মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মঞ্চ মাতানো নারী ব্যান্ডশিল্পীরা

মঞ্চ মাতানো নারী ব্যান্ডশিল্পীরা

যুদ্ধবিধ্বন্ত একটি দেশে লালন, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গানের বিপরীতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র দিয়ে একটি নতুন ঘরানার গান সৃষ্টি করেন পপগুরু আজম খান। তখন তার ব্যান্ড লাইনআপে ছিল ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের মতো শিল্পীরা। বর্তমানের ব্যান্ডশিল্পের শুরুটা অনেকটা এভাবেই। শ্রোতাদের প্রবল গ্রহণযোগ্যতার পিঠে চেপে প্রায় ২০ বছর দাপিয়ে বেড়ায় ব্যান্ডশিল্প। একে একে বাংলাদেশে জন্ম নেয় সোলস, রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, মাকসুদ, এলআরবি, নগর বাউল, আর্ক, ওয়ারফেজ, প্রমিথিউস ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় পুরুষতান্ত্রিক ব্যান্ডের পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশে জন্ম নিয়েছে বেশ কয়েকটি নারী শিল্পীর ব্যান্ড। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়ও হয়েছেন তারা। নারী ব্যান্ডদের হালচাল নিয়ে লিখেছেন— আলী আফতাব

 

আনুশেহ আনাদিল

১৯৯৮ সাল থেকে বাংলা ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে গান করছেন আনুশেহ। যদিও বর্তমানে তিনি এই ব্যান্ডের সঙ্গে নেই। তোমার ঘরে বসত করে, কৃষ্ণ পক্ষ কালো পক্ষ, নামাজ আমার হইল না, ঘাটে লাগাইয়া তরীসহ অনেক গান তার কণ্ঠে অর্জন করেছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। বাংলা ব্যান্ডের কিংকর্তব্যবিমূঢ় এবং প্রত্যুত্পন্নমতি অ্যালবাম দুটির পর প্রকাশ পায় আনুশেহর প্রথম একক অ্যালবাম রাই। এ অ্যালবামের বিভিন্ন গানের যন্ত্রানুষঙ্গে অংশ নিয়েছেন তন্ময় বোস, স্যাম মিলস, পান্ডু হোয়াইটস, দেবজ্যোতি মিশ্র, ব্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান, তালতন্ত্রসহ আরও অনেকে। কিন্তু বর্তমানে আনুশেহ গড়ে তুলেছেন তার নতুন একটি ব্যান্ড। নাম ‘বাহক’। আর এর লাইন আছে বাউল শফি মণ্ডল [কণ্ঠ ও দোতারা], পান্ডু [লিড], কার্তিক [বেস], নজরুল [ঢোল], পালকি [অ্যাকুস্টিক গিটার]।

 

সুমী

এই বাংলার জল-মাটি-কাদার গন্ধ গায়ে মেখে গান শুরু করে ‘লালন’ ব্যান্ড’। এর প্রধান ভোকালিস্ট সুমী। গানের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকে কয়েক বন্ধুর উদ্যোগে ব্যান্ড লালন যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালের পয়লা বৈশাখ। শুরুর দিকে লালনের সদস্য ছিলেন ড্রামসে আশিক, লিড গিটারে জুয়েল, বেইজ গিটারে কামাল, কি-বোর্ডে মাসুম ও রাসেল। আরও মজার ব্যাপার হলো, ২০০৩ সালে এরা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে অংশ নেন বেনসন অ্যান্ড হেজেসের স্টার সার্চে। আর এই প্রতিযোগিতায় ভোকালে সুমী প্রথম হন। লালনের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ২০০৭ সালে। ২০০৬ সালে তাদের পুরনো লাইনআপ বদলে যায়। বেইজ গিটারে সেন্টু, লিডে মাসুম, ড্রামসে তিতি এবং ভোকালে সুমী— এ নিয়ে আবার পথচলা শুরু করে নবীন ব্যান্ড দলটি। অন্যদিকে দর্শকনন্দিত অভিনেত্রী জিনাত সানু স্বাগতা অভিনয়ের পাশাপাশি গান গেয়েও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। ‘মহাকাল’ শিরোনামে তার নিজস্ব ব্যান্ড দল রয়েছে। এই ব্যান্ডের কয়েকটি অ্যালবামও রয়েছে বাজারে।

 

 

আলিফ আলাউদ্দিন

এদিকে আলাউদ্দিন আলীর মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিনও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে তার ‘ফোরটিনথ ফ্লোর’ নামের একটি ব্যান্ড দল নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন। এরই ভিতর বেশ কিছু গানের কম্পোজিশন তৈরি হয়েছে। নতুন কিছু গানের ভিডিও তৈরি করবেন বলে ভাবছেন। বেশ কয়টি টিভি লাইভ অনুষ্ঠানে পারফর্মসহ নতুন বছরে কনসার্টের পরিকল্পনাও নিয়েছেন। পাশাপাশি ক্লাব শো দিয়ে সারা রাত পারফর্ম করছেন।

 

 

তিশমা

‘চাঁদের মেয়ে জোসনা আমি বেদের মেয়ে না' নিয়ে শ্রোতাপ্রিয় হয়েছেন রক-রাজকন্যা খ্যাত তিশমা। ২০০২ সালে কয়েকজন যন্ত্রী নিয়ে ব্যান্ডে সেটআপ তৈরি করেছিলেন তিশমা। দীর্ঘদিন সেই সেটআপের সঙ্গে গেয়েছেনও। কিন্তু নিজের পড়াশোনা আর সদস্যদের ব্যস্ততার কারণে তিশমার সেটআপটি টিকেনি। এবার নিজের ‘তিশমা' ব্যান্ড গড়েছেন জনপ্রিয় এই পপগায়িকা। সাত সদস্যের এ ব্যান্ডের লাইনআপ হলো- তিশমা [ভোকাল ও গিটার], রানা [বেজ], সামু [গিটার], বিকাশ [ড্রামস], সাজু [ড্রামস ও পার্কাশান], তুষার [ড্রামস পার্কাশান]। বর্তমানে এই ব্যান্ড নিয়েই বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রামে গান করছেন তিশমা।

 

 

রেশমী

‘পাওয়ার ভয়েস' প্রতিযোগিতা থেকে আসা এই গায়িকা রেশমী গড়ে তোলেছেন তার নতুন একটি ব্যান্ড দল। নাম ‘রেশমী ও মাটি'। তার প্রথম একক অ্যালবামের নামেই করা হয়েছে এই অ্যালবামটির নাম। ৯টি গান দিয়ে সাজানো হয়েছে অ্যালবামটি। খুব অল্প সময়ে অনেক সুনাম কামিয়েছে এই ব্যান্ডটি। গত ঈদ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে ব্যান্ডটি। এটির লাইনআপে রেশমী (ভোকাল) ছাড়াও রয়েছেন মীর মাসুম (কি-বোর্ড), বিকাশ রায় (ড্রামস), জাকির রানা (বেজ), সজীব চেৌধুরী (লিড) ও মাখন (অ্যাকুস্টিক)। কয়েক দিন আগে ডিজে রাহাতের ফিচারিংয়ে তার নতুন মিক্স অ্যালবামে গেয়েছেন রেশমী। এখন গানটির মিউজিক ভিডিওর কাজ চলছে।

 

পড়শী

 

পড়শীর প্রথম একক অ্যালবাম ‘পড়শী' প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালে। অ্যালবামটি জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই মঞ্চ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটি নির্দষ্টি যন্ত্রশিল্পীর দলের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে থাকেন পড়শী। এ দলটির সঙ্গে পড়শীর বেশ আন্তরিকতাও তৈরি হয়। পড়শী এবার তাদের নিয়েই গড়ে তুললেন নিজের ব্যান্ড দল ‘বর্ণমালা'।

বর্ণমালার সদস্যরা হলেন পড়শী (ভোকাল), নাদিম আহমেদ (ভোকাল ও কি-বোর্ড), মিঠু (প্যাড ও ড্রামস), প্রিন্স (গিটার ও ভোকাল), অনির্বাণ (তবলা ও পার্কাশান), রিন্টু (বেজ), কামরুল (বঁাশি), স্বাক্ষর এহসান (ব্যান্ড ম্যানেজার)।

সর্বশেষ খবর