মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

গুলতেকিন বললেন, ‘ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে না’

দর্পণ কবীর, নিউইয়র্ক থেকে

গুলতেকিন বললেন, ‘ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে না’

গুলতেকিন আহমেদ ও হুমায়ূন আহমেদ

গুলতেকিন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় উপন্যাসিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী। তাকে বলতে হয় অন্যরকম এক ব্যক্তিত্বের ধ্রুবতারা। গত বছর একুশের বইমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ— ‘আজো কেউ হাঁটে অবিরাম’ প্রকাশিত হয়। ২২ মে জ্যাকসন হাইটসে জামাল আবদীন খোকার বাড়িতে (তার আত্মীয়) মুখোমুখি হলাম কবি গুলতেকিন আহমেদের। সাক্ষাৎকার গ্রহণের শুরুতেই জানালেন, কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে না। ইঙ্গিত করলেন হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে যেন কথা না বলি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী বলেই তো আপনার জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তাকে উপভোগ করেন না? তিনি বলেন, এমন জনপ্রিয়তা আমি উপভোগ করি না। সব সময় উপেক্ষা করেছি। নিজেকে আড়াল করে রাখতেই সচেষ্ট ছিলাম। যখন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ছিলাম, তখনো আমি তার স্ত্রী বলে পরিচয় দিইনি। তার জনপ্রিয়তার সুযোগ কখনো নিইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বা পরবর্তীতে নিজের কর্মস্থলে (স্কলাসটিকা স্কুল) যতদিন পেরেছি নিজের স্বামীর পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, আসলে সব সময় নিজের দাদা প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর নাতনি বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করতাম। এখনো করি। একজন জনপ্রিয় লেখকের স্ত্রী ছিলাম— এই পরিচয়টা আমাকে কখনো উৎসাহিত করেনি। প্রশ্ন ছিল— হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আগে (অসুস্থ থাকার সময়ে) আপনি তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন? তিনি জানান, চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে যেন বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করাটা ছিল দুরূহ কাজ। তিনি বলেন, মাঝেমাঝে আমাদের কথা হতো। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ আমার সন্তানদের পিতা ছিলেন। এ কারণেই কথা হতো। আরেকটি প্রশ্ন ছিল— হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আপনি কোনো স্মৃতিকথা লিখবেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, হুমায়ূনকে নিয়ে স্মৃতিকথামূলক একটি বই লিখছি। এটি বই আকারে বের হবে। একটি প্রশ্ন ছিল, আপনার অসীম ধৈর্য শক্তি ও নীরব থাকার একটা অদ্ভুত শক্তিও আছে— এটা পেয়েছেন কার কাছ থেকে? জবাবে গুলতেকিন আহমেদ (স্মিত হেসে) বলেন,  দাদু (প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ) ছিলেন আমার আদর্শ। আমার দাদীর মৃত্যুর পর দেখেছি দাদু চুপচাপ থাকতেন। তিনি দাদীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। হয়তো দাদুর কাছ থেকে পেয়েছি।  তিনি বলেন, ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকে ছড়া লিখতাম। বিয়ের পর লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে সংসারী হয়ে যাই। ২০০৩ সালে ছোটবেলার ছড়ার খাতাটা হঠাৎ খুঁজে পাই। সত্যজিত রায়ের মতো ছড়াকার হতে পারব না ভেবে ছড়া লেখার দিকে না ঝুঁকে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। ২০১৩ সাল থেকে কবিতা লিখতে শুরু করি। আড়াই বছর পর দেখি ৩৫টি কবিতা হয়ে গেছে। সত্যি কথা বলতে আত্মতৃপ্তির জন্য কবিতা লিখি। গত বছর তাম্রলিপি প্রকাশনী আমার কবিতার বইটি প্রকাশ করে। বইটির বিক্রিও ভালো হয়েছে। এটি ছিল জাফর ইকবালের বইয়ের পর দ্বিতীয় বেস্ট সেলার বই। বইয়ের নাম— ‘আজো কেউ হাঁটে অবিরাম’। আসলে বইটির নাম রেখেছিলাম-দিকভ্রান্ত জলপরী। বড় মেয়ে নোভা বলল-মা, তোমাকে সব সময় দেখেছি বিভ্রান্ত না হয়ে, ভেঙে না পড়ে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজে পথ চলেছ। এই নামটি নিয়ে পাঠকদের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে। ওর কথাটা ভালো লাগে। পরে নাম রাখি, আজো কেউ হাঁটে অবিরাম। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। হয়েছেন শিক্ষক।  নুহাশ চলচ্চিত্র বানাতে চায়। তার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং পাশে থাকছেন। তার কথা, তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চান না।

সর্বশেষ খবর