শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

মহড়া কক্ষের সংকট কাটছেই না

শোবিজ প্রতিবেদক

মহড়া কক্ষের সংকট কাটছেই না

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। কিন্তু নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের নাট্যচর্চা। শিল্পী সংকট, পাণ্ডুলিপি সংকট, মহড়া কক্ষের সংকট প্রভৃতি। তবে প্রথম দুটি সাম্প্রতিক সংকট। আর মহড়া কক্ষের সংকট বহু পুরনো। এখনো পর্যন্ত এ সংকট কাটছেই না। রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৬০টির  বেশি নাটকের দল কাজ করছে। অথচ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় নাট্যশালায় রয়েছে মাত্র ৪টি মহড়া কক্ষ। সুতরাং কেউ নিয়মিত নাট্যচর্চা করতে পারছে না। অপেক্ষা করতে হয় মহড়া কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য। আর এই বরাদ্দ বেশির ভাগ সময়েই পেয়ে থাকে বড় নাট্যদলগুলো। তাই অবহেলার শিকার হচ্ছে উঠতি নাট্যদলগুলো। সব মিলিয়ে নাট্যচর্চা বিকাশে এখন প্রধান বাধাই মহড়া কক্ষ সংকট।

বাংলাদেশে নাট্যচর্চা সাংগঠনিকভাবে মূলত শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে। বলা যায় শুরু থেকেই নাট্যকর্মীরা মহড়া কক্ষ সংকটে ভুগছে। আর তাই বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে চলছে নাট্যচর্চা। কিন্তু বিকল্প উপায়গুলোও দিন দিন সংকুচিত হয়ে এসেছে। প্রতিবন্ধকতার উদাহরণ হিসেবে এখনো নাট্যকর্মীরা আক্ষেপের সঙ্গে রাজধানীর ইস্কাটন স্কুলের কথা বলেন। এখানে প্রায় ১০টি নাট্যদল নিয়মিত নাটকের মহড়া করত। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালীর অভিযোগের কারণে সেই স্কুলে নাটকের মহড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিক একইভাবে অন্যান্য নাট্যদলগুলোর বিকল্প পদ্ধতির মহড়া কক্ষগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর তাই মহড়া কক্ষ বাড়ানোর দাবি দিন দিন বাড়ছে। এ জন্য সবার অভিযোগের আঙ্গুল গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের দিকে। ফেডারেশনের নির্বাচিত ব্যক্তিরা বেশির ভাগই বড় বড় নাট্যদলগুলোর নাট্যকর্মী। তাই তারা শুধু নিজেদের সুবিধা নিয়েই ভাবছে। উঠতি কিংবা সংগ্রামী দলগুলোর দিকে তাদের মনোযোগ নেই বলে সবার ক্ষোভ। বিশেষ করে জাতীয় নাট্যশালার চারটি মহড়া কক্ষ বড় নাট্যদলগুলোর দখলে রাখার অভিযোগ প্রবল। নিজেদের সুবিধা হচ্ছে ভেবে সরকারের সঙ্গে ফেডারেশনের আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

অভিযোগের বিষয় নিয়ে কথা হয় আকতারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি সময় নাট্যদলের অন্যতম সদস্য এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল। আকতারুজ্জামান বলেন ভিন্ন কথা। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘জাতীয় নাট্যশালায় মাত্র চারটি মহড়া কক্ষ দিয়ে নাট্যচর্চা সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। কারণ প্রচুর নাট্যদল রয়েছে। খুব ভালো হয় যদি সরকার মহড়ার জন্য আলাদাভাবে একটা ভবন নির্মাণ করে দেয়। শিল্পকলায় সম্ভব না হলে অন্য কোথাও সেটা করা যেতে পারে। আমরা এ নিয়ে অনেক কথা বলেছি।’

দেশ নাটকের অন্যতম সদস্য এহসানুল আজিজ বাবু বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমিতে যদি আরও নতুন মহড়া কক্ষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে ভালো হয়। কিন্তু রাতারাতি সেটা করা মুশকিলও বটে। বরং সবচেয়ে উপকার হয় যদি সরকারিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় স্কুল-কলেজগুলোকে। সন্ধ্যার পর সেখানে মহড়া করা যেতে পারে। ঢাকায় তো স্কুল-কলেজ কম নেই, সন্ধ্যার পর তো সেগুলো ফাঁকাই থাকে। মহড়া সংকট কাটাতে এর থেকে ভালো উদ্যোগ আর কিছু হতে পারে না।’

নাট্যকর্মীদের প্রধান ক্ষোভ, দিনের পর দিন মহড়া কক্ষ সংকট নিয়ে আলোচনাই হয়, সবাই নীতিকথা শুনিয়ে যায়, আশা দিয়ে রাখে— কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। এর মূল কারণ হিসেবে প্রবীণ নাট্যকর্মীদের উদাসীনতা এবং থিয়েটার ফেডারেশনের অমনোযোগকেই দায়ী করছেন সবাই। কারণ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে খুব সহজেই মহড়া কক্ষের সংকট নিরসন করা যায় বলে ধারণা নাট্যকর্মীদের। কিন্তু থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাট্যকর্মীরা শুধু দলাদলি এবং নিজেদের ব্যক্তিগত লাভজনক বিষয়ে মনোযোগী। তাই তারা কারও সমস্যা নিয়ে সময় নষ্ট করতে চায় না বলেই মনে করেন সাধারণ নাট্যকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নাট্যকর্মী বলেন, ‘থিয়েটার ফেডারেশন কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকাই পালন করছে না। তারা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। দেখুন, শিল্পকলায় মাত্র চারটি মহড়া কক্ষ। এগুলো ফেডারেশনের সদস্যরা নিজ নিজ নাট্যদলের জন্যই দখল করে রাখে। এমনকি যেখানে অন্য দলগুলো মহড়া করতে পারে না, সেখানে তারা শিল্পকলার মহড়া কক্ষে সিনিয়র নাট্যকর্মীদের জন্মদিন পালন করে। সব মিলিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই অন্যদের সমস্যা নিয়ে।’

তরুণ নাট্যকর্মীরা নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য অচিরেই মহড়া কক্ষ সংকটের নিরসন চান।

সর্বশেষ খবর