বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

জমাতে পারছে না বাণিজ্যিক ছবি

মানসম্মত চলচ্চিত্র নেই, সিনেমা হল দর্শকশূন্য। এ সমস্যা কাটছেই না। জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ১৯টি ছবি। প্রদর্শক সমিতি জানায়, এসব ছবির মধ্যে একটিও বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত আনতে পারেনি। গত বছর ছবি মুক্তি পেয়েছে ৬২টি। প্রদর্শক সমিতির মতে, এর মধ্যে ব্যবসা করেছে মাত্র দুটি ছবি। কেন এই অবস্থা। এ নিয়ে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রাজ্জাক

[চলচ্চিত্রকার]

ভালো গল্প ও নির্মাণের অভাবে দর্শক দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হলে যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্রকারদের অনৈক্য। ভালো কাজ করতে গেলে ঐক্যের বিকল্প নেই। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি টিমওয়ার্ক। বিষয়টি এখনকার নির্মাতা ও শিল্পীরা মানতে চায় না। তা ছাড়া নকল ও পাইরেসি তো রয়েছেই। বর্তমানে যারা অভিনয়ে আসছে তারা অল্প পরিশ্রমে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। দক্ষ নির্মাতার অভাব এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতে এই শিল্প পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়।

 

সুচন্দা

[চলচ্চিত্রকার]

মানসম্মত গল্প ও নির্মাতা, প্রেক্ষাগৃহের বাজে পরিবেশ, নকল এবং পাইরেসি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চলচ্চিত্রকারদের ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে, না হলে এ শিল্পকে রক্ষা করা যাবে না। আমাদের দেশে মানসম্মত গল্পের অভাব নেই। আছে রুচির খরা। দক্ষ নির্মাতা কোথায়? নতুন অভিনয় শিল্পীরাও প্রপার গাইডের অভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। সিনেপ্লেক্স শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। এসব কারণে বাণিজ্যিক ছবির এখন চরম দুর্দিন চলছে।

 

আমজাদ হোসেন

[চলচ্চিত্রকার]

জীবনঘনিষ্ঠ গল্প নিয়ে নির্মাণ নেই, পাইরেসি, সিনেমা হলের বাজে পরিবেশ, নকল— এসব সমস্যার কারণে আমাদের চলচ্চিত্র আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। আমি নিজেও পাইরেসি সন্ত্রাসের শিকার। আমার সর্বশেষ ছবি ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ মুক্তির পরপরই পাইরেসি হয়ে গেলে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ি। তা ছাড়া এখন সিনেপ্লেক্স    কালচার চলছে। ঢাকায় দু-একটি ছাড়া দেশের আর কোথাও সিনেপ্লেক্স নেই। এ অবস্থায় আমাদের বাণিজ্যিক ছবি কীভাবে সফলতা পাবে।

 

অনুপম হায়াৎ

[চলচ্চিত্র গবেষক]

প্রযুক্তির কারণে এখন মোবাইল ফোনেও ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ফুটপাথে ১০ টাকা দিয়ে পাইরেটেড সিডি কেনা যায়। পাইরেসি চলচ্চিত্র ব্যবসাকে ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে আছে নকল প্রবণতা। উন্নত গল্প এবং চিত্রনাট্য কোথায়? সিনেমা হলে পরিবার নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ কি আছে? এসব প্রশ্নের সমাধান দিতে না পারলে উত্তরণ কীভাবে সম্ভব। দোকান চালাতে গেলে পর্যাপ্ত প্রোডাক্ট দরকার। তেমনি ছবি না থাকলে লোকসান গুনে কীভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা সম্ভব?

 

মিয়া আলাউদ্দীন

[সাধারণ সম্পাদক, প্রদর্শক সমিতি]

ছবি না পেলে সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক হবে কীভাবে। দিনের পর দিন লোকসান গুনে সিনেমা হল চালাতে হচ্ছে। স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু আয় নেই। এভাবে কত দিন চলবে? এ অবস্থায় সিনেমা হল সংস্কার বা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ কীভাবে সম্ভব? একদিকে ছবির সংখ্যা কমছে। যাও পাচ্ছি তাতে মান নেই। মানের অভাবে দর্শক নেই। সব মিলিয়ে ছবির ব্যবসা এখন নিঃশেষ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর