প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি [ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র]। সাংস্কৃতিক আন্দোলন দিয়ে জাতিসত্তা ও জাতীয়তাবাদের সঠিক পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে টিএসসি কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এগিয়ে যায় সৃজনশীল ও শৈল্পিকভাবে। টিএসসির প্রথম পরিচালক এ জেড খান [আমানুজ্জামান খান]-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বিস্তার ঘটে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কার্যক্রম শুরু হলেও ভাষা আন্দোলনের পর ৫৬ সালে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। আর এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে [টিএসসি] কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। আবৃত্তি, নাটক, নাচ ও গানের সংগঠন মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটির অধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে টিএসসিতে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নাট্যচক্র, আরণ্যক, ঢাকা পদাতিক ও ঢাকা থিয়েটার নাট্যচর্চা শুরু করে এখানে। ওই সময়ে দেশের নাট্যাঙ্গনে নাটকের এই দলগুলো নিজেদেরকে মেলে ধরে সৃজনশীল ও নান্দনিকভাবে। ৭০ এর দশকে নাটকের দল প্রতিষ্ঠার পর ৮০-এর দশকে আবৃত্তি সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সাগর লোহানী, নাঈমুল ইসলাম খান, আলী রিয়াজ ও আমানউদ্দৌলা এই চারজন মিলে ৮৩-তে গঠন করেন আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বরশ্রুতি’। এর পরের বছর ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাস, মীর বরকত, বিপ্লব বালা ও গোলাম সারোয়ার মিলে প্রতিষ্ঠা করেন আবৃত্তি সগঠন ‘কণ্ঠশীলন’। আর এই সংগঠনটিই বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় আবৃত্তি সংগঠনের আসনে আসীন হয়েছে। কণ্ঠশীলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা  ও প্রশিক্ষক মীর বরকত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টিএসসিতে প্রতিষ্ঠা হলেও কণ্ঠশীলনের কার্যক্রম সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বাচিক ও আঙ্গিক আবৃত্তির ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন জেলাতে কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেছে’।

টিএসসি কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট অভিভাবক সংগঠন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টিএসসি কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চার নানা দিক সম্বন্ধে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘টিএসসিতে প্রায় ৫০টির অধিক সংগঠন রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে এই সংগঠনগুলো দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু তাই নয় শিল্প ও সংস্কৃতির লালনে ও পৃষ্ঠপোষকতায় টিএসসির সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যে ধরনের ভূমিকা পালন করছে নিঃসন্দেহে তা দেশজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য’। সংগঠনগুলোর ৪-৫টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত এবং বাকি সবগুলোই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনকে বহিরাগতদের সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেন বলে এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গোলাম কুদ্দুছ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টিএসসির মহড়া কক্ষগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না বলেও তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তার কথার সূত্র ধরেই আবৃত্তিকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টিএসসি-তে মহড়া কক্ষ না পেয়ে অনেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের খোলা আকাশের নিচে রিহার্সাল করে থাকেন’। রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগ করে কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার দুই দিন সরকারি বন্ধের সময় টিএসসির মহড়া কক্ষগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সংস্কৃতি চর্চা ব্যাহত হচ্ছে।’

এ ছাড়া আরও রয়েছে সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের অভিভাবক সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, পথনাটক পরিষদ ইত্যাদি।