বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

লজ্জার নাম ‘বৃহন্নলা’

আলাউদ্দীন মাজিদ

লজ্জার নাম ‘বৃহন্নলা’

চলচ্চিত্রে নকলবাজিতে আগের সব ঘটনা ছাপিয়ে গেল। আগে ভিনদেশি ছবি নকলের বিতর্ক ছিল। এবার বিদেশি সাহিত্যিকের গল্প নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে চরম লজ্জার পরিচয় দেওয়া হলো। প্রথমবারের মতো জাতীয় পুরস্কার দিয়ে চুরির দায়ে তা আবার ফেরত নেওয়ার ঘটনা ঘটল। আর এ নিয়ে ‘বৃহন্নলা’ ছবির নির্মাতা মুরাদ পারভেজের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে চলচ্চিত্রপাড়াসহ সর্বত্র।

অভিনেত্রী কবরী বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের চলচ্চিত্র জগৎই শুধু নয়, বিশ্বের কাছে দেশকেই খাটো করা হলো। এ ঘটনার জন্য অনুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড সবাই দায়ী। একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক আর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হচ্ছে মর্যাদাসম্পন্ন স্বীকৃতি। এসব স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের সদস্যদের যোগ্যতা ও দায়িত্ববোধ থাকা দরকার। না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবেই। তা ছাড়া দেশের সব সেক্টরেই যোগ্য লোককে নিয়োগ দিতে হবে। না হলে লজ্জাজনক ঘটনার হাত থেকে আমরা রেহাই পাব না।

চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, এই লজ্জা এখন জাতি হিসেবে আমাদের সবার। এর দায় চলচ্চিত্র অনুদান ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ড এড়াতে পারে না। তাদের যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত ছিল। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার। না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে সাহস পাবে।

ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সবার কাছ থেকে দায়িত্বশীলতা আশা করি। এ ঘটনা বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। এর জন্য শাস্তি পাওয়া উচিত। আমি অনুদান কমিটিকে পুরোপুরি দায়ী করতে চাই না। কারণ একজন নির্মাতা অনুদান চাইতে গেলে তাকে নির্দিষ্ট হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। হলফনামার একটি শর্তে উল্লেখ থাকে, যদি কোনো ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় তার জন্য যে কোনো শাস্তি তিনি গ্রহণ করবেন। তারপরও জাতি হিসেবে সবার দায়িত্ব রয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর চাই না।

চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান বলেন, বিদেশের কাছে আমাদের চলচ্চিত্র জগতের মান-সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এ জন্য অনুদান ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের অসতর্কতাকে দায়ী করব।

চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ দাবি করেন, এর আগে নকল ছবিকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে ‘পিতা মাতা সন্তান’ ছবিটি নানা ক্যাটাগরিতে পুরস্কান জেতে। অথচ এই ছবিটি ভারতের হিন্দি ‘অবতার’ এবং কলকাতার ‘অন্নদাতা’ ছবির নকল। এ নিয়ে চলচ্চিত্রকাররা প্রতিবাদ জানালেও পুরস্কার কমিটি তাতে কর্ণপাত করেনি। অথচ পুরস্কার প্রদানের আইনেই রয়েছে উপমহাদেশের কোনো ছবির অনুকরণে নির্মিত ছবি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না।

অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, নকল ছবির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর সাহস দেখানো হলো। এ ক্ষেত্রে কঠোর আইন করতে হবে সরকারকে। কারণ বছরে এখন ৯০ ভাগ ছবিই বিদেশি ছবির গল্পের নকল। এমনকি নকল ছবিকে আগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প এখন ধ্বংস প্রায়।

ুছবির মুখ্য অভিনেতা ফেরদৌস এ ঘটনার জন্য খুবই বিব্রত বলে জানান। তিনি এর নিন্দাও প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত মুরাদ পারভেজের কাছে এ ব্যাপারে জানতে তার মুঠোফোনে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর