বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ : কালিকা প্রসাদ

নগর এবং গ্রামের মধ্যে সেতু গড়ছি

আলী আফতাব

নগর এবং গ্রামের মধ্যে সেতু গড়ছি

আধুনিক কিছু মানুষ। একটি গানের দল। মৌলিক কোনো গান না করে শুধু বাংলাদেশের লোকগান পরিবেশন করে শ্রোতা-দর্শকের মনে স্থান করে নিয়েছেন। কলকাতার গানের এই দলটির নাম ‘দোহার’। সম্প্রতি আবারও ঢাকা ঘুরে গেল এই গানের দলটি। এ উপলক্ষে আজ ‘দোহার’ ব্যান্ডের ভোকাল কালিকা প্রসাদের ইন্টারভিউ—

 

কেমন ছিল এবারের সফর?

এই বাংলাটা আমার আপন ভূমি। আমি অনেক গান করেছি এখানে। এবার এসেছি একটি ব্যাংকের আমন্ত্রণে। এর আগে এ দেশের অনেক টিভি চ্যানেলে গান করেছি। সর্বশেষ শাহ আবদুল করিমের জন্মশতবার্ষিকীতে এসেছিলাম।

 

প্রায় ১৭ বছর ধরে আপনারা গান করে যাচ্ছেন। দোহারের নামকরণ কী করে হলো?

আমার ছোট কাকা অনন্ত ভট্টাচার্যের লোক বিচিত্রা নামে একটি গানের দল ছিল। একসময় আমি পড়াশোনা করার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। সেখানে সাহিত্য নিয়ে পড়েছি। ১৯৯৮ সালে হঠাৎ করেই কাকা মারা যান। বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি প্রায়ই লোক বিচিত্রা ও লোকগান নিয়ে স্বপ্নের কথা বলতেন। কাকার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছু একটা করার কথা ভাবলাম। পরের বছর অনুষ্ঠান করার জন্য হল বুকিং দিলাম। তখনো কিন্তু ব্যান্ডের নাম ঠিক করা হয়নি। এরই মধ্যে অভিক মজুমদার নামে আমারই এক শিক্ষক দোহার নামটা দিলেন। ১৯৯৯ সালের ৭ আগস্ট আমরা এই ব্যান্ডটি নিয়ে যাত্রা শুরু করি।

 

দোহার ব্যান্ড নতুন কী কাজ করছে?

আমরা হাজার বছরের বাংলা গান নিয়ে একটি কাজ শুরু করব। বাংলা গান শুরু হয়েছে চর্যাপদ থেকে। আর শেষ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত। তার মধ্য গানগুলো নিয়ে একটি প্রজেক্ট করার ইচ্ছা আছে।

 

এই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে গান পরিচালনা করছেন। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলুন।

এই চলচ্চিত্রেও মাটির ঘ্রাণ আছে। লালনের দর্শনে বিশ্বাসী একজন মানুষের একতারা ছেড়ে একাত্তরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া নিয়ে গল্প। নামটাও সুন্দর— ‘ভুবন মাঝি’। ফখরুল আরেফিন নির্মাণ করছেন। এ চলচ্চিত্রের সঙ্গে কাজ করে ভালো লাগছে। 

 

গানের সঙ্গে দোহার সব দেশীয় যন্ত্র ব্যবহার করে। এর কারণ কি?

শুরুর দিকে অনেকেই বলেছিল, এখন ব্যান্ডে কত আধুনিক বাদ্যযন্ত্র লোকজন ব্যবহার করে। অথচ তোমরা ঢোল, তবলা, কাঁসা, সারিন্দা ব্যবহার করছ। এটা কি মানুষ আদৌ শুনবে? আজকে যে অন্য দেশে এসে অনুষ্ঠান করছি সেটা তো অবশ্যই দেশীয় ও পুরনো বাদ্যযন্ত্রের কল্যাণেই।

 

দোহারের সব গানই সংগ্রহ করা। মৌলিক গান কেন করা হয় না?

আমি বড় হয়েছি দূরবীন শাহ, হাছন রাজা, লালন ফকির, আব্বাস উদ্দীনের গান শুনে। পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে এ অঞ্চলে লোকগানের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। তবে এখন পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্পীদের গানও আমরা সংগ্রহ করছি। গত ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে ‘শাহবাগ দিচ্ছে ডাক’ শিরোনামে একটি গান বেঁধেছিলাম আমরা।

 

আপনার সঙ্গে তো শাহ আবদুল করিমের দেখা হয়েছিল?

হ্যাঁ, কলকাতার মঞ্চে প্রায়ই আমি বলি, শাহ আবদুল করিমের মতো একজন গুণী মানুষের সঙ্গে দেখা করাটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে, ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি কারণে আমার বাংলাদেশে আসা। প্রথমটা ছিল শাহ আবদুল করিমকে কাছ থেকে দেখা। দ্বিতীয়টা ২১ ফেব্রুয়ারির ঢাকা দেখা। আর ফকির লালনের মাজারে যাওয়া।

 

ইদানীং দোহার রবীন্দ্রনাথের গানও করছে, কেন?

রবীন্দ্রনাথ যখন ১৯০৫ সালে স্বদেশি গানের বই বের করেন তার নামও ছিল বাউল। রবীন্দ্রনাথ নিজেও কিন্তু বাউল গানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাউলের সুর নয় ভাবটাকে গ্রহণ করেছেন। এ সময় এসে মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত। আমরা যে আসলে নগরে এবং গ্রামের মধ্যে একটা সেতু গড়ার কথা বলি এটা সবচেয়ে বেশি বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। মূলত রবীন্দ্রনাথের এসব বিষয় নিয়ে পড়ে রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ি বলতে পারেন। আর কিছু কিছু বিষয় আমরা একান্তই নিজেদের জন্য করে থাকি। মিডিয়া কাভারের জন্য নয়। কারণ আমি জানি মিডিয়া কোনো দিন শিল্পী তৈরি করতে পারে না। 

সর্বশেষ খবর