বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমির-রহমানের উৎকণ্ঠা

শোবিজ ডেস্ক

আমির-রহমানের উৎকণ্ঠা

ভারতে চলমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় উদ্বিগ্ন বলিউড অভিনেতা আমির খান এবং সংগীত জাদুকর এ আর রহমান। এই পরিস্থিতিতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ভারত বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। একই সঙ্গে তারা মনে করেন, ভারত সভ্যতা থেকে পেছনে ফিরে যাচ্ছে।

আমির খান জানিয়েছেন, তার স্ত্রী কিরণ রাও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ ভীত হয়ে পড়েছেন। সন্তানদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে কিরণ তাকে দেশ ছাড়তেও বলেছেন। আমির নিজের অবস্থান থেকে জানান, তিনি ভারতের এই ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ইদানীং দৈনিক সংবাদপত্র পড়তেও তিনি ভয় পান। তিনি বলেন, ‘কিরণের পক্ষে এমন কথা বলা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সে বলেছে, অর্থাৎ সে আসলেই সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আমাদের চারপাশের প্রতিদিনের বদলে যাওয়া পরিবেশ নিয়ে সে ভীত। ইদানীং সে সকালের খবরের কাগজটা খুলতেও ভয় পাচ্ছে’।

আমির খান সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি এ কথা বলেন। আমির খান বলেন, প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললে যা পড়ি তাতে একজন মানুষ হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে; সত্যিই বলছি, আমার ভিতরে যে ভয় ও আতঙ্ক ক্রমশ দানা বাঁধছে, তা আমি অস্বীকার করতে পারব না।

ভারতজুড়ে ক্রমবর্ধমান এই ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিপরীতে প্রতিবাদ জানাতে দেশটির বিভিন্ন অংশের খ্যাতিমান ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, বিজ্ঞানী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীদের পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিকে সমর্থন করছেন আমির খান নিজেও। তিনি জানিয়েছেন, যত দিন এই প্রতিবাদের বিষয়টি অহিংস প্রতিবাদ থাকবে তত দিন তিনি একে সমর্থন করবেন।

ভারতের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে আমিরের ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সংগীত জাদুকর এ আর রহমান। তিনি বলেন, আমির খানের মতোই তিনি একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন মাস দুয়েক আগে।

মুম্বাইয়ের রাজা একাডেমির ফতোয়া প্রসঙ্গে এই কথা বলেন তিনি। ইরানের ছবি ‘মুহম্মদ’র গানে সুর দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেই সময় দিলি­ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে রহমানের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাকে ফের হিন্দুত্বে ফেরানোর জন্য আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, সভ্য সমাজে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক নয়। রহমান বলেন, ‘কোনোকিছুই হিংস্র হওয়া উচিত নয়। আমরা সবাই সভ্য সমাজের বাসিন্দা। আমাদের গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া উচিত যে আমরাই সব থেকে বেশি সভ্য।’

আমিরের উদ্বিগ্নতার সঙ্গে রহমান একমত পোষণ করলেও তিনি পুরস্কার ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন। রহমান বলেন, ‘সবকিছুতেই ভদ্রভাবে প্রতিবাদ জানানো উচিত। পুরস্কার ফেরত দেওয়াটা ভীষণ নাটকীয়। আমরা মহাÍা গান্ধীর দেশে থাকি। তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন হিংস্রতা ছাড়াই আমরা কীভাবে বিপ্লব ঘটাতে পারি।’

এদিকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের পর এবার মুখ খুলে তোপের মুখে পড়েছেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত আমির। রাখঢাক না রেখেই তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার এমন মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এরই মধ্যে আমিরকে ভারত ছাড়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অনেক অভিনেতা-শিল্পীও আমির খানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছেন। প্রবীণ অভিনেতা অনুপম খের টুইট করেছেন, ‘আমির কি নিজের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছেন ভারত ছেড়ে তিনি কোথায় যেতে চান? ভারতই যে তাকে আমির খান বানিয়েছে সেটাও তাকে মনে করিয়ে দেন অনুপম খের। এর কিছুক্ষণ পরই বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন অভিযোগ করেন, আমির খানের এই মন্তব্য ভারতকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তার কথায়, ‘আমিরের নামডাক-ধনদৌলত সব এই ভারতের লোকই দিয়েছে। আজ সুপারস্টার হওয়ার পর তিনি যখন এ ধরনের কথা বলেন তাতে ভারতবিরোধীরাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের বদনাম করার সুযোগ পেয়ে যান। এতে হয়তো আমির সস্তা প্রচার পেতে পারেন, কিন্তু ভারতের গায়ে যে কালির ছিটে লেগে যায় সেটা তিনি খেয়াল করেন না!’

আর তাতে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও। ভারতের মানুষই যে তাকে আমির খান বানিয়েছেন, মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে কথাও। দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কিছুদিন আগেই বিজেপির কট্টরপন্থি নেতাদের রোষের মুখে পড়েছিলেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান। তাকে পাকিস্তান চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন কেউ কেউ।

আসলে আমির খান শুধু বলিউড অভিনেতাই নন, ভারতে বিদেশি পর্যটকদের টানতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে যে ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন চলছে, তারও প্রধান। ভারতের বহু সামাজিক সমস্যা নিয়ে তার টেলিভিশন অনুষ্ঠান সত্যমেব জয়তেও ভীষণ জনপ্রিয়। এহেন আমির অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর শুধু বিজেপির পক্ষ থেকেই নয়, প্রায় নজিরবিহীনভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রীও তাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, বিজেপি আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা অনেক কমেছে।

সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেছেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কি আমির আসলে তা জানেনই না।

আরেক দিকে আমিরের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস আমিরের মন্তব্যকে সমর্থন করায় বিষয়টি এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তবে আমির আপাতত চুপ আছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর