মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ : তিমির নন্দী

আজও মনে পড়ে ১৬ ডিসেম্বরের সেই দিনের কথা

আলী আফতাব

আজও মনে পড়ে ১৬ ডিসেম্বরের সেই দিনের কথা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির অহংকার। এ যুদ্ধে তত্কালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছে। রণাঙ্গনের সৈনিক ছাড়াও ‘মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট’ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যারা শব্দসৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করেছেন তাদের মধ্যে তিমির নন্দী অন্যতম। স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু ঘটনা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে—

 

বাংলাদেশের নাম লেখার পেছনে আপনারও অবদান রয়েছে। এই দিনে কেমন অনুভব হয়?

এটি আমার জীবনের সবচাইতে বড় প্রাপ্তি। আমি গর্বিত যে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছি এবং আমাদের মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করতে আমার সেই সময়ে যা যা করা দরকার ছিল সেভাবেই সব সম্পন্ন করতে পেরেছি। ফলে পৃথিবীর বুকে একটি নতুন মানচিত্র পেয়েছি, একটি দেশ পেয়েছি, আমার জন্মভূমি অথবা মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পেরেছি। এ আমার অহংকার। আজ বাংলাদেশের পতাকা দেখলে বুকটা আমার গর্বে ভরে ওঠে, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, এই পতাকার জন্যই আমি যুদ্ধ করেছি! যতবার আমি আমাদের জাতীয় সংগীত গেয়ে উঠি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’, ততবারই আমার দুই চোখ ভিজে ওঠে।

 

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের-সেই উত্তাল দিনগুলো নিয়ে কিছু বলুন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদানের পর একটা দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। মাথায় চিন্তা আসে কীভাবে সুন্দর গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং আমাদের আটকে পড়া ভাই-বোনদের উদ্বুদ্ধ করা যায়? আরও ভাবতাম ১৯৬৯ সাল থেকে বেতার এবং টিভিতে গান গাইতাম বলে অনেকেই আমাকে চেনেন। যদি আমার কণ্ঠ শুনে তারা চিনতে পারেন, আমি তাদের পাশেই আছি! তাদের জন্য গান গেয়ে চলেছি... তখন ছোট ছিলাম বিধায় একক কণ্ঠে গান সিনিয়র শিল্পীদের দিয়েই করানো হয়েছে, তাই একক কণ্ঠে গান গাওয়ার সুযোগ পাইনি। সমবেত কণ্ঠে গান করেছি। একটি গানের জন্য নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বসে থেকেছি গানের আশায়, কখন একটি গান রেকর্ড করব।

 

যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তার বাস্তবায়ন কতটুকু?

আমাদের সেই সময় একটাই স্বপ্ন ছিল, দেশ স্বাধীন করা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর যে স্বপ্ন মনের ভিতরে ছিল তার অনেকটাই এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। ওই সময় আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছি ৩৫০ জন কলাকুশলী। তাদের মধ্যে এখন অনেকেই নেই। আর যারা বেঁচে আছেন, তাদের খবরও আজ কেউ রাখেন না। যে দেশে ৩ থেকে চার বার ফসল ফলে, সে দেশ কখনোই গরিব হতে পারে না। এখানে দেশের মানুষের কথা কেউই ভাবেন না, শুধুই নিজেদের কথা ভাবেন, নিজে আখের গোছান। তাই দেশের আজ এই অবস্থা!

 

আপনার সহযোদ্ধা প্রবাল চৌধুরীকে নিয়ে কিছু বলুন?

চট্টগ্রামে আমার সহযোদ্ধারা হলেন প্রয়াত প্রবাল চৌধুরী, যার সঙ্গে আমার খুব সুন্দর একটি সম্পর্ক ছিল। তিনি আমার সুরে অনেক বছর আগে রেডিওতে গানও রেকর্ড করেছেন। উনি এমন সহজ-সরল ছিলেন যে, আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এমন বড় মাপের একজন শিল্পী আমাকে বললেন, ‘তিমির, আমি তো সাধারণত ফ্ল্যাট টাইপের গান করি, তাই তোমার এই লাইনে কারুকাজ করতে পারব না, আমি ফ্ল্যাট করে গেয়ে দেব।’ যেদিন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, সেই মুহূর্তে আমি ও শাম্মি আখতার বিটিভিতে একটি রেকর্ডিংয়ে ছিলাম। তখন আমি ফোন করে সবাইকে প্রবাল চৌধুরীর অসুস্থতার কথা জানাই।

 

বাংলাদেশ বিজয় উৎসব-২০১৫ নিয়ে কিছু বলুন?

এই অনুষ্ঠানটি হবে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। এখানে আরও থাকছেন রুনা লায়লা, আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড দল রেনেসাঁ, সুজিত মুস্তফা, শফি মণ্ডল, অনিমা রায়সহ অনেকে। আমি গান পরিবেশন করব ১৬ ডিসেম্বর। এর আগে জাতীয় জদুঘরে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইব।

সর্বশেষ খবর