়ক অক্ষয় কুমারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।
ডিম্পল শৈশব থেকেই সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্ন দেখতেন। ছোটবেলাতেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার মন সিনেমাপাগল। তাই ১৩ বছর বয়সে তিনি রাজকাপুরের নজর কাড়েন। ‘অভিমান’ সিনেমায় জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে যৌথভাবে ফিল্ম ফেয়ারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি তার অভিনয় জগতের সাফল্যের জন্য রাজকাপুরের কৃতিত্বকে বরাবর বড় করে তুলেছেন। তার একটি সংলাপ, ‘মুজছে দোস্তি করোগে’ দর্শকদের মুখে মুখে ঠাঁই পেয়েছিল। ২০০৮ সালে রেডিফডটকম চলচ্চিত্র তার অবদানকে হিন্দি চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বকালের চতুর্থ সেরা অভিষেক লাভকারী অভিনেত্রী রূপে চিত্রিত করে। বলিউড কাঁপিয়ে দেওয়ার পর ডিম্পলের আধুনিক চুলের ধরন, ব্লাউজের ফ্যাশন ভারতের ওই সময়কার তরুণীরা নিজেদের জীবনে লুফে নেয়। তার গুলকা ছিটের পোশাকগুলো ববি প্রিন্ট নামে খ্যাতি পায়। দ্য সিনেমাটিক ইমেজিনেশন গ্রন্থের লেখক জ্যোতিকা বির্দির মতে, কপাড়িয়ার ট্র্যাজিক ঘটনা যেকোনো হিন্দি নায়িকার তুলনায় ভিন্নধাঁচের। তিনি তার প্রত্যেক অসফলতাকে সফলতার দিকে টেনে আনতে সচেষ্ট ছিলেন। এইতবার, কাশ ও দৃষ্টি চলচ্চিত্রে তিনি তার চরিত্র ভূমিকায় নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে সূচারূরূপে তুলে ধরেছেন।
আমাদের দাম্পত্য জীবন যদি নরক যন্ত্রণার হয়ে থাকে এবং দীর্ঘনির্বাসনের পর তার সফল প্রত্যাবর্তন দেখে এ কথা বলাই যায়, হতাশা ও বিষাদ তাকে পরাজিত করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো নরকের আগুনে পুড়েই বলিউড কাঁপানো নায়িকা ডিম্পল কপাড়িয়া। এখনো বলিউড দুনিয়ার চিরসবুজ অমর প্রেমের ছবির কথা এলে ববি সিনেমার নাম আসে, আর ডিম্পল কপাড়িয়া যার প্রতিমা।
বলিউড থেকে হলিউডে পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই। তবে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো কেউ আয়োজন করে বসতে না পারলেও হলিউড সফর থেমে যায়নি অনেকের। এবার হলিউড সফরের তালিকায় নাম লেখালেন বারবার চলচ্চিত্রে নতুন চেহারায় আবির্ভূত হওয়া ডিম্পল কপাড়িয়া। ট্যানেট ছবির প্রস্তাব গ্রহণ করে ষাটোর্ধ্ব নায়িকা ডিম্পল এখন হলিউডে। ক্রিস্টোফার নোলানের এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। শুটিং চলছে সেখানে। ডিম্পল কপাড়িয়ার ছবি মানেই ভালো ছবি। আর তিনি দর্শকের তুমুল কৌতূহল ও আকর্ষণের কেন্দ্রে। কখনো কোথাও তার অভিনয়ের দাপট ধূসর হয়নি। এবার তাকে ঘিরে হলিউড স্পাই থ্রিলার ছবিতে অভিনয় করা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে। সেই ছবির শুটিং সেট থেকে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ল নেট দুনিয়ায়। এতে দর্শকের কৌতূহল আরও বেড়ে গেছে।
রাজেশ খান্না বলিউড চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। প্রথমে তাকে সুপারস্টার তারপর মেগাস্টার, একসময় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সব শেষে সফল রাজনীতিবিদের তকমা এনে দেয়। জন্মেছিলেন ২৯ ডিসেম্বর ১৯৪২ সালে। আর মৃত্যু হয় ১৮ জুলাই, ২০১২ সালে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালে টানা ১৫টি বক্স অফিস হিট চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন, যেটি বলিউডের ইতিহাসে রেকর্ড হিসেবে এখনো বহাল। বিখ্যাত পরিচালক শক্তি সামন্তের ‘আরাধনা’ চলচ্চিত্রে সহজাত অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিলেন। এ ছাড়াও তার ‘আনন্দ, কাঠি পতঙ্গ, সফর, সাচা-জুটা, রাজা-রানী, বাওয়ার্চি, অমর প্রেম’ উল্লেখযোগ্য। তিনি পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত। ১৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার ১২৮টিতেই ছিলেন নায়কের ভূমিকায়। ১৪ বার মনোনয়নসহ তিনবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন, ২৫ বার মনোনয়ন এবং চারবার বিএফজে সেরা অভিনেতা পুরস্কার পান। ফিল্ম ফেয়ারের বিশেষ পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন একক সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়ক। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের অভিনেতা ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস মনোনয়নে নয়াদিল্লির একটি আসন থেকে উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করে লোকসভায় গেলে এ সময় কোনো সিনেমা করেননি। সংসদ থেকে বিদায় নিলেও ২০১২ সালে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। লীলাবতি হাসপাতালে দফায় দফায় ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে ১৮ জুলাই মুম্বাইয়ের নিজ বাংলো ‘আশীর্বাদে’ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বলিউডের ভিতরে-বাইরে গভীর শোকগাথার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ডিম্পল কপাড়িয়ার জীবনের প্রথম প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী রাজেশ খান্নার সংসার ছেড়ে গেলেও যেমন সম্পর্ক ছিন্ন করে ডিভোর্স দিতে পারেননি, ফের ফিরে এসেছিলেন রাজেশের মৃত্যুর আগে; তেমনি রমণীমোহন রাজেশ খান্না বারবার প্রেমে জড়ালে ডিম্পল কপাড়িয়া তাকে ছেড়ে গিয়ে সানি দেওলের সঙ্গে প্রেমে ভাসলেও বিচ্ছেদের কাগজে সই করার কথা ভাবেননি। রহস্যময় মনোজগতে মৃত্যুর আগে ডিম্পল ফিরে এলে দরজা খুলে দিয়েছিলেন রাজেশ খান্না। যেন দুজনের সম্পর্ক তিক্ততার নরক যন্ত্রণা হয়ে উঠলেও উভয়ের জন্য উভয়ের দরজা সারাক্ষণ খোলা ছিল। আশির দশকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী টিনা মুনিমের সঙ্গে রাজেশ খান্না প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। টিনা যতটা সিরিয়াস ছিলেন রাজেশ খান্নার জন্য, রাজেশ খান্না সেখানে হয়তো ডিম্পলের ওপরে কাউকে ঠাঁই দিতে পারেননি। তাই টিনা মুনিম যখন বিয়ের জন্য বারবার চাপাচাপি করছিলেন, রাজেশ খান্না তখন নাকচই করেননি; রীতিমতো অগ্রাহ্য করে বসলেন। ভগ্ন হৃদয়ে টিনা মুনিম চলচ্চিত্র জগৎ ছেড়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া চলে যান।
রাজেশ-ডিম্পলের বড় ইন্টিরিয়র ডেকোরেটর ও সাবেক অভিনেত্রী টুইঙ্কেল খান্না যেমন অভিনেতা অক্ষয় কুমারের সংসার করছেন তেমনি ছোট মেয়ে রিঙ্কি খান্নাও অভিনয় জগৎ ছেড়ে লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংকের কর্মকর্তা সমীর শরণকে বিয়ে করে সংসার করছেন। রাজেশ খান্না ডিম্পল ফিরে আসার আগ পর্যন্ত ২০০৪ সাল থেকে অনিতা আদভানি নামের এক নারীর সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু মরণে প্রমাণ করেছেন ডিম্পলই রাজেশ খান্নার ছিলেন।