শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ [বিপিএল]

তারার আলোয় ঝলমলে স্টেডিয়াম

জাকারিয়া সৌখিন

তারার আলোয় ঝলমলে স্টেডিয়াম

অপেক্ষা- ঘড়ির কাঁটা ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। কিন্তু ডান্স ম্যাজিশিয়ানের দেখা নেই। কাঁটা গিয়ে যখন রাত দশটার দিকে পৌঁছাল, তখনই ঘোষণা এলো তিনি মঞ্চে আসছেন। এরপর আকাশে-বাতাসে শুধু একটাই ধ্বনি- ঋত্বিক... ঋত্বিক... ঋত্বিক...। মঞ্চে এলেন ছয় ফুট উচ্চতার সেই তিনি। এসেই মাইক্রোফোনে সেই কণ্ঠ, ‘কেমন আছো বাংলাদেশ? আমি ক্রিকেট লাভার। বিপিএলের সঙ্গে আমিও আছি।’

কথা শেষ, ডান্স শুরু। টানা আধা ঘণ্টা তিনি ডান্স দেখিয়ে মুগ্ধতায় স্তব্ধ করে দিলেন পুরো স্টেডিয়াম।

গতকাল মিরপুর স্টেডিয়াম ছিল তারার আলোয় ঝলমলে। চোখ ধাঁধানো আয়োজনে সূচনা হয় বিপিএল-এর তৃতীয় আসর। আর পুরো আয়োজনে আলো ছড়ায় এলআরবি, চিরকুট, মমতাজ, সাদিয়া ইসলাম মৌ এবং বলিউডের ‘চিতিয়াকালাইয়া’ সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও সংগীতশিল্পী কে কে। তারার এই তালিকায় ঋত্বিক নেই। কারণ গতকাল তিনি ছিলেন ‘চাঁদ’। মূল আকর্ষণকে তারা নয়, চাঁদ বলাই শ্রেয়।

 

গতকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। শুরুতেই নৃত্য।  নৃত্যে মঞ্চে আলো ছড়ান সুন্দরীতমা সাদিয়া ইসলাম মৌ। বাংলার সংস্কৃতি তিনি তুলে ধরেন। মৌয়ের নৃত্যে এখনো সেই অতীতের আবেশ। সময় গড়িয়েছে বহুদূর, কিন্তু মৌয়ের ছন্দে কোনো মরীচা ধরেনি। চিরচেনা ছন্দে চমকের সূচনা হয়।

মৌ পর্ব শেষ। মঞ্চে আসেন গিটার জাদুকর। নাম তার আইয়ুব বাচ্চু। সঙ্গে পুরো ব্যাটালিয়ন। মানে এলআরবি। মঞ্চে দাঁড়িয়েই চিরতারুণ্যমাখা ভরাট কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘সময় এখন ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে ওঠার’।

 

সত্যি সত্যিই শুরু হয়ে যায় উন্মাদনা। সদ্য গোঁফ গজানো বালকটি তো বটেই, ঝিম মেরে বসে থাকা বয়স্ক মানুষটির মনেও উঁকি দেয় উচ্ছ্বাস। আর এর মধ্য দিয়েই ডানপক্ষ সমান সমান বামপক্ষের মতো আবারও প্রমাণিত হয়, সব নদীতে ভাটা পড়ে, আইয়ুব বাচ্চুর সুর-নদীতে  ভাটা বলে কিছু নেই। তাই তার ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘সেই তুমি’ গানের টানে শুরু হয় বাঁধভাঙা উল্লাস।

এলআরবি চলে যাওয়ার পর, স্রোতে ভেসে যাওয়া শ্রোতাদের নিজ নিজ অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ছিল ভিন্ন স্বাদের কিছু। আর ভিন্ন স্বাদের জন্য চিরকুটের থেকে ভালো আর কী হতে পারে! না, চিরকুটই সঠিক পছন্দ। দর্শক পেয়েছেও তাই। আর চিরকুটও মঞ্চে এসে কণ্ঠ ছাড়ল, ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’। একটু আগে যেই দর্শক বাঁধনহারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন তাদের চোখে তখন দেশপ্রেমের চিকচিকে ঝিলিক। দেশপ্রেমে জাগিয়ে, ভিন্ন স্বাদে ভাসিয়ে চিরকুট একে একে গেয়ে যায়- ‘এই শহর জাদুর শহর’, ‘কী অসহায়, একবার ভাবো’, ‘কানামাছি মিথ্যা, কানামাছি সত্য’।

 

 

 

 

 

ধ্রুপদী নৃত্য হলো, এলআরবি ধুন হলো, ভিন্ন স্বাদের চিরকুটও হলো; এরপর? হ্যাঁ, এরপর ফোক সম্রাজ্ঞীর পালা। তিনি মমতাজ। দর্শক যখন ‘লাল্টু ঘটক’ কিংবা ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’র জন্য তৈরি তখন তিনি এসে সুর ধরলেন, ‘বিপিএল ক্রিকেটের ঢেউ লেগেছে/ বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলো...’। একি, মমতাজও ক্রিকেট নিয়ে গাইতে পারে! হ্যাঁ, পারে। শ্রোতারা অবাক হয়ে বুঝতে শিখল, যে কণ্ঠে মাটির ঘ্রাণ, সে কণ্ঠে অভিজাত ক্রিকেট-সংগীত কতটা মায়াময় হতে পারে।

ক্রিকেট-সংগীত গেয়েই মমতাজ ফিরে যান নিজের আপন ভুবনে। গান ধরেন, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘আকাশটা কাঁদছিল ক্যান’, ‘খায়রুন লো’, ‘পাংখা হইলো মন’, ‘পোলা তো নয় যেন আগুনের গোল্লা’।

নিজ শিল্পীদের পরিবেশনা শেষ। অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে সবাই একটু নড়েচড়ে বসলেন। এবার প্রতিবেশী শিল্পীদের পারফরম্যান্স। আর এ পর্ব শুরু করলেন কে কে। যন্ত্রে শোনা ‘কেয়া মুঝে পেয়ার হে’, ‘খুদা জানে’, ‘তুহি মেরি রব হে’ গানগুলো কে কে সরাসরি গেয়ে শোনালেন। মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিলেন বাতাসে। কিন্তু সেই মুহূর্তে ‘চিতিয়াকালাইয়া’র থেকে মুগ্ধকর আর কিছু নেই। সবার উঁকি-ঝুঁকিও সেই দিকে। বিষয়টি বুঝতে পারলেন তিনিও। তাই এসেই একটি উড়ন্ত চুম্বন ফুঁ দিয়ে ভাসিয়ে দিলেন। যুবকেরা কী আর সুস্থ থাকে, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল চুম্বনটি ভাগাভাগি করে নিতে। বলা হচ্ছে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের কথা। রূপের ঝলকের সঙ্গে চমকিত নাচের মুদ্রা মিশিয়ে যে কারিশমা তৈরি করলেন তিনি, তাতেই ভাঙচুর হয়ে গেল বহু পুরুষের হৃদয়।

জ্যাকুলিন নাচলেন এবং নাচালেন। তারপর বিদায় নিলেন। তার বিদায়ে বেদনার সুর ওঠার কথা। কিন্তু না, সুর ওঠে উল্লাসের। কেন, কী কারণে? উত্তরটা সবারই জানা। কারণ সবাই একটি মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষায় আছেন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের নাম ‘ঋত্বিক দর্শন’। হ্যাঁ, ঋত্বিক এলেন, তিনি দেখা দিলেন। আর কী চুপ থাকে স্টেডিয়াম! বালক-বালিকা থেকে শুরু করে বুড়ো-বুড়ি- সবাই উত্তাল উল্লাসে ফেটে পড়েন। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ- সবখানে দিশাহারা উত্তেজনা। বোঝা গেল, ঋত্বিক শুধু নামেই ভারতীয় নায়ক, মূলত তিনি পুরো পৃথিবীর।

ঋত্বিক তার তিনটি ছবির চারটি গানের সঙ্গে ডান্স করেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি ‘কাহোনা পেয়ার হ্যায়’র ‘একপাল কা জিনা’ গানটির তালে তালে তিনি পারফরম্যান্স শুরু করেন। এরপর ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির ‘তেরি মেরি’, ‘ধুম টু’ ছবির ‘ধুমমাচালে’ এবং আবারও ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির টাইটেল গানের সঙ্গে নাচেন। গান চারটি হলেও এর ফাঁকে বেজেছে তার বিভিন্ন জনপ্রিয় ছবির বেশ কিছু গানের মেডলিও।

বিপিএল-এর তৃতীয় আসরের সূচনা পর্ব হলো চোখ ধাঁধানো, হৃদয় কাঁপানো। তাই তো স্টেডিয়াম ফিরতি ঘরমুখো মানুষের চোখে-মুখে লেপ্টে ছিল মুগ্ধতা। এতটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর