শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

স্মৃতির মণিকোঠায় অভিনেতা রাজু আহমেদ

কাজী রাশিদুল হক পাশা

স্মৃতির মণিকোঠায় অভিনেতা রাজু আহমেদ

আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭২ সালের এই দিনে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারান অভিনেতা রাজু আহমেদ। তার জম্ম ২৮ বৈশাখ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে কুষ্টিয়ার আমলাপাড়ায়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘বাঘা বাঙ্গালি’, ‘দুটি মন দুটি আশা’সহ আরও অসংখ্য ছবি।

অভিনেতা রাজু আহমেদ। তার সম্পর্কে এ প্রজম্মের না জানারই কথা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত শিল্পী এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন তিনি। ‘জল্লাদের দরবার’ শিরোনামে জনপ্রিয় ও মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধকারী অনুষ্ঠানে জল্লাদের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। তার ভরাট কণ্ঠস্বরে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। আমরা যারা রণাঙ্গনে ছিলাম তারা সবাই অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। নাটকপাগল রাজু আহমেদ অল্প সময়ের মধ্যেই যোগ্য অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ষাট দশকের সিনেমার একজন জনপ্রিয় খলনায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। আমার সিনিয়র তিনি। আমার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে নাটককে কেন্দ্র করে। আমি নাটক লিখতাম, তিনি অভিনয় করতেন। ১৯৬০ সালে ঢাকার চারুকলা কলেজে ভাস্কর বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে উচ্চ শিক্ষার্থে পাকিস্তান যান। দুই বছর পর দেশে ফেরেন। করাচিতেও বাঙালিদের নিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করে সবার দৃষ্টি কাড়েন। করাচি থেকে ফিরে আবার কুষ্টিয়ায়। পেশা বলতে পাকিস্তান হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তা আর নেশা বলতে নাটক।

রাজ্জাক-কবরীর তখন রমরমা বাজার। সেই মুহূর্তেই বাংলা চলচ্চিত্রে তার আগমন। পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। স্বাধীনতার পর আবার চলচ্চিত্রে কাজ শুরু। তার বিচরণ শুধু সিনেমাতেই সীমিত থাকেনি। বেতার, টেলিভিশনেও সমান আধিপত্য ছিল তার। চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দেখে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ভূইঞা মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরিফের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তাকে।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আজ ৪৩ বছর পর তার স্মৃতিচারণ করতে এসে এই কথাই বলব- রাজু ভাই, তুমি যেখানেই থাক ভালো থাক, শান্তিতে থাক।

সর্বশেষ খবর