শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

টালিগঞ্জের রুপালি পর্দার টানে...

আলাউদ্দীন মাজিদ

টালিগঞ্জের রুপালি পর্দার টানে...

জয়া আহসান, দিলরুবা ইয়াসমিন রুহি, বিদ্যা সিনহা মিম

ওপার বাংলায় ঢাকার নায়িকাদের মিশন নতুন কিছু নয়। ১৯৭৪ সালে ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করেন। এটি ছিল এ বাংলার কোনো নায়িকার প্রথমবারের মতো ওপারের রুপালি পর্দায় ডানা মেলা। ওই ছবিতে অভিনয় করে ববিতা আন্তর্জাতিক শিল্পীর খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর আশির দশকে রোজিনা কাজ করলেন শক্তি সামন্তের ‘অন্যায় অবিচার’ ছবিতে। প্রমোদ চক্রবর্তীর ‘বিরোধ’ ছবিতে অভিনয় করেন শাবানা। এ দুই ছবিতে অবশ্য ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমাদের শিল্পী নতুনও। এরপর তেমনভাবে এপারের কোনো নায়িকাকে আর ওপারের ছবিতে পাওয়া যায়নি। তবে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত গৌতম ঘোষের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিতে কাজ করেন চম্পা। এতে অভিনয় করে চম্পা পুরস্কৃতও হয়েছেন।

বর্তমান সময়ে আবার কলকাতার ছবিতে অভিনয় করেছেন ঢাকার তিন নায়িকা। তবে এখনকার নায়িকারা সেখানে খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারছেন না। এই নায়িকারা হলেন- জয়া আহসান, বিদ্যা সিনহা মিম এবং দিলরুবা ইয়াসমিন রুহী।

জয়া আহসান প্রথম অভিনয় করেন টালিগঞ্জের নির্মাতা অরিন্দম শীল নির্মিত ‘আবর্ত’ ছবিতে। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। পারিবারিক গল্পের এ ছবিটির কাহিনী আবর্তিত হয় মূলত জয়ার চরিত্রটিকে কেন্দ্র করেই। এতে অভিনয় দেখানোর যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আহামরি গোছের কাজ দেখাতে ব্যর্থ হন জয়া। ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০১৩-তে এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নতুন নায়িকার নমিনেশন পেলেও পুরস্কারের ট্রফি আর ছুঁয়ে দেখতে পারেননি তিনি। মানে নতুন নায়িকা হিসেবে কলকাতার দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হন তিনি। ১৬ অক্টোবর কলকাতায় মুক্তি পায় জয়ার দ্বিতীয় ছবি সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনী’। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে নির্মিত এ ছবিতে মুসলমান নারী ‘রুবিনা’র চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া। ছবিটি মুক্তির পর সব মহল থেকেই এটি ব্যাপক প্রশংসা পায়। বলিউড নির্মাতা মহেশ ভাট এ ছবি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে, তিনি ‘লাকির’ নামে হিন্দি ভার্সনে ছবিটি রিমেকের ঘোষণা দেন। ছবির পরিচালক থেকে পাত্র-পাত্রীদের প্রায় সবাই হিন্দি রিমেকে কাজ করবেন জানালেও জয়ার ব্যাপারে খোলসা করে কিছু বলেননি মহেশ ভাট। বরং শোনা যাচ্ছে ‘রুবিনা’ মানে জয়া অভিনীত চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন বিদ্যা বালান। সে ক্ষেত্রে চরিত্রটি আরও বড় হবে। কারণ এ ছবিতে রুবিনা চরিত্রটি ‘সখির দলের সদস্যে’র মতো। তাই জয়া বাংলাদেশে বেশ সমালোচিত হচ্ছেন। এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে অবশেষে এমন একটি চরিত্র! যে চরিত্রে করার তেমন কিছুই ছিল না। অনেকে তো বলেই বসেছেন, কলকাতার ছবির প্রতি প্রেম থেকেই জয়া এমন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের কোনো ছবিতে এমন চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে তিনি নিঃসন্দেহে ফিরিয়ে দিতেন। তাই জয়ার এমন সিদ্ধান্তে অবাক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কর্মীরা।

ঢাকার আরেক নায়িকা দিলরুবা ইয়াসমিন রুহী অভিনীত একটি ছবি মুক্তি পায় চলতি বছর। এটি হলো মহুয়া চক্রবর্তী পরিচালিত ‘গ্লামার’। এতে নাম ভুমিকায় অর্থাৎ মডেল চরিত্রে অভিনয় করেন রুহী। ছবিটি কলকাতায় মোটেও সাড়া জাগাতে পারেনি। সেখানকার দর্শক গ্রহণযোগ্যতা লাভে ব্যর্থ হয়েছেন এপারের রুহী।

ঢালিউড নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমও পা রাখলেন টালিগঞ্জে। তিনি অভিনয় করলেন রাজা চন্দ পরিচালিত ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে। এতে তার নায়ক টালিগঞ্জের সোহম। যদিও এটিকে প্রথমে ভারত-বাংলার যৌথ ছবি বলা হয় কিন্তু পরবর্তীতে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কারণ প্রথমত ভারত ও ব্যাংককে এ ছবির শুটিং হলেও বাংলাদেশে এর নির্মাণ কাজ একেবারেই হয়নি। দ্বিতীয়ত ছবিটির প্রকাশিত ট্রিজারে পরিচালক হিসেবে শুধু কলকাতার রাজা চন্দের নাম রয়েছে। এখানকার নির্মাতা কিবরিয়া লিপুর নাম নেই। এমনকি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে শুধু কলকাতার দাগ ক্রিয়েটিভের নাম রয়েছে। নেই ঢাকার কিবরিয়া ফিল্মস। এ কারণে এটিকে কলকাতার ছবিই বলছেন সবাই। ছবিটি আসন্ন কালীপূজায় কলকাতায় মুক্তির ঘোষণা এলেও এখনো বাংলাদেশে মুক্তির তারিখ নিশ্চিত হয়নি। এ সম্পর্কে কলকাতার পত্রপত্রিকার প্রকাশিত খবরে সোহমের গুণকীর্তন করলেও আমাদের মিমকে নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। তাহলে কী মিমও কলকাতার ছবিতে ব্যর্থ? এ প্রশ্নের জবাব পেতে ছবিটি মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর