বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অতিথি সংকটে ‘টকশো’

আলী আফতাব

টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘টকশো’। শুধু প্রাইভেট টিভি নয়, বিটিভিও টকশো করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক টকশোর মান পড়ে গেছে। অতিথি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও অনেকে মান রক্ষা করতে পারছেন না। অনেক রাজনৈতিক কর্মীকে পরিচয় দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে। আবার অনেকের চেহারা দেখলে বোঝা যায় তারা তদবির করে টকশোতে অংশ নেন। অনেক উপস্থাপক তার মতো করে অতিথি এনে দর্শকদের মধ্যে বিরক্ত তৈরি করে। এতে করে টকশোগুলো সমালোচনায় পড়ছে। আবার দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ বিষয়েও বিতর্ক রয়েছে। যে বিষয়ে যিনি জানেন না, তাকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে টকশোতে আনা হয়। মাঝে মাঝে দেখা যায়, অনেক আলালের ঘরের দুলালকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে টকশোতে আনা হয়। এতে টকশোর মান ক্ষুণ্ন  হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে উপস্থাপকের অবস্থান। আবার অনেক টকশোতে একতরফা রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার হয়। টকশোর বর্তমান বিতর্ক নিয়ে কয়েকজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন আলী আফতাব

 

মনজুরুল আহসান বুলবুল

এডিটর ইন চিফ, এটিএন বাংলা

আমি এটিকে অতিথি সংকট বলব না। এটিকে আমি পরিকল্পনার সংকট বলব। কারণ কোনো ভালো পরিকল্পনা ছাড়া ভালো কোনো অনুষ্ঠান সাজানো যায় না। এখন রাত ১২টার টকশোর জন্য অতিথি যদি ওই দিন রাত ৮টায় ঠিক করতে হয়, তাহলে অতিথির সংকট হবেই। কারণ সবারই কাজ আছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে অতিথি জোগার করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা যোগ্য লোকদের আর পাই না। কিন্তু ভালো পরিকল্পনা থাকলে, আর এই সমস্যাটি হবে না।

সব মিলিয়ে ভালো পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

 

আ জ ম শফিউল আলম ভুঁইয়া

শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এটি কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু সম্প্রতি এই সংকটটি আমাদের সবারই চোখে পড়ছে। আমার কাছে মনে হয় এটি টিভি চ্যানেলগুলোর একটি পলিসি। তারাই নির্বাচন করে কোন বিষয়ের জন্য কে কথা বলবে। এতে করে অনেক সময়ে একই মুখ ঘুরে ফিরে টিভি পর্দায় আসছে। দর্শক এই বিষয়গুলো অনেক সময় পছন্দ করে না। আমার মনে হয় এতে কিছু ভিন্নতা আনা প্রায়োজন। মাঝে মধ্যে শোনা যায়, টকশোগুলোতে সরকারের প্রভাব থাকে। কিন্তু আমার বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্যটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমি মনে করি, যোগ্য লোককেই কথা বলতে দেওয়া উচিত।

সামিয়া জামান

সিইও, চ্যানেল একাত্তর

এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকটা উভয় সংকটে আছি। বিশ্বের অনেক টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখবেন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ থাকে। ওই বিষয়ে বলার জন্য তাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে করে মনে হতে পারে একই মুখ ঘুরে ফিরে বারবার টিভি পর্দায় আসছে। অন্যদিকে, যদি নতুন কোনো মুখ আনা হয় দর্শক না চেনার অযুহাতে মুখ ফিরিয়ে নেয় টিভি থেকে। সব মিলিয়ে একটি উভয় সংকটে আছি আমরা। কিন্তু আমাদের নতুন অভিজ্ঞ বক্তা তৈরি করতে হবে। কারণ আমরা জানি দর্শকদের নতুন কিছু দিতে না পারলে তাদের ধরে রাখা যাবে না।

 

জিল্লুর রহমান

উপস্থাপক, তৃতীয়মাত্রা

এই বিষয়টি কিছুটা সত্য। এর কারণ হচ্ছে। অনেক সময় সরকার দলের লোকজন টকশোগুলোতে আসতে চায় না। কারণ কোন কথা থেকে কোন কথা বলে ফেলবেন, তাতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এতে করে সরকার দলের লোকজন টকশোতে আসতে চায় না। আর বিরোধী দলের তেমন কেউ নেই। আর যারা আছেন তারাও টকশোগুলোতে আসতে চান না।

অনেকটা এই কারণেই টকশোগুলোকে অতিথি সংকট মনে হচ্ছে। আমি  মনে করি নতুন বক্তা আমাদের তৈরি করতে হবে। যারা টকশোগুলোতে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারবে।

রোবায়েত ফেরদৌস

শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমি এই বিষয়টিকে বিশ্বাস করি। কারণ সরকার আমাদের ওপর একটি অলিখিত চাপ তৈরি করে রেখেছে। তারা ঠিক করে দিচ্ছে টকশোগুলোতে কে কে আসবে আর কে কে আসবে না। এমনি তারা ঠিক করে দিচ্ছে টকশোগুলোতে কী কী বলা যাবে আর কী কী বলা যাবে না। এ ভাবে কিন্তু একটি বিষয় ভিত্তিক নিরপেক্ষ টকশো চালানো যায় না। একটি গণতান্ত্রিক সরকার তার সমালোচনা সহ্য করতে হয়। আর এই সমালোচনাগুলো করবে দেশের বিশেষজ্ঞ মানুষরা। আমরা সবাই জানি সরকার তথ্য লুকায়। আর লুকানো তথ্যগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব হচ্ছে মিডিয়ার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর