বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-ভারত বিনিময়

বাধাগ্রস্ত চলচ্চিত্র আমদানি

আলাউদ্দীন মাজিদ

 বাধাগ্রস্ত চলচ্চিত্র আমদানি

সাফটাভুক্ত দেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমদানি নীতির ৪৯[গ] ধারায় নতুন করে পূর্ব শর্ত আরোপ করার অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তারা একে স্ববিরোধিতার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন। এদিকে তথ্য মন্ত্রণালয় নতুন কোনো শর্ত আরোপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। দুই পক্ষের বিরোধী অবস্থানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি ইফতেখার নওশাদ এবং সহসভাপতি সুদীপ কুমার দাস জানান, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এফবিসিসিআইয়ের সক্রিয় সমর্থনে বাংলাদেশ সরকারের আমদানি নীতি ২০১২-১৫ এর ৪৯[গ] ধারাটি সংযোজন করা হয়। এতে বাংলাদেশে নির্মিত ছায়াছবি রপ্তানির বিপরীতে সাফটাভুক্ত দেশ থেকে সমান সংখ্যক ছায়াছবি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি কলকাতার চলচ্চিত্র প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নতুন আইনের ধারাটি পড়ে শোনান এবং উপস্থিত সবাই এটিকে স্বাগত জানায়। নতুন আইনের আওতায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ‘খান ব্রাদার্স’ এবং ‘উপহার সিনেমা’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮টি বাংলাদেশে নির্মিত ছায়াছবি ভারতে রপ্তানির উদ্যোগ নিয়ে অনাপত্তিপত্র প্রাপ্তির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে এবং দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে রপ্তানির অনুমতি লাভ ও কলকাতায় ছবিগুলো রপ্তানি করে। এই রপ্তানির বিপরীতে প্রথমে কলকাতার দুটি বাংলা ছবি ‘খোকাবাবু’ এবং ‘খোকাবাবু ৪২০’ আমদানি করলে তথ্য মন্ত্রণালয় সেন্সর করার আগে পূর্বশর্ত দিয়ে জানায় যে, কলকাতায় রপ্তানিকৃত অন্তত ২টি ছবি সেখানে মুক্তি দিতে হবে এবং মুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনারের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এরপর আমদানি করা হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধশিশু’। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি। তাই প্রথম দুটি ছবির ওপর আরোপিত শর্ত প্রত্যাহার না করায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট মামলা করা হয়। চূড়ান্ত শুনানির পর হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ে মন্ত্রণালয় আরোপিত শর্তকে বেআইনি ঘোষণা করে ৩০ দিনের মধ্যে ছবি দুটি সেন্সর করার নির্দেশ দেন। ছবি দুটি আমদানির পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় ছবিগুলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লোকসানের কবলে পড়ে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তারা আরও জানান, ইতিমধ্যে তারা জানতে পেরেছেন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আরোপের পত্র দিয়ে পরবর্তী আমদানি নীতি ২০১৫-১৮-তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পূর্বশর্ত আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ৪৯[ক] ও [গ] ধারার আওতায় ছবি আমদানির আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। ৪৯[গ] ধারায় রপ্তানির বিপরীতে আমদানির বিধান থাকায় পুনরায় আমদানির আগে অনাপত্তিপত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে প্রথমে লিখিতভাবে পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় বিরোধিতা করা হয়। কর্মকর্তারা জানান, তারা জানতে পেরেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের চাপে পড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই পূর্বশর্ত আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রদর্শক সমিতি বলছে, সাফটা চুক্তির আওতায় সদস্যভুক্ত দেশসমূহের পক্ষ থেকে একটি স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা এই লক্ষ্যে পেশ করা হয় যে, স্পর্শকাতর পণ্যসমূহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র আমদানি থেকে বিরত থাকবে বা আমদানি নিষিদ্ধ থাকবে। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সার্ক সচিবালয়ে প্রেরিত সর্বশেষ স্পর্শকাতর তালিকায় চলচ্চিত্রবিষয়ক এইচ এম কোড ৩৭০৬.৯০ বাদ দেওয়া হয়। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে সাফটাভুক্ত দেশসমূহ থেকে চলচ্চিত্র আমদানিতে কোনো বাধা নেই। এতে করে প্রদর্শক সমিতি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলছে, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ও সাফটা চুক্তির আওতায় চলচ্চিত্র আমদানির ক্ষেত্রে সরকার ইতিবাচক সাড়া দেওয়া সত্ত্বেও তথ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতিতে নতুন করে কীভাবে পূর্বশর্ত আরোপ করতে পারে। এতে শুধু আমদানিই বাধাগ্রস্ত হবে না বরং বিষয়টি অন্য রাষ্ট্রের গোচরীভূত হলে এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। এই পূর্বশর্তকে স্ববিরোধী ব্যবস্থা বলেও মন্তব্য চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অধিশাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অভিযোগটি অমূলক। কারণ যে শর্তের কথা প্রদর্শক সমিতি বলছে তা নতুন নয়। প্রথম থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি।

সর্বশেষ খবর