মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক দলে সাংস্কৃতিক চর্চা

মোস্তফা মতিহার

রাজনৈতিক দলে সাংস্কৃতিক চর্চা

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। আর এই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সহযোগী হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সময়ের প্রয়োজনে এসব সংগঠন মাঠেও নামে। গান, কবিতা ও নাটকের মাধ্যমে জনসাধারণের মনে চেতনা সৃষ্টির চেষ্টা করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই এক বা একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের রয়েছে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। এগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ (জিসাস), জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল (জাসাদ) ইত্যাদি। জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক সংগঠন হচ্ছে : জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী আর কলরব শিল্পীগোষ্ঠী।

জাসদ, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ সব প্রগতিশীল ও বাম রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে পরোক্ভাবে কাজ করছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, খেলাঘর, গণমুক্তি গানের দল ইত্যাদি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ পথনাটক পরিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ আবৃত্তি সংগঠন সমন্বয় পরিদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিদসহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রমে প্রগতিশীল রাজনীতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও আন্দোলন-সংগ্রামে প্রগতিশীল এসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এসব সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা অনেকাংশেই প্রশংসার দাবিদার। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটে’র প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমে এই সংগঠনটি আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালু করে। তখন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শচীন্দ কুমার সরকার। ’৮১ সালে প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কুমকুমকে সভাপতি করে এ সংগঠনটি নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। এরপর থেকে এ সংগঠনটি তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ সংগঠনটির সভাপতি ও অরুণ সরকার রানা হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক।  তারানা হালিমের মতো একজন শৈল্পিক অভিনেত্রী এই সংগঠনটির সভাপতি হওয়ার পরও শুধু মানববন্ধন ও আলোচনা সভা ছাড়া এই সংগঠনটিতে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নবীন কিশোর গৌতম দাবি করেন তার সংগঠনটিই একমাত্র সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়ে সক্রিয়। সরকারি যে কোনো অনুষ্ঠানে একমাত্র তারাই অংশগ্রহণ করে থাকে বলে দাবি করেন গৌতম। ফোরামের সভাপতি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মন্ত্রণালয়ের কাজে ব্যস্ত থাকাতে সংগঠনের সব কাজই তাকে করতে হয় বলেও জানান তিনি। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সংগঠন সমন্বয় পরিদেরও সভাপতি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস)-এর পাশাপাশি দলটি ক্মতায় থাকাকালীন প্রতিষ্ঠিত হয় জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল। কিন্তু জাসাস ছাড়া অন্য দুটি সংগঠন বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়। জাতীয়তাবাদী দলের শীর্স্থানীয়দের মনে। ১৯৭৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি আহ্বায়ক কমিটির মধ্য দিয়ে জাসাসের পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৪ এপ্রিল লোকমান হোসেন ফকিরকে সভাপতি করে জাসাসের নবযাত্রা শুরু হয়। এরপর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কবি আল মাহমুদ, প্রয়াত শক্তিমান চলচ্চিত্রাভিনেতা ওয়াসিমুল বারী রাজীব। আর বর্তমানে সভাপতি হিসেবে আছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক এমএ মালেক। সংগঠনের কার্যক্রম স্তিমিত কেন এমন প্রশ্নে এমএ মালেক বলেন, মূল দলের চেয়েও আমরা সক্রিয়। জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির প্রতিষ্ঠা করা হলেও সংস্কৃতি চর্চায় এরা নিষ্প্রভ। পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জানুয়ারিতে এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি এক দিনের জন্য জেগে ওঠে। বাকি ৩৬৫ দিন ঘুমিয়ে থাকে। বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যানারে গড়ে উঠা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো না করছে রাজনীতির চর্চা আর না করছে সংস্কৃতি চর্চা। শুধু দলের সাইনবোর্ডে নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে এসব সংগঠন। মানববন্ধন ও আলোচনা সভা ছাড়া এদের কোনো কার্যক্রম খুব একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাইনবোর্ডে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। মানববন্ধন আর আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের সংস্কৃতি চর্চা। যা কাম্য নয়।

সর্বশেষ খবর