সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশীয় কৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হোক গান

দেশীয় কৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হোক গান

নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা। শুধু সংগীত নয়, সব ক্ষেত্রেই নতুন দিনে এই প্রত্যাশা থাকে সবার। তারপরেও সংগীতের স্বকীয়তা ফিরিয়ে এনে নিজ দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আভরণে বেঁধে নিতে চান সংগীতকাররা। এর জন্য দরকার এ জগতের সঙ্গে যুক্ত সবার সচেতনতা। গানকে যন্ত্রের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে হবে। চর্চা আর গুরুর দীক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে। এমনটাই জানালেন সংগীতকাররা। তাদের কথা তুলে ধরেছেন— আলী আফতাব

 

সৈয়দ আবদুল হাদী

নতুন বছরের প্রত্যাশা এ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন। কারণ অনেক সময় প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির কোনো মিল থাকে না। বর্তমানে আমাদের আকাশ সংস্কৃতি গানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। গান হারিয়ে ফেলছে তার বৈচিত্র্য। আমরা এখন আর শেখড়ের গানগুলো খুঁজে পাই না। এখন কিছু কিছু গান শোনে কষ্ট পাই। কারণ গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষার বিকৃতি, উচ্চরণে বিকৃতি এবং বিদেশি সুরের অন্ধানুকরণ। এ বিষয়গুলো আমাদেরকে অনেক কষ্ট দেয়। এ বলে যে ভালো গান হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। কিন্তু ভালো গানের পরিমাণ খুবই কম। নতুন বছর আমি কামনা করব— শুদ্ধ উচ্চারণ, সঠিক সুরের মধ্যে দিয়ে ভালো গান শ্রোতাদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। যন্ত্র নয়, চর্চাকে প্রাধান্য দিতে হবে। গান কখনই যন্ত্র নির্ভর হতে পারে না। তাছাড়া গান হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। আজকাল গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়া কমে গেছে বলেই গানের এই দুর্দশা। আশা করব নতুন বছরে এসব নেতিবাচক অবস্থা থেকে গান মুক্তি পাবে এবং সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।

 

কুমার বিশ্বজিৎ

গত বছর আমাদের একটি বড় প্রাপ্তি ছিল, ডিজিটাল গানের প্রচারণা। এ সুফলও ভোগ করেছে অনেক শিল্পীরা। অনলাইনে গানের বিক্রিও বেড়েছে দ্বিগুণ। আমি মনে করি, নতুন বছরে অনলাইনের মধ্যে দিয়ে গান বিক্রির এই বিষয়টি আরও সমৃদ্ধি হবে। তাতে করে শিল্পী ও কলাকুশলীরা লাভবান হবে। আর নতুন বছরের প্রত্যাশার কথা যদি বলতে চাই, তবে বলতে হবে আমাদের নিজের সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করতে হবে। আধুনিকতার নামে অপসংস্কৃতিতে ডুবে থাকলে চলবে না। নতুনদের মাঝে আমাদের শুদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে। স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে কোনো জাতি কখনো সাফল্য পায়নি, পেতেও পারে না। তা সংগীত বা যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক। তাই সংগীতে শতভাগ নিজস্বতা বজায় রেখে নতুন বছরে এগোতে হবে। গানের কথা ও সুরে নিজ দেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে।

 

ফাহমিদা নবী

আমি নতুন বছরে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষ যদি তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হয়, তাহলে তার  চারপাশটা অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। আমি এখনো আরও শিখতে চাই। জানতে চাই, সংগীতের নখ-নক্ষত্র। আমি জানি প্রতিটি নতুন একদিন পুরনো হবে। আর প্রতিটি পুরাতন নেবে নতুন রূপান্তর। পৃথিবীর কোনো কিছুর পরিবর্তন হয় না, হয় রূপান্তর। আমি আমার সংগীতের মধ্য দিয়ে সে রূপান্তরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। আমি নতুনদের কাছ থেকে কোনো কিছু প্রত্যাশা করি না। আমি চাই তারা আমাকে অনুকরণ করুক। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ কারও না কারও অনুকরণ করে। আমি মনে করি, ভালো জিনিসের অনুকরণ করলে সেটা ভালো হবেই। তাই ভালো সংগীত অনুকরণের মধ্যে দিয়ে নতুন বছরে সংগীতের ভালোত্বের দিকটি ফুটে উঠবে। সংগীত হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ এবং মাধুর্যপূর্ণ। এর জন্য নতুনদের আরও মনোযোগী হতে হবে।

 

অর্ণব

নতুন প্রত্যাশা, আমাদের দেশে সংগীতের একটি ভালো পরিবেশ গড়ে উঠুক। যেখানে সব শিল্পীরা তার গানের অধিকার ফিরে পাবে। বর্তমানে স্টেজ শো ছাড়া শিল্পীদের আয়ের কোনো পথ নেই। কারণ অডিও প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পীদের তেমনভাবে সাহায্য করছে না। টিভি চ্যানেলগুলোও নামেমাত্র সম্মানী দিয়ে থাকে শিল্পীদের। এটি অসম্মানেরই নামান্তর। হয়তো দেখেছেন গত বছর আমার নতুন একক অ্যালবামটি নিজেই ফেরি করে বেড়েছি সারা বাংলাদেশে। এতে করে আমার একটি উপকারও হয়েছে। আমি খুব সহজে ভক্তদের কাছে যেতে পেরেছি। আমি বুঝতে পেরেছি কারা আমার গানের শ্রোতা। তারা এ ধরনের গান প্রত্যাশা করে।  নতুন বছরে প্রত্যাশা করব, অডিও প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে নতুন শিল্পীদের প্রমোট করে এবং গানের যথাযথ রয়্যালিটি নিশ্চিত করে। সংগীতের দুরবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন হাহাকার করতে চাই না।

সর্বশেষ খবর