সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্র শিল্পীদের পারিশ্রমিক হ্রাসে বিতর্ক

আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্র শিল্পীদের পারিশ্রমিক হ্রাসে বিতর্ক

ব্যবসায়িক মন্দার কবলে পড়েছে চলচ্চিত্র। ব্যবসা বলতে এখন আর কিছুই নেই। লোকসান গুনতে গুনতে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে প্রযোজনা সংস্থা ও সিনেমা হল। চলচ্চিত্রের এই মন্দাবস্থা কাটাতে নির্মাণ ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কমবে শিল্পীদের পারিশ্রমিক ও দৈনিক ভাতা। শোনা যাচ্ছে শীর্ নায়ক শাকিব খানের পারিশ্রমিকের অঙ্ক বেঁধে দেওয়া হবে ৮ লাখ টাকায়। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক সমিতি ও ফিল্ম এডিটরস গিল্ড ভাবছে শিল্পীদের পারিশ্রমিক নির্ধারিত হারে বেঁধে দিলে চলচ্চিত্র ব্যবসার উন্নতি হবে। এ সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করতে আগামী শনিবার শিল্পী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করবে অন্য সমিতিগুলো। শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমালে চলচ্চিত্রের ব্যবসা আদৌ কি চাঙ্গা হবে? এ বিয়ে চিত্রপরিচালক সমিতির সভাপতি বলেন, শিল্পীরা যদি পারিশ্রমিক কমাতে রাজি না হয় তাহলে আমরা নির্মাতারা বিকল্প পথে যাব। প্রয়োজনে বিদেশি ছবি আমদানি করব। তারপরেও সিনেমা হল আর বন্ধ হতে দেব না। সিনেমা হল উদ্বেগজনকহারে কমে গেছে। তাই বেশি ব্যয়ে ছবি নির্মাণ করে মুনাফা দূরে থাক মূল টাকাই ফেরত আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সবার ছাড় দেওয়া উচিত। শিল্পীরা শুধু পারিশ্রমিক কমানো নয়, সময়মতো তাদের শুটিংয়েও আসতে হবে। না হলে শিডিউল ঘাপলায় একদিনের শুটিং তিন দিন করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ অপচয় হয়। এসব দিক বিবেচনা করে শিল্পীরা পারিশ্রমিক হ্রাসে কম্প্রোমাইজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, পারিশ্রমিক হ্রাসের বিয়টি মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এটি শিল্পীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে বেঁধে দেওয়ার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত কোনো চলচ্চিত্র সমিতি আমাদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলাপ করেনি। কেবল কনভেন্স ও কলটাইম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে কাজের সময় দৈনিক ৯ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৮ ঘণ্টা শুটিং ও ১ ঘণ্টা নির্ধারণ হয়েছে ম্যাকআপের জন্য। পারিশ্রমিক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিলে কোনো শিল্পীই তা মেনে নেবে না। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেঁধে দেওয়ার নিয়ম কোনো দেশে নেই। এটি সম্ভবও নয়। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প এবং ব্যবসা বলতে কিছুই নেই তার ওপর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করার কথা বলা হাস্যকর বিয়। এতে এই শিল্পের কোনো উন্নতি হবে না। পারিশ্রমিক নির্ধারণ হয়ে থাকে শিল্পীর ম্যারিট অনুযায়ী। ব্যবসার উন্নতি করতে নয়। তাছাড়া চলচ্চিত্রের মানুষের মধ্যে এখন একতা বলতে কিছুই নেই। থাকলে নকল,পাইরেসি, অশ্লীলতার মতো অবক্য় থাতে না। এখন এই শিল্পে কেউ কারও কথা শোনে না। এসব সমস্যার সমাধান আগে হতে হবে। খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার সুচন্দা বলেন, এসব মেধাহীন উদ্যোগ এই শিল্পে শুধুই অস্থিরতা তৈরি করবে। কোনো উন্নয়ন হবে না। ভালো গল্প ও নির্মাতা নেই। ফলে সিনেমা হল এখন দর্শকশূন্য। তাই আগে সমস্যার মূলে যেতে হবে। শুধু শুধু অবান্তর সিদ্ধান্ত নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি করা কারও কাম্য নয়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ বলেন এ সিদ্ধান্তে এই ব্যবসার কোনো উন্নতি হবে না। পার্শ্ববর্তী দেশেও মুখ্য শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেঁধে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কলকাতায় এক্সট্রা শিল্পী, কলাকুশলী ও সহকারী শিল্পীদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ হয় শিফট অনুযায়ী। মূল শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেঁধে না দিয়ে একটা সীমা বেঁধে দিলেই হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, সংস্কৃতিকে কখনো বাধ্যবাধকতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া যায় না। এটি মন-মানসিকতার ব্যাপার। এমনও সময় ছিল টপ হিরোরা অনেকের কাজ কম কিংবা বিনা পারিশ্রমিকে করে দিয়েছে। হুট করে পারিশ্রমিক হ্রাসের এই সিদ্ধান্ত আরও নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই আগে মন- মানসিকতা বদলানো দরকার। মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক ইফতেখার নওশাদ বলেন, এই সিদ্ধান্ত কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। বড় মাপের শিল্পীরা কখনই পারিশ্রমিক কমাবে না।  যারা নতুন ও যারা অভাবী শিল্পী তারা হয়তো কিছুটা কম্প্রোমাইজ করতে পারে। আমার কথা হলো এসব উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত না নিয়ে সমস্যার মূলে যেতে হবে। আমাদের শিল্পে এখন মানসম্মত নির্মাতা ও গল্পকারের অভাব। তাই ভালো ছবির অভাবে দর্শক সিনেমা হলে আসছে না এবং সিনেমা হল ও প্রযোজনা সংস্থা বন্ধ হচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্প এখন বলতে গেলে কোমায় চলে গেছে। তাই চলচ্চিত্রকারদের বলব এমন শিশুসুলভ আচরণ পরিহার করে সম্মিলিত ভাবে চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করুন।

সর্বশেষ খবর